
প্রায় ১৪ বছর হয়ে গেল বাংলায় বাম সরকারের পতন। একদা যে পার্টির অঙ্গুলি হেলনে পশ্চিমবঙ্গে 'বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত' সেই CPIM অনেক দিন ধরেই 'শিবরাত্রির সলতে'। সেই যে পতন হয়েছিল, তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি। বরং কমতে কমতে শূন্যে ভাসছে। তবে রাজনীতিতে কখন, কার, কীভাবে দিন বদল ঘটে, বলা যায় না। এখন প্রশ্ন হল, বাংলার রাজনীতিতে ২০২৬ সালেই এমন কিছু ঘটতে পারে, যাতে বামেরা আবার বিধানসভায় জায়গা পেয়ে যায়? বিরোধী দলের তকমা হারাতে পারে BJP?
বিধানসভা ভোটে বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে লড়বে নাকি একা লড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে bangla.aajtak.in-কে কয়েক দিন আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, 'আগে নিজেকে শক্তিশালী হতে হবে। ২৯৪টি আসলে লড়াই করার মতো জায়গায় যেতে হবে। তাহলেই তো অন্য কেউ পাশে এসে দাঁড়াতে চাইবে। অথবা আমরা অন্য কারও পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারব। তাই সবার প্রথমে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।'
জোটের ইঙ্গিত স্পষ্ট নয়
সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,'আমরা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী শক্তিকে পাশে নিয়ে ভোটে যেতে চাই। তাহলেই বাংলার মানুষের আশা পূরণ হবে।' দু ক্ষেত্রেই 'গোল গোল' উত্তর। অর্থাত্ জোটের ইঙ্গিত স্পষ্ট নয়।
বামেরা যদি ২০২৬ সালের নির্বাচনে একক ভাবেই লড়ে, তাহলে মূলত ৪টি শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে তাঁদের। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, কংগ্রেস ও অন্যান্য দল। ২০১১ সালে যখন বাম সরকারের বিদায় ঘটল, সে বার তারা পেয়েছিল ৬২টি আসন। তারপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ৩২টি আসন পেল। ২০২১ সালে শূন্য।
গত ১০ বছরে বাংলার রাজনীতির গতিপ্রকৃতি
পশ্চিমবঙ্গে গত ১০ বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট খুব বেশ ইন্টারেস্টিং। ২০১৪ সাল থেকে হঠাত্ করেই বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল বিজেপি। অতীতে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রাসঙ্গিক ছিল না। ২০১৪ থেকে কীভাবে উত্থান, সেটা ভাবার অবকাশ রয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি বিজেপি-কে প্রাসঙ্গিক করা হল জেনেবুঝে? নাকি স্রেফ মোদী ম্যাজিকের প্রভাবেই? শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকেও দেখা গেল, রাজনৈতিক ভাবে বারবার বিজেপি-কেই নিশানা করছে। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও বারবার বিজেপি-র নাম শোনা যেতে লাগল। তার আগে যেটা ছিল সিপিআইএম বা বামেরা।
CPIM আশার আলো দেখতে পারে
এবার ২০২৫ সালের আসা যাক। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল থাকবে কিনা, তা তো রেজাল্ট বলবে। কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করতে শুরু করেছে, বিজেপি আর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল থাকবে না এই ভোটে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে CPIM আশার আলো দেখতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (INDIA) জোটের পরীক্ষামূলক উদ্যোগটি বাংলায় কার্যকর হয়নি। কারণ, এই রাজ্যে জোটের তিন সদস্য, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট, প্রত্যেকেই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নামছে।
আসন বণ্টনে নমনীয়তা দেখানোই মূল চাবিকাঠি
বাম নেতৃত্বের ধারণা, তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করতে হলে জোটের অন্তর্গত দলগুলির মধ্যে আসন বণ্টনে নমনীয়তা দেখানোই মূল চাবিকাঠি। এদিকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ইতিমধ্যেই শরিক দলগুলিকে জানিয়েছেন, তারা কোন কোন আসনে লড়তে চায়, সেই তালিকা যেন নমনীয়তার সঙ্গে জমা দেয়। তবে এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে বামফ্রন্টের মধ্যে কীভাবে আসন বণ্টন হবে, তাও এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে। যখন তৃণমূল ও বিজেপি, দুই দলই ভোটে জয়ের দাবি শুরু করে দিয়েছে। অর্থাত্ পুরোদমে ভোট ময়দানে।
সিপিএম-র এক নেতার কথায়, 'অধীর চৌধুরী চান, বাংলায় বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হোক। কিন্তু শুভঙ্কর সরকার তা চান না। কংগ্রেসের হাইকম্যান্ডও নাকি চাইছে না জোট হোক। এরকম হলে বামেরাও একাই লড়বে। আমরা চাইছি সব বিজেপি বিরোধী ও তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী শক্তি এক হোক। বিহারের ভোটে কী হয় দেখা যাক। তারপরে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।' তবে বামেরা বিধানসভায় একা লড়বে, এমনই বার্তা ক্যাডারদের দেওয়া হয়েছে। সেই মতোই কাজ করতে বলা হয়েছে।
কংগ্রেস এখনও আগ্রহ দেখায়নি
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠন যে ভাল নয়, তা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাই। এবং এটি দৃশ্যতই। তাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির একটাই বক্তব্য, 'আগে নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে।' মোদ্দা বিষয়, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দরজা বামেরা খুলেই রেখেছে। কিন্তু কংগ্রেস এখনও আগ্রহ দেখায়নি।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের থেকে বামেদের সংগঠন মন্দের ভাল। কিন্তু ছাব্বিশে বিধানসভায় জায়গা জুটবে কিনা, বা একেবারে বিরোধী দল হবে কিনা, তা খানিকটা নির্ভর করছে শাসকদলের উপরেও। ২০১৪-এর দিকে ফিরে তাকালেই, উত্তর মিলতে পারে।