Advertisement

'মানুষের জন্য কাজ' করতে যে কোনও জার্সির প্রয়োজন নেই, সেটা দেখিয়েছেন সোনু সুদ

এক বছর আগেকার ওই ভয়াবহ সময়ের কথা একবার চিন্তা করে দেখুন। রাজ্য দেশের নিরিখে কত মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। কত লোক 'কাজের মানুষের' সাহায্যের আশায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন। এঁদের কিন্তু সে সময় সত্যিই মানুষের কাজ করতে দেখা যায়নি।

সোনু সুদ
রজত কর্মকার
  • কলকাতা,
  • 11 Mar 2021,
  • अपडेटेड 4:00 PM IST
  • বিধানসভা ভোটের মুখে এ দল, সে দলের পোশাক পাল্টে অনেকেই বলছেন, 'মানুষের জন্য কাজ করতে চাই'
  • সকলের মুখে সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্টের চিন্তায় ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছে
  • একজন মানুষ চাইলে কী করতে পারেন, তা সোনুর মতো এ দেশে খুব বেশি মানুষ দেখাতে পারেননি

২০২০ সাল সারা বিশ্বের মানচিত্রে একটা গভীর ক্ষতের মতো। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়েছে। কাজ হারিয়ে অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন কাটিয়েছেন বিশ্বের অগণিত মানুষ। বিশ্বের মানচিত্র ছেড়ে এ দেশের নিরিখে দেখলে সেই করুণ চিত্রের ভয়াবহতা অনেককেই শঙ্কিত করেছে। ট্রেনে কাটা ক্লান্ত অভুক্ত লাশের পাশে রক্তমাখা রুটি জায়গা করেছে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায়। কখনও তিন বছরের শিশু মৃত মাকে চিরঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে। সেই ভিডিও হয়েছে ভাইরাল। শুধুমাত্র খাবার এবং জলের অভাবে তীব্র কষ্টে প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই মহিলা।

এ রাজ্যে করোনার মধ্যেই হানা দিয়েছিল গত ৫০ বছরের অন্যতম ভয়াবহ সাইক্লোন আমপান। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের আদিম লড়াইয়ে প্রাণ করেছেন। তার মধ্যে চাকরি ক্ষেত্রে একের পর এক সংস্থার কর্মী ছাঁটাই। সব মিলিয়ে এত খারাপ সময় জীবনে কখনও আসেনি, এ কথা প্রায় সকলেই বলবেন।

১ বছর পেরিয়ে এসে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের মুখে এ দল, সে দলের পোশাক পাল্টে অনেকেই বলছেন, 'মানুষের জন্য কাজ করতে চাই'। তার জন্যই রাজনৈতিক ছত্রছায়া প্রয়োজন। দল পাল্টানো বা সরাসরি কোনও দলে যোগ দিয়ে সকলের মুখে সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্টের চিন্তায় ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছে। অনেকে বলেছেন, পুরনো দলে থেকে কাজ করতে পারেননি, তাই নতুন করে মানুষের জন্য কাজ করতে জার্সি পরিবর্তন করেছেন।

এই কথার সঙ্গে এক বছর আগেকার ওই ভয়াবহ সময়ের কথা একবার চিন্তা করে দেখুন। রাজ্য দেশের নিরিখে কত মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। কত লোক 'কাজের মানুষের' সাহায্যের আশায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন। এঁদের কিন্তু সে সময় সত্যিই মানুষের কাজ করতে দেখা যায়নি।

Advertisement

অনেকে মহামারীর কথা বলবেন। সে সময় মানুষের পাশে থাকতে গেলে হয়তো সংক্রামিত হতে পারতেন। তাই সাবধানের মার নেই। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটাই নাম বলা যেতে পারে। বলিউড অভিনেতা সোনু সুদ। একজন মানুষ চাইলে কী করতে পারেন, তা সোনুর মতো এ দেশে খুব বেশি মানুষ দেখাতে পারেননি। তিনি বলিউডের সবচেয়ে ধনী অভিনেতা নন। কোনও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসেননি, যে ভবিষ্যতে রাজনীতির মঞ্চে রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান করবেন। তিনি ভোট প্রার্থী ছিলেন না। যে সব মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। অধিকাংশের নিবাস বিহার, উত্তরপ্রদেশ।

লকডাউন পর্বে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে কত বাস ভাড়া করে, কত প্লেনের টিকিট কেটে মুমূর্ষু রোগীকে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন নিরাপদে। এখন সকলে সোনুর মতো এত সাহসী নন, সে কথা মেনে নিচ্ছি।

আনলক পর্বের দিকেও চোখ রাখুন। কারও কলেজে ভরতির টাকা নেই, কারও অনলাইন ক্লাস করার জন্য মোবাইল নেই, কারও চাকরি হারিয়ে রোজগার বন্ধ, কারও চাষের জন্য ট্রাক্টর প্রয়োজন, কারও হাসপাতালে ভরতি হতে সাহায্য চাই -  শুধুমাত্র সোশাল মাধ্যমে বা সংবাদমাধ্যমে এমন ঘটনা জেনে নির্দ্বিধায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সোনু। সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়নি তার জন্য। কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন, কারও হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছেন, কোনও গ্রামের জন্য একটা ট্রাক্টর কিনে দিয়েছেন, যাতে সেখানকার সকলে চাষের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। কোনও কোভিড বিধি ভাঙতে হয়নি। রাস্তায় পর্যন্ত বার হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। সম্প্রতি মা-বাবা হারানো কয়েকটি মেয়েকে দত্তকও নেন সোনু। তাঁদের পড়াশোনা থেকে বেঁচে থাকার যাবতীয় খরচ বহন করবেন অভিনেতা।

একেই তো মানুষের কাজ বলে, নাকি? যাঁরা বলছেন মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, করতে পারছি না, বা রাজনীতি ছাড়া মানুষের সাহায্য করা সম্ভব নয় তাঁদের কাছে মানুষের কাজের সংজ্ঞা ঠিক কী তা জানা নেই। কেউ প্রশংসা করার মতো কাজ করলে তাঁর প্রশংসা করা উচিত। সোনু সেটাই নিঃস্বার্থ ভাবে করেছেন। জাস্ট মানুষের কাজ করেছেন। আগামী দিনে যাঁরা মানুষের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের মঞ্চে এলেন, তাঁরা এক সঙ্গে আড্ডায় চা বা চপ-মুড়ি খাওয়া ছাড়া আর কী কী করলেন, তার দিকে হয়তো মানুষ নজর রাখবেন।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement