বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক, ছোটা ভীম, মোটু-পাতলু, চার্লি চ্যাপলিন থেকে সান্তা ক্লজ— একই মানুষের নানা রূপ। এই চরিত্রগুলির মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে দারিদ্র-মাখা হাসি-খুসি মুখের প্রৌঢ়।
প্রৌঢ়ের নাম সেলিম আহমেদ। লোকে অবশ্য তাঁকে সেলিম জোকারওয়ালা নামেই চেনেন। কলকাতার রিপন স্ট্রিটে ৩ নম্বর বেডফোর্ড লেনের একটি বস্তিতে এক চিলতে ঘরে থাকেন সেলিম। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার।
মানুষকে বিনোদন দেওয়া, বিশেষ করে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর পেশায় গত ২৫-৩০ বছর ধরে যুক্ত তিনি। দিনের মধ্যে ১২-১৩ ঘণ্টা নানা কমিক চরিত্রের আড়ালে থেকেই সংসার চালানোর রসদ জোগাড় করেন সেলিম।
১৯৯২ সালে কলকাতার এক নামী হোটেলে কাজ করার সময় হোটেল ম্যানেজার তাঁকে নতুন কিছু করার জন্য বলেন। বাড়িতে এসে তিনি নিজেই কস্টিউম বানিয়ে জোকার সেজে মানুষকে হাসানোর উদ্যোগ নেন। সেই থেকেই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছে সেলিম জোকারওয়ালা।
তাঁর অত্যন্ত পছন্দের দু’টি ছবির একটি চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গোল্ড রাশ’ আর একটি হল রাজ কাপুর অভিনীত ‘মেরা নাম জোকার’। এই ছবিটি অন্তত ৫০০ বার দেখেছেন সেলিম জোকারওয়ালা।
একটা সময় কোনও একটি অনুষ্ঠানে অভিনেতা শাম্মি কাপুর প্রশংসা করেছিলেন তাঁর কাজের। অভিনেতার প্রশংসা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তবে চার্লি চ্যাপলিনকেই গুরু মানেন সেলিম।
১৯৯২ সালে যখন জোকার সেজে নতুন ভাবে রোজগার শুরু করলেন সেলিম, তখন বন্ধুদের বিদ্রুপও শুনতে হয়েছিল তাঁকে। আজও কেউ কেউ টিটকিরি দেয়। কিন্তু তাঁকে দেখে যখন শিশুদের মুখে হাসি ফোটে, তখন সব কষ্ট ভুলে যান তিনি।
সেলিমের দুই ভাগ্নে ফিরোজ আর নুর বিভিন্ন উৎসবে কমিক চরিত্রে নিজেদের সাজিয়ে তোলেন। বড়দিন এলেই সান্তা ক্লজ সেজে বেরিয়ে পড়া পেটের দায়ে। মানুষের মুখে হাসি ফুটলে তবেই তো সংসারে আলো ফুটবে, দু’বেলা দু’মুঠো জুটবে ক্রিসমাসের কলকাতায় সান্তা, সেলিম জোকারওয়ালার।