কবিগুরুর ইচ্ছে ছিল, "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।" আবার কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছিলেন, "নিরুদ্দেশেও হারাতে চাইলে সেই দেয়ালেই ঘিরবে।" ফলে কোনটা মানবেন আর কোনটা মানবেন না, তা নিয়ে জলঘোলা চলুক। তবে কেউ সত্যিই হারিয়ে যেতে চাইলে, তাকে হারাতে দেবে কে? বিশেষ করে আত্মীয় পরিজন সটান পুলিশের কাছে গেলে, পুলিশ আপনাকে জীবিত-মৃত খুঁজে বের না করে দেওয়া পর্যন্ত কেস ক্লোজ করবে না এটা সবাই জানি। তাহলে উপায় ! উপায় আর কী ? হারানোর কোনও উপায় নেই।
হারিয়ে যাওয়ার সরকারি সহায়তা
কিন্তু এমন দেশ আছে যাদের সরকার হারানোর জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। জানেন কী ! এমনকী হারিয়ে যেতে চাইলে এজেন্সি রয়েছে, যাঁরা আপনার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য সরকারকে জানাবে। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন তা জানাবে না। তাহলে সরকার-পুলিশ কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না। আপনি অজ্ঞাতবাসে থেকে যদি আপনার এটিএম কার্ড ব্যবহার করেন, কিংবা অন্য কোনও উপায়ে আপনাকে কোনও সিসিটিভিতে দেখা যায়। তাহলেও আপনার পরিবারকে আপনার কোনও তথ্য দেবে না সরকার।
কোথায় রয়েছে এমন দেশ !
জানতে ইচ্ছে করছে তো ! কোথায় রয়েছে "আমাকে আমার মতো থাকতে দাও" এর দেশ। আমাদের এশিয়ারই উন্নত দেশ জাপানে এমন স্বীকৃত হারিয়ে যাওয়ার পন্থা রয়েছে। আইনিভাবেই তাকে সম্মান জানায় দেশ। ফলে ইচ্ছে হল কাউকে কিছু না জানিয়ে হুস করে উধাও হয়ে গেলেন, এমনটাই সম্ভব সে দেশে। শুধু আপনি আড়ালে থেকে কোনও অপরাধ করতে পারবেন না। অপরাধ করলে আপনাকে খুঁজে বের করে নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি দিতে পিছপা হবে না পুলিশি ব্যবস্থা।
"জুহাতসু"
জাপানে এ ধরণের যাঁরা স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায়, সে সব লোকজনকে অভিহিত করা হয় ‘জুহাতসু’ হিসেবে। এই জাপানি শব্দের অর্থ বাষ্পীভবন বা হাওয়া হয়ে যাওয়া। যেসব লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে লুকোতে চায় তাদেরকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই লোকগুলো কোথায় আছে, কী করছে- এসব তারা গোপন রাখে। কখনও কখনও কয়েক মাস, কয়েক বছর, এমনকী কয়েক দশকের জন্যও তাঁরা হারিয়ে যায়।
কিছু ব্যবসায়িক কোম্পানি হারাতে সাহায্য করে
এভাবে হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। পরিশোধ করার মতো নয় এমন ঋণ থেকে শুরু করে প্রেমহীন বিয়ে। কেউ নিকট জনের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে পালান, কেউ প্রেমিকাকে ছেড়ে যান, কেউ নতুন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ে হারান। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা তবে কারণ যাই হোক না কেন, তারা তখন এমন কিছু কোম্পানির দ্বারস্থ হন যারা তাদেরকে উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে।
সরকারও পুরোদস্তুর গোপনীয়তাকে সম্মান দেয়
দেশটিতে ‘জুহাতসু’ হয়ে যেতে চাওয়াদের প্রক্রিয়াকে অনুমোদন করে। যেসব লোকজন উধাও হতে চান তাদেরকে গোপনে জীবন থেকে সরে যেতে সাহায্য করে এসব কোম্পানি। এমনকী গোপন স্থানে তাদের থাকারও ব্যবস্থা করে দেয়। ৯০-এর দশকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে এরকম একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন হাতোরি নামে এক ব্যক্তি। ওই দশকে জাপানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছিল।