Advertisement

'বাদাম বাদাম দাদা...' দুই বাংলা কাঁপাচ্ছেন ভাইরাল 'বাদামকাকু', রইল তাঁর গল্প

'বাদামকাকু'-র নাম ভুবন বাদ্যকর। পেশায় বাদাম বিক্রেতা। বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে, বউমা ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস। ভুবন বাদ্যকরের জীবনে অভাব রয়েছে। তবে গানের মতোই তাঁর জীবনও বর্ণময়। বেঁচে থাকার তাগিদে কী না করেননি। একসময় তিনি দিন- মজুরের কাজ করতেন। কখনও রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে কখনও আবার মাঠে। কিন্তু, তা থেকে যা রোজগার হত, তা দিয়ে সংসার চলত না।

ভুবন বাদ্যকর
সৌমেন কর্মকার / ভাস্কর মুখোপাধ্যায়
  • বীরভূম,
  • 06 Dec 2021,
  • अपडेटेड 2:37 PM IST
  • সুরেলা কন্ঠের জন্য সোশাল মিডিয়া স্টার হয়েছিলেন রানাঘাটের রানু মণ্ডল
  • সেই রানু মণ্ডলের মতোই এখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে কাঁপাচ্ছে এক বাদামওয়ালার গান
  • নেটিজেনদের কাছে সেই 'বাদামকাকু' এখন রীতিমতো স্টার

সুরেলা কন্ঠের জন্য সোশাল মিডিয়া স্টার হয়েছিলেন রানাঘাটের রানু মণ্ডল। সেই রানু মণ্ডলের মতোই এখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে কাঁপাচ্ছে এক বাদামওয়ালার গান। নেটিজেনদের কাছে সেই 'বাদামকাকু' এখন রীতিমতো সেলিব্রেটি। তাঁর গান ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পাশাপাশি মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। রাস্তাঘাটে শোনা যাচ্ছে, ''বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম।' কে এই বাদামকাকু? কীভাবে এই গান বাঁধলেন তিনি? তাঁর জীবন -যাপন, রোজগার কী? আসুন দেখি। 

'বাদামকাকু'-র নাম ভুবন বাদ্যকর। পেশায় বাদাম বিক্রেতা। বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে, বউমা ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস। 

ভুবন বাদ্যকরের বাড়ি

ভুবন বাদ্যকরের হাঁড়ির হাল 

প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ভুবন বাদ্যকরের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। ৬ জন সদস্য পরিবারে। রয়েছে ছোটো মাটির বাড়ি। ঘরে আসবাবপাত্র বলতে সেই অর্থে কিছুই নেই। বাড়িতে একটা গ্যাস সিলিন্ডার আছে ঠিকই তবে তাতে রান্না হয় না বললেই চলে। এখনও ভরসা সেই কাঠ-কয়লার উনুন। পেট চালাতে রোজ সকালে বাদাম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বীরভূমের ওই গ্রাম ছেড়ে পোঁছে যান বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায়। বর্ধমানেও যান। যদি দু'পয়সা রোজগার হয় এই আশায়।    

ভুবন বাদ্যকরের স্ত্রী

গানের মতোই বর্ণময় 'ভুবন'

ভুবন বাদ্যকরের জীবনে অভাব রয়েছে। তবে গানের মতোই তাঁর জীবনও বর্ণময়। বেঁচে থাকার তাগিদে কী না করেননি। একসময় তিনি দিন- মজুরের কাজ করতেন। কখনও রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে কখনও আবার মাঠে। কিন্তু, তা থেকে যা রোজগার হত, তা দিয়ে সংসার চলত না। তারপর পেশা বদল করেন। সব্জি বিক্রি করতে শুরু করেন। তাতেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। টানাটানির সংসারে দিশেহারা হয়ে পড়েন একসময়। সংসার বাঁচাতে হাতে তুলে নেন বাদামের ঝুড়ি। কাঁচা বাদাম। সেই থেকে করছেন এই ব্যবসা।    

Advertisement

কীভাবে প্রচারের আলোয় এলেন 'বাদামকাকু'

ওই যে বললাম তাঁর জীবনও বর্ণময়। কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে। ভুবন বাদ্যকরের চরিত্রও আসলে সেরকমই। সেই ছোটো বেলায় ভেবেছিলেন গায়ক হবেন। নাম লিখিয়েছিলেন বাউল দলে। সেই দলের হয়ে গান বেঁধেছেন, গেয়েছেন। তবে সময় তো বহমান। ভুবনবাবুর সময়ও বদলেছে। সংসার করার পর আর নিয়মিত বাউলসঙ্গ দিতে পারেননি। তবে গুনগুন করেছেন নিজের মনেই। দিন-মজুরের কাজ করতে করতে, পাল্লা বাটখারায় সব্জি মাপতে মাপতে গান গেয়েছেন, বেঁধেছেন। বছর দশেক আগে বাদামের ফেরি করতে শুরু করেন। তখনও গান করতেন। কেউ শুনেছেন, কেউ হয়তো ফিরেও তাকাননি। কিন্তু, উৎসাহে খামতি পড়েনি তাঁর। 

বাদাম ফেরি করছেন ভুবনবাবু

এই তো কয়েকদিন আগের কথা। বাদাম বিক্রি করতে করতে এই গানটি গাইছিলেন ভুবনবাবু। যিনি বাদাম কিনছিলেন তিনি গানটা শুনে বেশ খুশি হন। তিনিই বলেন গানটা আর একবার গাইতে। তাতে ভুবনবাবু বেশ বিরক্তই হন। তাঁর কথায়, 'আমাকে সেই লোকটি গানটি করতে বলেন। আমি সারাদিন এই গান গেয়েই তো বাদাম বিক্রি করি। তাই নতুন করে গানটি শোনাতে হবে বলে বেশ বিরক্তই হই। কিন্তু, উনি বাদাম কিনছেন তাই গানটি ফের গেয়ে দিই। তিনি সেই গানটি রেকর্ডিং করে নেন। তারপর থেকে মোবাইলে ঘুরতে শুরু করে। এখন তো দেখছি আমি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছি ওই গানের জন্যই।' 

'কাঁচা বাদাম' গান তৈরি 

এই গানের জন্ম কয়েকমাস আগে। দুবরাজপুরের কোনও এক কাবাড়িওয়ালার গিয়েছিলেন ভুবন বাদ্যকর। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, মেয়েদের চুল, পুরোনো যন্ত্রাংশ, সিটি গোল্ডের পুরোনো গয়না ইত্যাদি বিক্রি করলে কিছুটা রোজগার করা যায়। ঠিক করেন এবার থেকে এই সব জিনিসও তিনি কিনবেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। বিনিময়ে তাঁদের দেবেন বাদাম। ব্যাস। নেমে পড়েন ময়দানে। আর তার আগে এই বাদাম বিক্রির কৌশল হিসেবে বেঁধে ফেলেন এই গান। বাকিটা তো ইতিহাস। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন এমন কম মানুষই আছেন যাঁরা এই গান শোনেননি। অনেকে আবার এই গানের রিল বানাচ্ছেন। গানের সঙ্গে মিউজিক জুড়ে আরও আকর্ষণীয় করেছেন গানটিকে।   

ভুবন বাদ্যকরের বাড়ি

জনপ্রিয় হয়ে কেমন লাগছে? 

ভাইরাল হয়ে ভুবনবাবু বেশ উচ্ছ্বাসিত। বললেন,'মোবাইলে আমার গান দেখছে সবাই। দেখা হলেই সবাই এসে প্রশংসা করে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে। গানটি আমিই লিখেছি। আমারই তৈরি। আমারই সুর, আমারই গলা। বাদাম বিক্রি করতেই এই গান তৈরি করেছি। এই গানের জন্য বহু মানুষই বাদাম কিনতে আসছেন। কেউ ৫ টাকার বাদাম কিনছেন, কেউ ১০ টাকার। বিক্রিবাটা ভালোই চলছে।' 

একসময় বাউল গান করতেন ভুবন বাদ্যকর

হাঁড়ির হাল ফিরেছে? 

না, হাঁড়ির হাল ফেরেনি ভুবন বাদ্যকরের। লোকে চিনেছে, তাঁর গানে মেতেছেন অনেকে। ইনস্টাগ্রামে রিল হচ্ছে, পার্টি-অনুষ্ঠানে বাজছে। কিন্তু, গায়কের সংসারের হাল সেই একই। ভুবনবাবু বলে চললেন, 'লোক আসছে। ফোনের পর ফোন। সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। গান করাচ্ছে। আমার গলায় ব্যথা করছে। তবুও গান করে যাচ্ছি। এই গানের জন্যই তো আমাকে সবাই চিনল। অথচ আমি যখন গান করতাম, বাঁধতাম তখন তো কেউ গায়ক ভুবনের নাম করেনি, শোনেওনি। আজ সেই অপ্রাপ্তি অনেকটা দূর হয়েছে। এটাই ভালো লাগার জায়গা। টাকা কী সবার থাকে? আমার নেই। কী জানি হবে কিনা। হলে এই গানের জন্যই হবে। তা দু পয়সা যদি পাই ভালো লাগবে।' 

Advertisement
এখন গানের জন্য পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন ভুবনবাবু, লোকে তাঁকে বলেন 'বাদামকাকু'

তিনি যে পরিচিত হয়ে উঠবেন তা কোনওদিন ভাবেননি ভুবনবাবু। অথচ আজ তাঁর গ্রামে যান, বীরভূম-বর্ধমান-মুর্শিদাবাদ-বাংলাদেশ যান কারও না কারও মুখে শুনতে পাবেনই 'বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বাবু ভাজা বাদাম...।' আর হ্যাঁ, যখন আপনি এই গান শুনছেন, তখন হয়তো ভুবন বাদ্যকর কোনও পাড়াগ্রামে বাদাম বেচছেন। সংসার চালাতে হবে তো!  

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement