প্রতিবার সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণের সময়ে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে আসে। গ্রহণের সময় কি সত্যিই খাবার মুখে তোলা উচিত নয়? শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মা-ঠাকুরমারা ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে গ্রহণের সময়ে রান্না করতে এবং খাবার খেতে নিষেধ করে আসছেন। গ্রহণ শুরুর অন্তত ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে ফেলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক সমাজ মনে করে, খাবারের কোনও ক্ষতি হয় না গ্রহণের সময়ে। সংস্কৃতি এবং ধার্মিক বিশ্বাস থেকেই এই নিয়ম যুগ যুগ ধরে মনে চলা হচ্ছে।
রবিবার রয়েছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। এবারও সেই এক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন গ্রহণ শুরুর আগেই খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত? ধার্মিক ব্যক্তিদের কাছে বিষয়টি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
ধর্মীয় বিশ্বাস
অনেক বাড়িতে সূতক কাল শুরুর আগেই খাবার খেয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সূতক কাল শুরু হয় চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে। সূতক কাল অর্থাৎ যে সময়টা অপবিত্র। ফলে এই সময়ে রান্না করা কিংবা খাবার খাওয়া অশুভ মনে করা হয়। যতক্ষণ না চন্দ্রগ্রহণ শেষ হচ্ছে, খাবারে তুলসি পাতা দেওয়া থাকে।
ধর্মীয় পুঁথি অনুসারে, মহাজাগতিক শক্তি যখন অসন্তুষ্ট থাকে তখনই গ্রহণ হয়। এই সময়ে খাবার খাওয়া শরীরের ক্ষতির সমান। সেকারণেই অধিকাংশ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ চন্দ্রগ্রহণের দিন উপোস করেন কিংবা ন্যূনতম খাবারটুকু খান। এই সময়টা পুরোহিত এবং জ্যোতিষীরা ধ্যান, যপ করার পরামর্শ দেন।
বৈজ্ঞানিক যুক্তি
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, গ্রহণের সময়ে খাবারে কোনও প্রভাব পড়ে না। গ্রহণের সময়ে খাবার না খাওয়া সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া একটি ধারণা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চন্দ্রগ্রহণের সময়ে অনেক রাত করে খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। সে কারণেই সম্ভবত ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক এই যুক্তি মিলে গিয়েছে।
গর্ভবতীদের কি সতর্ক থাকা উচিত?
ঐতিহ্য অনুযায়ী, গর্ভবতীদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয় গ্রহণের সময়ে। তাদের ঘর থেকে বোরোতে নিষেধ করা হয়। ধারাল কোনও জিনিস ব্যবহার করতেও বারণ করা হয়। যতক্ষণ না গ্রহণ শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বাদের না খেয়ে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বিজ্ঞান এই বিষয়গুলিকে সমর্থন করে না। যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য হিসেবে পালন করা হয় এই রীতিগুলি।
দিল্লির জ্যোতিষী পণ্ডিত রাজেশ শর্মা বলেন, 'চন্দ্রগ্রহণ শুরুর আগে খাওয়াদাওয়া সেরে ফেলা উচিত। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে ফেলতে এই পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এমন মহাজাগতিক ঘটনার সময়ে স্নান করা, পুজো দেওয়ার মতো পবিত্র কাজ করাও উচিত নয়।'
অর্থাৎ, ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই একাংশ চন্দ্রগ্রহণের সময়টা খাবার খান না। বিজ্ঞান যদিও চন্দ্রগ্রহণের সময়ে না খাওয়াকে সমর্থন করেন না।