(Bajaj) বাজাজের সেই স্কুটার মনে আছে? সাধারণ মানুষের হাতে স্কুটারের চাবি তুলে দিয়েছিলেন সেই সময়ের মোটর উদ্যোগপতি রাহুল বাজাজ (Rahul Bajaj) মানুষকে মোটর চালিত স্কুটার চালানোর সুযোগ করে দেন। ৫০ বছর আগে এই স্বপ্নের নাম ছিল বাজাজ চেতক (Bajaj Chetak) ১৯৭২ সালে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের স্কুটার ভারতীয় বাজারে তারা নিয়ে আসেন। তখন ভারতে টু-হুইলারের খুব বেশি বিকল্প ছিল না। বাজাজের নিজের স্কুটার বাজাজ সুপারও ছিল। কিন্তু বাজাজ চেতক এর আলাদা আকর্ষণ তাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।
১০ বছর ছিল ওয়েটিং পিরিয়ড
বাজাজ চেতক আলাদা করে বানানো হতো। তার বড় চাকার কারণে এটি ভারতীয় রাস্তায় অত্যন্ত উপযোগী ছিল। যা মানুষ অত্যন্ত পছন্দ করেছিলেন। বাজাজ সুপার অত্যন্ত ভালো হলেও তার চাকা ছিল ছোট। তাই বড় চাকার চেতক অবিলম্বে মানুষের মনের মণিকোঠায় এবং কার্যকারিতা পৌঁছে যায় ঘরে। এছাড়া পিছনে লাগানো স্টেপনি এবং নন স্প্লিট সিট এটি পরিবারের স্কুটার বানিয়ে ফেলে। এক স্কুটারে চার-পাঁচজন করে ঘুরে বেড়ানো ছিল আম ব্যাপার। সে সময়ে ট্রাফিক রুলে অতটা কড়াকড়ি ছিল না। ফলে দিব্যি ছোটখাটো গাড়ির মতো গোটা পরিবার ঘুরে বেড়িয়েছেন আম মধ্যবিত্ত।
ইন্দিরা গান্ধীর কার্যকালে অটো সেক্টরে অগ্রগতি
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আলাদা আলাদা কার্যকালে দেশের অটো সেক্টরে অত্যন্ত অগ্রগতি হয়। ১৯৭২ এ বাজাজ চেতক হোক অথবা ১৯৮৩ সালে মারুতি সুজুকি গাড়ি। মধ্যবিত্ত মানুষকে মোটর চালিত যান চড়ার স্বপ্ন পূরণ করে।
দশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো
কিন্তু এই দেশে লাইসেন্স ইন্সপেক্টর সে সময়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। কোম্পানিরা উৎপাদন এর কোটা নির্দিষ্ট ছিল। প্রথম বছরে মাত্র ২০ হাজার স্কুটার উৎপাদন করার অনুমতি পেয়েছিল বাজাজ। কিন্তু হামারা বাজাজ বিজ্ঞাপনের পপুলারিটি এবং বাজাজের শক্তপোক্ত কাঠামো এবং কার্যকারিতার পাশাপাশি ভালো গতি চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। ডেলিভারি সেটিং করলে কখনো কখনো ১০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বিয়ের তারিখ ঠিক হতো চেতকের ডেলিভারি অনুসারে
তখন দেশে পণ প্রথা ছিল এবং বাজাজ চেতকের বিষয়ে একটি কথা সবাই জানতো যে বিয়েতে পাত্র বাজাজ চেতক চাইবেনই চাইবেন। আর সে কারণেই ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে হবে না এমনটা ঘটেছে অনেকবারই। ডেলিভারি ডেটের হিসেবেই বিয়ের তারিখ ঠিক হতো।
বাজাজ চেতক এর নাম করণ
ভরসার প্রতীক বাজাজ চেতকের নাম রাখার কারণ অত্যন্ত ইউনিক। বাজাজ অটো যখন স্কুটার লঞ্চ করে তখন মহারানা প্রতাপ এর ঘোড়ার নাম সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে হয়েছে। এ কারণে হলদিঘাটের যুদ্ধে জেতার বাহাদুরি এবং কাহিনী মানুষের ঘরে ঘরে পরিচিত ছিল। দেশের গতি এবং ভরসার নাম তাই চেতক রাখা হয়েছে। আর এটাই মাথায় রেখে এই স্কুটারের নাম বাজাজ চেতক রাখা হয়। পরে কোম্পানি ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন এর সঙ্গে বাজারে নিয়ে আসে।
পরে LML টেক্কা দেয় বাজাজকে
LML বাজাজ চেতককে টক্কর দিয়েছিল সত্তর-আশির দশকে। বাজাজ চেতক একছত্র রাজ করে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এলএমএল স্কুটার কোম্পানি নিজেদের নতুন স্কুটার বাজারে এনে তাকে টক্কর দিতে শুরু করে। এর সবচেয়ে বড় কারণ LML এর ব্যালেন্স এবং কোম্পানি পিছনের দিকে ইঞ্জিন নিয়ে যায় এবং দ্বিতীয়ত নিচে দিয়ে ফিট করে দেয় স্টেপনি। ফলে বাইরে থেকে দেখা যেত না। এরপর বাজারে হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল এসে যাওয়ার পরে মানুষের হাতে বিকল্প তৈরি হয়ে যায় এবং বাজাজ স্কুটার আস্তে আস্তে বাজার থেকে সরে যেতে শুরু করেষ আবার নতুন করে এই কোম্পানি ইলেকট্রিক স্কুটার বাজারে নিয়ে আসছে।