Gandhi Jayanti Swami Vivekananda: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী যে শুধুই একজন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, তাই নয়, তাঁর জীবনের গভীরে ছিল এক অনন্য আধ্যাত্মিক আকর্ষণ, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী ভাবার্থকে জীবনীশক্তি যুগিয়ে গিয়েছে। তাঁর ভিতরের মনন সমগ্র আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে।
গান্ধীর ভাবমালায় “অহিংসা” ও “সত্যাগ্রহ” কখনও একটি রাজনৈতিক কৌশল ছিল না, সেগুলি ছিল তাঁর আত্মার সাধনা, শক্তির উৎস। তাঁর জীবনের একটি শিরা যে ভারতীয় সনাতন এবং আধ্যাত্মিকতা, তা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সমানভাবে জড়িত ছিল।
একইভাবে, স্বামী বিবেকানন্দ, ভারতীয় দার্শনিক, তত্ত্ববিদ ও ধর্মপ্রবক্তা। তাঁর চিন্তা ও কর্মে আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মকে ও ধর্মের উদারতা ও বিশালতাকে প্রথম বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। দুই মহান ব্যক্তিত্ব গান্ধী ও বিবেকানন্দ, যাঁদের বয়সের ব্যবধান মাত্র ছয় বছর; কিন্তু পথ, অঙ্গ, স্বপ্ন, তবুও তারা স্পষ্টভাবে আলাদা ছিলেন।
যদিও তারা একই সময়ে ভারতবর্ষে ছিলেন, সাক্ষাৎ করার সুযোগ কখনও সম্ভব হয়নি। এই মর্মান্তিক বিষয়টি গান্ধী নিজেই তাঁর আত্মজীবনী ‘My Experiment with Truth’-এ উল্লেখ করেছেন।
গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে, ১৯০১ সালে কলকাতা পৌঁছানোর পর তাঁর একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল বিবেকানন্দের সঙ্গে কথা বলার। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ভোরে হেঁটে বেরিয়ে পড়েন বেলুড় মঠের উদ্দেশে। প্রায় ৩.২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তিনি সেখানে পৌঁছন। কিন্তু পৌঁছেই জানলেন, স্বামী বিবেকানন্দ বর্তমান নেই। মঠের সাধকরা জানান, তিনি কলকাতার ঘরে রয়েছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ।
গান্ধীর মনে সেই “অসম্পূর্ণ সাক্ষাৎ”য়ের বাসনা চির বাসনা হয়েই থেকে গিয়েছিল। কারণ ১৯০২ সালের জুলাইয়েই বিবেকানন্দ পরলোক গমন করেন। গান্ধী তাঁর জীবনে যতবার সুযোগ পেয়েছেন, বিবেকানন্দের চিন্তা, কীর্তি ও দর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বারবার বিবেকানন্দের কর্মের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা ব্যক্ত করেছেন। ১৯২১ সালে বিবেকানন্দের স্মরণে বেলুর মঠ যাত্রার সময়, গান্ধী বলেছিলেন, “আমি বিবেকানন্দের কাজ গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছি, এবং তা আমাকে আমার দেশপ্রেমকে হাজারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”
যদিও তাঁরা একে অপরকে কখনও মুখোমুখি দেখেননি, গান্ধী ও বিবেকানন্দ দুই বিশাল হৃদয় ও দুই অক্ষ, একসাথে ভারতকে আত্মনির্ভর ভাবনায় মেলাতে এক জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।