Mahishasura Mardhini, Sanjukta Banerjee: বাঙালির মহালয়ার স্মৃতিতে দেবী দুর্গা হিসেবে আজও সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান অক্ষত রয়েছে। ১৯৯৪ সালে কলকাতা দূরদর্শনের কালজয়ী সৃষ্টি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে দেবী দুর্গা রূপে প্রথম যাঁকে মুগ্ধ চোখে দেখেছিল বাঙালি, আজও মহালয়ার দিনে তিনিই ট্রেন্ডিং।
দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে কানাডায় রয়েছেন সংযুক্তা। প্রতি মহালয়ার দিনে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের দূর্গা বন্দনা দেখেন তিনি। এখনকার মহালয়ার ওই বিশেষ অনুষ্ঠানে আধুনিক, উৎকৃষ্ঠ প্রযুক্তিগত সংযোজনের প্রশংসাও করেন তিনি। সেই সঙ্গেই তাঁর সময়ে এই সব সুযোগ-সুবিধা না থাকার আক্ষেপ রয়েছে।
পুজো এলেই ১৯৯৪ সালের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে তাঁর সুযোগ পাওয়া, নাচ এবং অন্যান্য অভিনয়ের মহড়ার নানা ঘটনা, শুটিংয়ের মূহুর্তগুলি মনে পড়ে যায় সংযুক্তার। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে তাঁর দুর্গা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ২৯ বছর আগের সেই স্মৃতি তিনি ভাগ করে নিলেন bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে...
১৯৯৪-এ শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী থাকাকালী দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতার সেই কালজয়ী ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র দুর্গা নির্বাচিত হন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মহিষাসুরমর্দিনীতে আমি দুর্গা, এটাই আমার কাছে খুব অপ্রত্যাশিত ছিল, বড় চমক ছিল। সময়টা ছিল জুলাই-অগাস্ট। গুরু পি গোবিন্দন কুট্টির কাছে কথাকলি শিখতাম। তিনি আমাকে একদিন কলামণ্ডলমে ডেকে পাঠান সকাল বেলা, দূরদর্শনের কোনও এক অনুষ্ঠানের জন্য নৃত্যশিল্পীদের অডিশন হবে। গিয়ে দেখি, দূরদর্শনের বেশ কয়েকজন প্রযোজক-পরিচালক ও তাঁদের সহকারীরা সেখানে রয়েছেন। সেখানে মহালয়া সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠানের আলোচনাও শুনি। ওখানে সবার কাস্টিং করা হচ্ছিল। সব শেষে ওখানে আমার গুরু মা থাঙ্কমণি কুট্টি আসেন। ১৯৯৪ সালে দূরদর্শনের ওই অনুষ্ঠানের যিনি মূল প্রযোজক-পরিচালক ছিলেন, শমির্ষ্ঠা দাশগুপ্তর কাছে গুরু মা জানতে চাইলেন যে, কাকে দুর্গা বাছা হল? এর উত্তরে শমির্ষ্ঠা দাশগুপ্ত আমাকে দেখিয়ে বলেন ‘সংযুক্তা দুর্গা করবে।’ এটাই আমার কাছে সারপ্রাইজ ছিল। কারণ, ওখানে কিসের অনুষ্ঠান হচ্ছে, তা জেনে আমি সেখানে যাইনি।”
সংযুক্তা জানান, এর পর টানা প্রায় মাস দু’য়েকের কঠিন পরিশ্রম ও রিহার্সালের পর শুটিং শুরু হয়েছিল। পরিচালক তপন সিনহার অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর সনৎ মোহান্তের নির্দেশনায়, ডঃ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির চিত্রনাট্যের উপর ভর করে টিভি পর্দায় ফুটে ওঠে গোটা বিষয়টা। এর মিউজিক দীপক চৌধুরীর, স্তত্রপাঠ এবং সমগ্র অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। এর সেট ডিজাইন করেছিলেন অশোক বসু, যিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’-এর মতো বেশ কিছু ছবির সেট ডিজাইন করেছিলেন।
সংযুক্তা বলেন, “মহিষাসুরমর্দিনীতে একজন স্টেজ পারফরমার হিসাবে ক্যামেরার সামনে কীভাবে অভিনয় করতে হয়, তা নিখুঁত ভাবে শিখেছিলাম। ফলে পরবর্তিতে যে সব মহালয়ার অনুষ্ঠানে আমি কাজ করি, তাতে এই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা আমাকে ভীষণ ভাবে উপকৃত করেছে। আমি সব সময় এটা বলব, একজন নৃত্যশিল্পী বা শিল্পীর জন্য এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি যে, আজ এত বছর পরেও আপনারা এই ভাবে মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখছেন এবং সেই ভালবাসা আর আশির্বাদ আমাকে দিচ্ছেন।”