'বউদি শনি-রবি আসতে পারব না। আমাদের ভোট রয়েছে।' একথা বলেই ছুটি নিয়েছেন বেশিরভাগ। কলকাতায় ভোট নেই, তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের পরোক্ষ প্রভাব ভালোই টের পাচ্ছে শহরবাসী। শনিবার সকাল থেকেই কলকাতা প্রায় ফাঁকা। বাস-অটো হাতে গোনা। অন্যদিকে বাড়িগুলিতে নেই পরিচারক-পরিচারিকা। ভোটের জন্য ছুটি নিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই। রান্না, ঘরমোছা, কাপড় কাচার লোক শনি-রবি আসবে না বলেই জানিয়েছে বেশিরভাগ বাড়িতে। তাই ভোটের ছুটিতে আয়েশ করে কাটানোর বদলে হেঁশেল ঠেলতে হচ্ছে কলকাতার গৃহকর্তা-কর্তৃদের।
বেহালার শর্বরী পোদ্দার বললেন, তিনদিনের ছুটি নিয়েছে তাঁর পরিচারিকা। শনিবার ভোট। তার পরদিন রবিবারও ছুটি। রূপঙ্কর দেবনাথ বললেন, তাঁর মা আর্থ্রারাইটিসে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পরিচারিকা ছুটি নিয়েছেন। যেহেতু তিন ভোট দিতে যাবেন। পরদিন রবিবারও তিনি আসবে না জানিয়েছেন। পরিচারিকার বাড়ি বসিরহাট। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ওইদিন অতদূর থেকে কলকাতায় আসবেন না।
তবে কাউকেই ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তাই যত কষ্টই হোক, ছুটি মঞ্জুর করতে হয়েছে অনেককেই। এটি একটি অসংগঠিত খাত এবং এখানে কোনও উপযুক্ত ছুটির কাঠামো নেই, তাই যখন আমাদের গৃহকর্মীরা ছুটির জন্য অনুরোধ করে তখন আমরা সাধারণত অস্বীকার করি না। একথাও বলছেন অনেকে।
কলকাতায় বেশিরভাগ বাড়িতেই স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই কর্মরত। তাঁদেরও বাড়িতে পরিচারিকা আসেনি। সল্টলেকের অনিন্দিতা পাল বললেন, আমার বাচ্চা ছোট। ওকে সামলাতেই আমি হিমসিম খাই। এই দুদিন তো ঘরের সব কাজই আমাকেই করতে হচ্ছে। স্বামী কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমার ছুটি রয়েছে। তাই সবকিছু আমাকেই দেখতে হচ্ছে।
তবে এরমধ্যে সবথেকে সমস্যায় আয়া সেন্টারগুলি। বয়স্কদের দেখভালের জন্য আয়াও কম রয়েছে কলকাতায়। শ্যামবাজারের একটি আয়া সেন্টার জানিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে ছুটি নিয়েছে অনেকেই। তাই বহু জায়গায় আয়া পাঠাতে পারছেন না তাঁরা।
সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা পার্বতী পাল বললেন, 'ভোট দেওয়া তো মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমাদের সব মেয়েরাই ভোট দিতে গেছে। এইসময় সরকারও সবেতন ছুটি দিচ্ছে। পরিচারিকা-পরিচারকদেরও ছুটি দেওয়া উচিত। দু'দিন একটু কষ্ট হলেও ভোটটা অনেক জরুরী।'