মাছ ছাড়া বাঙালি বাড়ির খাবার অসম্পূর্ণ বলা যায়। মাছ ভাজা থেকে শুরু করে মাছের ঝোল, ভাপা থেকে পাতুরি সবকিছুই মাছ দিয়ে।
এদিকে ঘোর বর্ষাতেও ইলিশের দেখা নেই। কোথাও মিললেও আকাশছোঁয়া দাম। তাহলে কি খাদ্যরসিক বাঙালি ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে? এর উত্তরে বলা যায়, একেবারেই না। বরং দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর ব্যবস্থা আছে। আর তা করবে পেংবা মাছ।
করোনার কারণে আজ বিশ্ব চেনে চিনের ইউহানকে। আর এখান থেকেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে পেংবা মাছ। আমাদের দেশেও পেংবার দেখা মেলে। তবে তা শুধুমাত্র মণিপুরে।
মণিপুরের বিভিন্ন নদী ও লোকতাল লেক ছাড়া চিনের নদনদী ও হ্রদে, মায়ানমারের চীন্দুইন নদীতে এই পেংবা মাছ পাওয়া যায়। তবে মণিপুরের মানুষদের কাছে এই মাছ ‘পেংবা’ নামে পরিচিত হলেও চিনে নাম ‘নাগা-হপ-আউং’ বা ’নাগা নেট হুয়া’। এই মাছের বিজ্ঞান সম্মত নাম ‘অস্টিওব্রামা বেলাঙ্গিরি’।
এই পেংবা মাছ নাকি খুবই সুস্বাদু। একে তাই মণিপুরী ইলিশও বলা হয়। মণিপুরবাসীর অতি প্রিয় এই মাছ। অতুলনীয় স্বাদের জন্য খুবই চাহিদা রয়েছে।
দেখতে অনেকটা এক রকম হলেও পুঁটির থেকে আকারে ঢের বড় পেংবা। স্বাদে একেবারে ইলিশের মতো। । অতুলনীয় স্বাদের জন্য এই মাছের চাহিদা রয়েছে। মণিপুরে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়। তাই প্রতি বছর মণিপুরে পেংবা দিবস পালিত হয়।
মিষ্টি জলের মাছ পেংবা। চিনের ‘নাগা-হপ-আউং’ বা মণিপুরের ‘পেংবা’কে দিয়েই এবার ইলিশের অভাব ঘোচাতে পারে বাঙালি। বছর দুয়েক এই পেংবা মাছের চাষ রাজ্যে প্রথম শুরু হয়েছিল মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকে। এই চাষ সফল হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। এমনকি এই পেংবা মাছ চাষের আগ্রহ মাছ চাষীদের মধ্যেও বাড়ছে। ফলে এখন চাহিদা বাড়ছে পেংবা মাছের চারার।
পেংবা চাষের ঝামেলাও অনেক কম। এই মাছ রুই, কাতলা ও মৃগেলের সঙ্গে এক পুকুরে চাষও করা যায়। জানা যায়, ১ বছরে প্রায় ৪০০ গ্রামের মতো ওজন হচ্ছে মাছটির।
লুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় থাকা এই মাছের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়েছেন ওড়িশার সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকোয়াকালচার বা সিফার মৎস্যবিজ্ঞানীরা। সেই চারা এনে ছাড়া হয়েছিল হলদিয়ার বিভিন্ন ফিসারিতে।
এখন রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই মাছের চাষ। মাছটির চারা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমদিকে। ভুবনেশ্বরে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকুয়াকালচার (সিফা) থেকে পেংবা মাছের চারা নিয়ে আসা হত। খরচ বেশি ও সময় লাগার জন্য নতুন ধরনের এই মাছটি চাষের ইচ্ছা থাকলেও অনেক চাষি চারা জোগাড় করতে পারতেন না। বর্তমানে হলদিয়াতে সরকারি অনুদানে গড়ে ওঠা হ্যাচারিতে পেংবা মাছের কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হচ্ছে। আবার কয়েকটি জায়গায় মৎস্য দফতরের হ্যাচারিতে পেংবার ডিমপোনা ফোটানো হচ্ছে। এরফলে চাষিরা খুব সহজেই এই মাছের চারা হাতে পাচ্ছেন। চাষের প্রশিক্ষণও মিলছে।
হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, পেংবা মাছ খুব সহজেই বাড়ির পুকুরে চাষ করা সম্ভব। কৃত্রিম খাবার খাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে এই মাছ চাষ করা যেতে পারে। ভোজন রসিক বাঙালি ইলিশ না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচাতে এবার পেংবা চেখে দেখতে পারেন কিন্তু।