দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa ) উত্তর-পূর্বে ভারত মহাসাগরের (Indian Ocean) একটি দ্বীপ (Island) রয়েছে। যা এই পৃথিবীতে কোনও এলিয়েন ওয়ার্ল্ড (Alien World) থেকে কম নয়। এই দ্বীপে ইয়েমেন (Yemen) দেশের শাসন রয়েছে। আসলেই আরব সাগর (Arabian Sea) এবং গার্ডাফুই (Gradafui) চ্যানেলের মধ্যে অবস্থিত। এই দ্বীপের নাম সকোত্রা (Socotra)। গাছপালা গুলি দেখে মনে হয় এটি কোন হলিউড ফিল্মের কাল্পনিক দুনিয়া।
সকোত্রা আর্কিপেলাগোতে চারটি দ্বীপ রয়েছে। (Socotra), অব্দ ওল কুরি (Abd Al Kuri), সমহাহ (Samhah) দরসাহ (Darsah) আব্দ হাল এবং দর্শকদের ক্ষেত্রফল ৩ হাজার ৭৯৬ বর্গকিলোমিটার। এটি প্রায় ১৩ কিলোমিটার লম্বা এবং ৫০ কিলোমিটার চওড়া। এটি সবচেয়ে উচু পাহাড়। যার উচ্চতা ৪ হাজার ৯৪১ পেট এর রাজধানী দিপু।
এর চারটি দ্বীপের মোট সবমিলিয়ে ৬০ হাজার লোক থাকে। প্রত্যেক ১ বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ১১ জন লোক থাকেন। অর্থাৎ ক্ষেত্রফলের হিসেবে লোকের সংখ্যা কম। ২০০৮ সালের সকোত্রাকে ইউনেস্কো (UNESCO) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের (World Heritage Site) এর তকমা দিয়েছে। কারণ এখানকার গাছপালা এলিয়েন দুনিয়ার মতন দেখতে।
সকোত্রা আইল্যান্ডে পৃথিবীর কম জনসংখ্যাওয়ালা দ্বীপের মধ্যে একটি। প্রাচীন সময়ে এটি গন্ডোয়ানা মহাদেবের অংশ ছিল। ধীরে ধীরে আফ্রিকা থেকে আলাদা হয়ে এটি দূরে গিয়ে আটকে যায়। এখানে চারটি দ্বীপের ছাড়া দুটি ছোট পাথরের দ্বীপ রয়েছে। যার মধ্যে মানুষ নয় বরং সামুদ্রিক পাখিরা বাস করে।
এখানে তিন রকমের মাটি রয়েছে। প্রথম, নদীকেন্দ্রিক মাটি, দ্বিতীয় চুনাপাথরের এলাকা এবং তৃতীয় এবড়োখেবরো পাহাড়। পাহাড়ের উচ্চতা ৪৯৫১ ফিট। এখানে বেশিরভাগ তাপমাত্রা গরম থাকে। জলবায়ু মরুভূমির মতো। বছরের গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। বৃষ্টি খুব কম হয়। কিন্তু যখন হয় তখন প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়। এখানে উত্তর-পূর্ব থেকে মন্সুন আসে। বর্ষার সময় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। সর্বাধিক ৩১.৫০ ইঞ্চি বৃষ্টি এখানে প্রতি বছর হয়।
আরব সাগরের কাছে স্থিত হওয়ার কারণে গরম জলবায়ুর সত্ত্বেও এই দ্বীপে জৈব বিবিধতার ঘর বলে বলা হয়। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বায়োলজিস্ট এখানে যাত্রা করেছিল। যাতে এখানকার গাছপালা স্টাডি করা যায়। এখানে গাছপালা প্রমূখ আকর্ষক ও অবাক করে দেওয়ার মত।
সকোত্রা আইল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি গাছপালার প্রজাতি রয়েছে। যেখানে অন্য কোনও জায়গায় পাওয়া যায় না। এমন বিচিত্র প্রকৃতি নিউজিল্যান্ড, হাওয়াই এবং নিউ ক্যালিডোনিয়ার আশপাশে দেখা যায়। কিন্তু খুব কম। বেশি গরম এবং শুকনো আবহাওয়ার কারণে গাছপালাগুলো আলাদা রূপ ধারণ করে নিয়েছে। মনে হয় যেন, এলিয়েন দুনিয়া থেকে নিয়ে এসে গাছগুলি পুঁতে দেওয়া হয়েছে। রয়েল বোটানিক গার্ডেন এডিনবার্গ সার্ভে করেছিল। তখন জানা যায় যে এই দ্বীপে ৮২৫ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬৭ প্রজাতি শুধু এখানেই পাওয়া যায়। আর পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না।
সকোত্রা তিনটি এমন গাছ রয়েছে, গম্ভীরভাবে বিলুপ্ত হওয়ার তালিকায়। যেখানে ২৭ টি প্রজাতির গাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এই দ্বীপে সবচেয়ে অবাক করে দেওয়ার মতো গাছ ড্রাগণ ট্রি প্লান্ট। ছাতার মত এই গাছ গোটা পৃথিবীকে হয়রান করে দিয়েছে। এর মধ্যে লাল রঙের তরল পদার্থ বের হয়, যা আগে চুলের কলপ করার জন্য ব্যবহার করা হতো, এখন এর উপযোগ পেন্টিং বার্নিশের জন্য হয়।
সকোত্রা দ্বীপের গাছগুলি অবাক করে দেওয়ার মত। তার নাম জায়ান্ট সেগমেন্ট ট্রি, কিউ কাম্বার ট্রি, দুর্লভ আনারস, এলোভেরিয়া এগুলি শুধু এখানেই পাওয়া যায়। পাখির মধ্যে যেমন সকোত্রা স্টারলিং, সত্রা সানবার্ড, সকোত্রা বানটিং, সিস্টিকোলা স্প্যারোর মতো প্রজাতির পাখিএখানে পাওয়া যায়। আর কোথাও মেলে না।
সকোত্রা দ্বীপের রেপটাইলস অর্থাৎ টিকটিকি এবং সাপের ৩৩টি প্রজাতি আছে। এই সমস্ত প্রজাতিগুলি স্থানীয়ভাবে এখানেই পাওয়া যায়। এখানে ট্যারেন্টুলা মাকড়সা পাওয়া যায়। পরিষ্কার জলে কাঁকড়ার তিনটি প্রজাতি দেখা গিয়েছে। এই দ্বীপে মানুষ ২০০০ বছর থেকে থাকছে। তার আগে এই দ্বীপ জনশূন্য ছিল।