
Gopal Nandy Paschim Mediipore: অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপাল নন্দী নির্বাচনের বাজারে এক জীবন্ত বিস্ময়। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জেতেন গোপালবাবু। সেই শুরু, তারপর থেকে প্রতিবারই ভোটে দাঁড়ান আর প্রতিবারই জেতেন। বর্তমানে বয়স প্রায় ৯০। এবারও তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতে নজির গড়েছেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় যেখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি,অনৈতিকতার অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম গোপাল নন্দী। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রামের কারও কোনও অভিযোগ নেই। তাই তিনি জিতেই চলেছেন। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই জয়ের ধারা বজায় রেখে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছেন গোপাল। জয় এসেছে ২৫১ ভোটে। ৯০ বছরেো তরতাজা গোপাল জানিয়ে দিয়েছেন, দল যেভাবে দায়িত্ব দেবে তিনি কাজ করে যাবেন। তাঁর পঞ্চায়েতে যেতার এটা ৫৮তম বছর।
খদ্দরের বুশ শার্ট আর উঁচু করে পরা ধুতি, এক ডাকে সকলেই চেনে গোপাল নন্দীকে। কংগ্রেস থেকে শুরু করলেও,কখনও নির্দল কখনও তৃণমূল থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আর যেখানেই দাঁড়ান না কেন, আজ পর্যন্ত হারেননি। 'ল অব অ্যাভারেজ'-এর তত্ত্বও খাটেনি তাঁর কাছে। তাঁর রাজনীতির খাতায় হার শব্দটি লিখতে ভুলে গিয়েছেন বোধহয় ভোটদেবতা। ৩৪ বছরের বাম জামানাতে তিনি ছিলেন অবিচল। তাঁর জামানত কেউ বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি। শুধু জয় নয়,একাধিক দায়িত্বও পেয়েছেন, তা সামলেওছেন। রাজ্য রাজনীতিতে যেখানে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, আর সেখানেই গোপাল তৃণমূলের উজ্জ্বল মুখ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেউ কখনও দুর্নীতি তো দূর কোনও সামান্য অভিযোগও আনেননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
শুরু করেছিলেন কংগ্রেস থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জানা গিয়েছে, বাবা হরিপদ নন্দীর হাত ধরে একসময় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনেও সামিল হয়েছিলেন। কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর থেকেই ঘাসফুল শিবিরে আছেন এই প্রবীন নেতা। মাঝে কয়েক বছর তিনি পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্বেও ছিলেন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতেছিলেন। বন ও ভূমি কর্মাধক্ষের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
ইদানিং দল প্রচার করলেও তিনি নিজে প্রচারেও তেমন যান না। জেতার বিষয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী তিনি। তাঁর দাবি, মানুষ পাশে থাকলে প্রচারের কী দরকার। মানুষ না চাইলে হারবেন। কিন্তু তিনি হারেন না। এক সময় বিধানচন্দ্র রায়,অজয় মুখোপাধ্যায়দের সান্নিধ্যও পেয়েছিলেন এই নেতা। নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে, এই অশীতিপর নেতার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বেঁচে থাকলে আবারও দাঁড়াবেন আর জিতবেন বলে আত্ববিশ্বাসী গোপাল নন্দী।