
প্রতি বছরই সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী থাকে বিশ্বের নানা প্রান্ত। এটি একটি মহাজাগতিক বিস্ময়। এর নেপথ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি। তবে হিন্দু ধর্মে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের তাৎপর্য রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, রাহু ও কেতু যখন সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে তখন যথাক্রমে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে। গ্রহণের সূতক কাল থেকে গ্রহণ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত রাশির জাতকদের একাধিক নিয়ম মেনে চলার কথা বলেন জ্যোতিষীরা। নয়তো তারা মনে করেন, নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মানুষের জীবনে।
২০২৬ সালে মোট ৪টি গ্রহণের সাক্ষী থাকবে বিশ্ব। এর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ২টি করে চন্দ্র এবং সূর্যগ্রহণ।
সূর্যগ্রহণ কবে?
পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও অগাস্ট মাসে দু'টি সূর্যগ্রহণ রয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ। ওই দিন দুপুর ৩টে ২৬ মিনিটে এই গ্রহণ শুরু হবে। তবে এই গ্রহণ ভারত থেকে দেখা যাবে না। এ কারণে এর সূতক কালও মানা হবে না। বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে জিম্বাবয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাম্বিয়া, মোজাম্বিক, মরিশাস, আন্টার্কটিকা, তাঞ্জানিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে।
দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণ হবে ১২ অগাস্ট। রাত ৯টা ৪ মিনিট থেকে এই গ্রহণ শুরু হবে। এটি পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হতে চলেছে। তবে এই গ্রহণও ভারত থেকে দেখা যাবে না। স্পেন, রাশিয়া, আর্কটি, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও পর্তুগালের বেশ কিছু অংশে বছরের দ্বিতীয় এই সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।
চন্দ্রগ্রহণ কবে?
নতুন বছরে চন্দ্রগ্রহণও রয়েছে ২টি। প্রথমটি মার্চ এবং পরেটি অগাস্ট মাসে। পঞ্জিকা অনুসারে, ৩ মার্চ নতুন বছরের প্রথম গ্রহণ লাগবে সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিট থেকে। ১ ঘণ্টা ৩১ মিনিটের এই চন্দ্রগ্রহণটিও ভারত থেকে দেখা যাবে। মানা হবে সূতক কালও। ভারত ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশে দেখা যাবে।
এরপর ২৮ অগাস্ট বছরের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ হবে। ভারত থেকে এই গ্রহণ দৃশ্যমান হবে না। ইউরোপ, এশিয়ার পশ্চিমাংশ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আন্টার্কটিকায় এই গ্রহণ দেখা যাবে।
কোন কোন রাশির উপর প্রভাব?
জ্যোতিষবিদদের মতে, এই গ্রহণ যোগের প্রভাবে বিশেষ করে ৩টি রাশির জাতক চরম সঙ্কটের মুখে পড়বে।
মীন রাশি: ২০২৬-এর সময়কাল মীন রাশির জাতকদের জন্য পাহাড় প্রমাণ কষ্ট বয়ে আনবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। নতুন কোনও প্রজেক্টে বা ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এমনকী, কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি আটকে যেতে পারে।
কন্যা রাশি: কন্যা রাশির জাতকদের জন্য এই সময়টি চ্যালেঞ্জের। অর্থনৈতিক অবস্থায় নেচিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিলে লোকসান হতে পারে। চাকরিতে নতুন সুযোগ এলেও তা আশানুরূপ ফল দেবে না। পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতা ভোগাতে পারে কন্যা রাশির জাতকদের।
কর্কট রাশি: এই রাশির জাতকদের জন্য ২০২৬ সালের এই সময়টা হবে অস্থিরতার। বিনিয়োগ এবং ব্যবসায় বড়সড় ঝুঁকি রয়েছে। হঠাৎ করে কোনও বড় খরচ চলে আসতে পারে। সঞ্চয়ে টান পড়বে। পুরনো ঋণের চাপ বৃজ্ঝি পাওয়ায় মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে।
কুম্ভ রাশি: কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ এবং বড় সিদ্ধান্তের সময়। এটি কর্মজীবনে পরিবর্তন বা নতুন দায়িত্বের ইঙ্গিত দিতে পারে। সামাজিক সম্পর্কগুলো দূরে সরে যেতে পারে বা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কোনও তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ফল মারাত্মক হতে পারে। পরিকল্পনাগুলো গোপন রাখতে হবে।
গ্রহণকালে কী করবেন এবং কী করবেন না?
> ধ্যান করুন, জপ করুন এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন করুন।
> গায়ত্রী মন্ত্র, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বা প্রিয় দেবতার নাম জপ করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
> মনকে শান্ত এবং ইতিবাচক রাখুন।
> রাগ, ভয় বা মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন, কারণ গ্রহণের সময় মানসিক অস্থিরতা দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারে।