Legal Literacy And Awareness, Legal Rights: রাজ্য পুলিশ বা কলকাতা পুলিশের এখন যেমন উর্দি দেখি, তার প্রথম প্রচলন হয় ১৮৪৫ সালে, পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকার এই ধরনের উর্দি চালু করেছিল। সে সময় কলকাতাই ছিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানী। এর মধ্যে কলকাতা পুলিশের সাদা আর রাজ্য পুলিশের উর্দির রং খাকি। ১৭৮ বছর আগেই এই দুই রঙের উর্দি চালু হয় বাংলায়।
ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস ইউনিফর্ম রুলস ১৯৫৪
আমাদের পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা ডিজিপি থেকে এসপি পদাধিকারী পুলিশকর্মী বা কর্তার থেকে উর্দিতে তাঁদের নাম আর পদ লেখা ব্যাচ সাঁটা থাকে। ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস ইউনিফর্ম রুলস ১৯৫৪’ অনুযায়ী, পুলিশকর্মী বা কর্তার উর্দিতে তাঁদের নাম-পদ লেখা ব্যাচ থাকাটাই দস্তুর।
কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে?
কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটনাও অনেকের চোখে পড়েছে বা মাঝে মধ্যে চোখে পড়তে পারে। বিশেষ অভিযানে সাদা পোশাকের পুশিসের গায়ে উর্দি থাকে না। তাই সে ক্ষেত্রে পুলিশকর্মী বা কর্তার নাম-পদ লেখা ব্যাচ চোখে না পড়াটাই স্বাভাবিক। এই সব ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও ব্যক্তিকে গুরুতর অভিযোগে আটক করার সময় এর দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তা নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে নেন। এছাড়া, কোনও বেআইনি কাজে (তোলাবাজি-জুলুম, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ) যুক্ত পুলিশকর্মী বা কর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখতে ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস ইউনিফর্ম রুলস ১৯৫৪’ মানেন না এবং উর্দিতে নাম-পদ লেখা ব্যাচ পরেন না। ব্যাচ পরলেও সেটিকে নিজেদের পকেটে রাখা মোবাইল ফোন বা ওয়াকিটকি দিয়ে আড়াল করে রাখেন।
আইন কী বলছে?
এ প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রাধামোহন রায় জানান, পুলিশকর্মীর উর্দিতে তার নাম-পদ লেখা ব্যাচ পরাটাই নিয়ম। ব্যাচ না পরাটাই বেআইনি বা এ ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ আনা যেতে পারে। ইচ্ছাকৃত ভাবে মোবাইল ফোন বা ওয়াকিটকি দিয়ে ব্যাচ আড়াল করে রাখাটাও অন্যায়। সাধারণ মানুষ কোনও অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর নাম-পদ লেখা ব্যাচ দেখতে চাইতেই পারেন। যদি তাতে পুলিশকর্মী ব্যাচ দেখাতে না চাইলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে গিয়ে রাধামোহনবাবু বলেন, “রামপুরহাটে অ্যাডিশনাল চিফ জ্যুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনন্দকুমার তিওয়াড়ি একটি মামলা চলাকালীন এক পুলিশ আধিকারিককে তার উর্দিতে নাম-পদ লেখা ব্যাচ না থাকায় রীতিমতো বকাবকি করেছিলেন। ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে সারাধরণ মানুষকে হয়রানি আর অন্যায় ভাবে টাকা আদায় করার জন্য ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করার অভিযোগ ছিল। ওই মামলাতেই বিচারক আনন্দকুমার তিওয়াড়ি পুলিশকর্মীর উর্দিতে ব্যাচ পরার গুরুত্ব আর আইন স্পষ্ট করে দেন।”
সাধারণ মানুষ কি কোনও প্রয়োজনে কোনও পুলিশকর্মীর নাম-পদ লেখা ব্যাচ দেখতে চাইতে পারেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে রাধামোহনবাবু বলেন, “পুলিশকর্মীর উর্দিতে তার নাম-পদ লেখা ব্যাচ দেখা না গেলে প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ তা দেখতে চাইতেই পারেন। সাধারণ মানুষের এই অধিকার রয়েছে। কোনও পুলিশকর্মীর অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তার এই অধিকার প্রয়োগ করতেই পারেন। যদি কোনও পুলিশকর্মী নিজের ব্যাচ দেখাতে অস্বীকার করেন বা পাল্টা বাধা দেন, সে ক্ষেত্রে স্টার্টফোন থেকে তার ছবি বা ভিডিয়ো তুলে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন।”