লাগাতার বর্ষায় শহরের বহু রাস্তা এখন কার্যত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে কলকাতার চালকদের জন্য। এর ধাক্কা গিয়ে পড়ছে গাড়ির যন্ত্রাংশে, টায়ার ফেটে যাচ্ছে, ব্রেকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এক্সস্ট পাইপ দিয়ে জল ঢুকে পড়ছে, বৈদ্যুতিক সার্কিটে ত্রুটি তৈরি হচ্ছে। এর ফলে শহরের গ্যারাজগুলিতে এখন উপচে পড়া ভিড়, সার্ভিসের চাপে নাজেহাল মেকানিকরা।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, এবারের বর্ষায় গাড়ি মেরামত ও সার্ভিসিংয়ের চাহিদা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। জুলাই-অগাস্ট বরাবরই ওয়ার্কশপে ব্যস্ত সময়, কিন্তু এবছর খারাপ রাস্তার কারণে গাড়ি ক্ষতির হার এতটাই বেড়েছে যে, অনেক গ্যারাজেই কাজ শেষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নতুন টায়ার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে, এবং ওয়ারেন্টি দাবি করার সুযোগও থাকছে না।
শুধু পেট্রোল বা ডিজেল গাড়ি নয়, সমস্যায় পড়েছে ইলেকট্রিক যানবাহনও। মেকানিকরা বলছেন, লাগাতার জলে ভিজে বৈদ্যুতিক তারে সালফারের স্তর জমে বিদ্যুৎ পরিবহন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা চালু হতে চাইছে না।
মধ্য কলকাতার কিছু গ্যারাজে ব্রেকের সমস্যা নিয়ে আসা গাড়ির সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। সাধারণত ২০,০০০ কিলোমিটার চলার পর ব্রেক প্যাড ও স্যু বদলানোর প্রয়োজন হয়, কিন্তু এবারে অর্ধেক দূরত্ব অতিক্রম করলেই ব্রেকে সমস্যা ধরা পড়ছে। অন্যদিকে, এক্সস্ট পাইপ দিয়ে জল ঢুকে ‘হাইড্রোলক’ তৈরি হচ্ছে, যা ইঞ্জিনের জন্য বিপজ্জনক।
রবিবার থেকে শহরের কিছু এলাকায় প্যাচওয়ার্ক মেরামত শুরু হলেও পার্ক সার্কাস সংযোগকারী, ভিআইপি রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে এখনো কাজ শুরু হয়নি। এই সব রাস্তায় গর্ত এড়িয়ে গাড়ি চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে, ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বহু গাড়ির মালিক নিজেদের গাড়ি সারাতে দিয়ে আপাতত অ্যাপভিত্তিক শাটল বা গণপরিবহন বেছে নিয়েছেন। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা অমিত দাস বলেন, “গত সপ্তাহে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও সল্টলেকের গর্তের ধাক্কায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। সার্ভিস সেন্টারে দিয়েছি, বর্ষা না থামা পর্যন্ত আর বের করব না।”
শহরের মেকানিকদের কথায়, এবারের বর্ষা গাড়ি সারাইয়ের জন্য ‘জ্যাকপট’ হয়ে এসেছে, কিন্তু চালকদের জন্য তা এক দুঃস্বপ্নের। আগামী দিনেও যদি রাস্তার অবস্থা না বদলায়, তবে এই চিত্র আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।