Devi Saraswati and Benzaiten: আজ সরস্বতী পুজো। বাঙালির ঘরে ঘরে চলছে বাগদেবীর আরাধনা। ঘরোয়া পুজো থেকে স্কুল-কলেজ, বারোয়ারি— সর্বত্রই পুজোর সাজে সেজে উঠেছে। প্রতি বছরই এই সময়টায় পাড়ার অলিগলিতে, ঘরে ঘরে সরস্বতী পুজো, বক্স বাজিয়ে গান আর হলদে-সাদা নতুন জামা কাপড়ে সেজেগুজে কচি-কাঁচাদের ঘুরতে যাওয়া চোখে পড়বেই।
হাওড়া পঞ্চাননতলার সরস্বতী মন্দির:
তবে হাওড়ার পঞ্চাননতলায় সরস্বতী পুজোটা (Saraswati Puja) সারা বছরই হয়। কারণ, এখানে মন্দিরে বছরভর পুজো পান দেবী। হাওড়ার পঞ্চাননতলার ১ নম্বর উমেশ চন্দ্র দাস লেনের সরু গলির এক প্রান্তে রয়েছে বাংলার একমাত্র সরস্বতীর মন্দির। এখানে সারা বছর অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে পূজিতা হন বাগদেবী। হাওড়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন উমেশচন্দ্র দাসের মেজো ছেলে রণেশচন্দ্র বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে ১৯১৯ সালে জয়পুর থেকে দেবীর এই মূর্তি আনেন। মূর্তিটি শ্বেতপাথরের। চার ফুট লম্বা প্রতিমাটি বাহন হাঁসের উপরে দাঁড়িয়ে, দেবীর বাঁ হাতে ধরা রয়েছে বীণা। ১৯২৩ সাল একচালা মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়। অর্থাৎ, এই মন্দির প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হল এ বছরই। প্রতি বছর সরস্বতী পুজোর দিন বাসন্তী রঙের শাড়িতে নতুন করে সাজানো হয় দেবীকে।
দেবী সরস্বতী আর জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেন (Benzaiten):
চেহারা-আদলের পাশাপাশি বছরভর পুজো পাওয়ার রীতিতে দেবী সরস্বতীর সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেনের (Benzaiten)৷ হাজার বছরেরও বেশি ধরে জাপানে পুজো করা হচ্ছে দেবী সরস্বতীর, শুধু নাম-পুজোর তিথি সেখানে আলাদা।
বাংলা ছাড়া দেশের অন্যান্য রাজ্যে দেবী সরস্বতীর প্রতিমায় চারটি করে হাত দেখা যায়। বাংলায় পূজিতা দেবীর দুটি হাত। এখানে বাংলায় পূজিতা দেবী সরস্বতীর সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেনের। দু’জনেরই দু’হাতে ধরা হয়েছে বাদ্যযন্ত্র, দেবী সরস্বতীর হাতে বীণা আর দেবী বেঞ্জাইতেনের হাতে থাকে বিওয়া, যা জাপানের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। বিওয়া দেখতে অনেকটা সরদের মতো।
এবার দুই দেবীর বাহনের প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক। দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহংস আর দেবী বেঞ্জাইতেনের বাহন হল সাপ। তবে পৌরাণিক কাহিনি ঘাঁটলে জানা যায় যে, দেবী সরস্বতী বৃত্রাসুরকে বধ করেছিলেন। ঋক বেদের বর্ননা অনুযায়ী, এই বৃত্রাসুরের অপর নাম ‘অহি’ বা সাপ। তাই এখানেও দেবী সরস্বতীর সঙ্গে সাপের একটা যোগসূত্র রয়েছে যার ফলে অনেকে মিল খুঁজে পান জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেনের সঙ্গে।
দুই দেশের দেব-দেবীর চেহারা সাদৃশ্যের ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট:
খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ভারত থেকে বৌদ্ধ ধর্মের মহিমা প্রসারিত হয় চিন-জাপানের বহু অংশে। এর আগে এই জায়গাগুলোয় হিন্দু দেব-দেবীর সঙ্গে মিল থাকা তিব্বতি দেব-দেবীর আরাধনা হতো। ফলে মনে করা হয়, হিন্দু দেবী সরস্বতীর সঙ্গে তিব্বতি ধর্ম-সংস্কৃতি অনুযায়ী আরাধ্যা দেবী বেঞ্জাইতেনের অনেক মিল রয়েছে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এক সময় প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল চম্পা রাজ্য, যেখানে হিন্দু রাজাদের ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। তাদের চম্পা রাজাদের মাধ্যমেই হিন্দু ধর্ম পৌঁছে যায় জাপানে। সেই সময় থেকেই দেবী সরস্বতী ছাড়াও ইন্দ্র, ব্রহ্মা, গনেশ, লক্ষ্মী-সহ নানা হিন্দু দেবদেবী সেখানকার স্থানীয় নাম আর লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মিল থাকা পোশাক-চেহারা-অস্ত্র-যন্ত্র আর বাহনে পূজিত হয়ে আসছেন। মতভেদের অবকাশ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ইতিহাস-বেদ-পুরানের ব্যাখ্যা-কাহিনি থেকে জন্মানো বিশ্বাস হিন্দু দেবী সরস্বতীর সঙ্গে জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেনের সাদৃশ্যের পিছনে চম্পা রাজাদের প্রভাবকে অনেকাংশেই মেনে নিয়েছে।