Coma Survivors Share Experiences: কোমা থেকে জেগে ওঠা মানুষরা জানিয়েছেন, অচেতন অবস্থায় তাঁদের কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একজন বলেছেন, আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোনও শব্দ বেরোয়নি।
কোমায় চলে গেলে কী ঘটে—এ বিষয়ে আসলে শুধু তাঁরাই বলতে পারেন, যাঁরা এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। বাইরে থেকে অনেকের কাছে এটি হয়তো দীর্ঘ ঘুমের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু যারা এ থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাঁদের মতে এটি একেবারেই আরামদায়ক নয়।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোমা থেকে জেগে ওঠা কয়েক ডজন মানুষ ইনস্টাগ্রামের টেক্সট-ভিত্তিক অ্যাপ থ্রেডস-এ তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এক ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেছিলেন—যাঁরা কোমায় ছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
কোমায় দালাই লামা ও মাদার তেরেসার সঙ্গে দেখা
কেউই কোমার অভিজ্ঞতাকে সুখকর বলে উল্লেখ করেননি। বরং অনেকে বলেছেন এটি ছিল অবাস্তব, অস্বস্তিকর বা ভয়ানক। একজন, যিনি চিকিৎসাগত কারণে চার সপ্তাহ কোমায় ছিলেন, দাবি করেছেন যে এই সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সময়ে গিয়েছেন। এমনকী তিনি দালাই লামা ও মাদার তেরেসার সঙ্গেও দেখা করেছেন বলে দাবি করেন।
তিনি জানান, এক সময় মনে হয়েছিল তিনি সমুদ্রের উপর একটি বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। আবার কখনও মনে হতো তাঁকে মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তাঁর কাছে এটি ছিল এক অন্তহীন অদ্ভুত স্বপ্ন l
যখন স্বামীর হত্যাকে সত্যি ভেবেছিলেন
আরেকজন ব্যবহারকারী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কোমার সময় তাঁকে অনেক অদ্ভুত স্বপ্ন তাড়া করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
হুঁশ ফেরার পর তাঁর গলায় টিউব লাগানো ছিল এবং তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। ফলে কাউকে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাননি, আর তিনি বিশ্বাস করে ফেলেন যে স্বামী সত্যিই মারা গেছেন। যখন এক রাতে তাঁর স্বামী তাঁকে দেখতে এলেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন স্বামীর ভূত এসেছে। এতটাই ভয়ে কেঁপে ওঠেন যে স্বামী বুঝতেই পারছিলেন না কেন তিনি এমন আচরণ করছেন।
অনেকেই শুনতে পেতেন প্রিয়জনের কথা
বেশ কয়েকজন দাবি করেছেন যে কোমায় থেকেও তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের কথা, তাঁদের প্রার্থনা কিংবা চিকিৎসাকর্মীদের আলোচনা শুনতে পেতেন। তাঁরা উত্তর দিতে চাইতেন, কিন্তু পারতেন না।
এক নার্সের অভিজ্ঞতাও ভাইরাল হয়েছিল। তিনি জানান, এক ক্যানসার রোগী যিনি স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের পর প্রায় এক মাস কোমায় ছিলেন, তাঁকে বলেছিলেন যে কোমার সময় তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জীবন কাটিয়েছেন। তিনি এক ক্যারিবীয় দ্বীপে পৌঁছে সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা করেছেন।
কথা বলার চেষ্টা, কিন্তু গলা থেকে শব্দ বেরোয়নি
এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, কোমায় আমার মনে হয়েছিল আমি ওজনহীন হয়ে গেছি। আমাকে আট দিন ধরে টিউবের ভেতর রাখা হয়েছিল। প্রথম ছয় দিন কিছুই মনে নেই, কিন্তু শেষ দু’দিন ছিল অবাস্তব অভিজ্ঞতায় ভরা।
আমি নার্সদের কথা, আমার রুমে বাজতে থাকা গান সব শুনতে পাচ্ছিলাম। এমনকি মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল আমি নিজের শরীরকে বাইরে থেকে দেখছি।
সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্যে একজন বলেছেন, তিনি নার্সদের বলতে শুনেছিলেন তাঁর মাকে যে রোগী কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। অথচ তিনি পরিষ্কার শুনছিলেন। তিনি বারবার বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শরীর কিছুতেই সাড়া দিচ্ছিল না। তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বাস্তব জীবনের মতো অভিজ্ঞতা
একজন মানুষ সতর্ক করে লিখেছেন—আপনি কি জানেন সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটা কী? হতে পারে এখনই আপনি কোমায় আছেন, কিন্তু নিজেকে বাস্তব জীবনে সচেতন ভেবে বসে আছেন। অন্য একজন জানিয়েছেন, তাঁর এক উবার চালক চার মাস কোমায় ছিলেন। চালক নাকি ভেবেছিলেন তিনি স্বাভাবিকভাবে তাঁর দৈনন্দিন জীবন যাপন করছেন। কিন্তু আসলে তিনি কোমার ভেতরেই বন্দি ছিলেন।
কোমা: এক গভীর অচেতন অবস্থা
এনএইচএস কোমাকে সংজ্ঞা দিয়েছে—এমন এক অচেতন অবস্থা, যেখানে মানুষ প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে যায় এবং জাগানো যায় না। কোমায় থাকা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ খুবই কমে যায়, এবং অনেক সময় তাঁরা যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া শ্বাস নিতে বা গিলতে পারেন না।
তাঁরা জীবিত থাকেন, কিন্তু জেগে ওঠেন না এবং সচেতনতার কোনো লক্ষণও দেখা যায় না। তাঁদের চোখ বন্ধ থাকে, চারপাশের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না, শব্দ বা ব্যথার প্রতিক্রিয়াও নাও করতে পারেন।
কতদিন স্থায়ী হতে পারে কোমা?
কোমা কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস, এমনকি বছরের পর বছরও স্থায়ী হতে পারে। কেউ কেউ ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পান, আবার অনেকেই আর কোনোদিন জেগে ওঠেন না।