Advertisement

Kolkata Heritage: গিরিশ ঘোষের বাড়ির এ কী হাল? বিনোদিনীর ইচ্ছেপূরণ হল, কিন্তু 'স্টার-মেকার' উপেক্ষিতই

কলকাতার নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও নটী বিনোদিনীর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা পেশাদারি থিয়েটারের সূচনা পর্বে গিরিশ যুগ নামে পরিচিত সেই সময়টিতে এই দুই ব্যক্তিত্ব নাট্যমঞ্চকে এনে দিয়েছিলেন এক নতুন মাত্রা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনগুলো আজ অবহেলা ও অযত্নে।

নটী বিনোদিনী ও গিরিশ ঘোষের বাড়ি।-কোলাজনটী বিনোদিনী ও গিরিশ ঘোষের বাড়ি।-কোলাজ
সুকমল শীল
  • কলকাতা,
  • 13 Jan 2025,
  • अपडेटेड 2:28 PM IST
  • কলকাতার নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও নটী বিনোদিনীর অবদান অনস্বীকার্য।
  • বাংলা পেশাদারি থিয়েটারের সূচনা পর্বে গিরিশ যুগ নামে পরিচিত সেই সময়টিতে এই দুই ব্যক্তিত্ব নাট্যমঞ্চকে এনে দিয়েছিলেন এক নতুন মাত্রা।

কলকাতার নাট্যজগতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও নটী বিনোদিনীর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা পেশাদারি থিয়েটারের সূচনা পর্বে গিরিশ যুগ নামে পরিচিত সেই সময়টিতে এই দুই ব্যক্তিত্ব নাট্যমঞ্চকে এনে দিয়েছিলেন এক নতুন মাত্রা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনগুলো আজ অবহেলা ও অযত্নে।

গিরিশ ঘোষের বাড়ির করুণ দশা
বাগবাজারের রাজবল্লভপাড়া মোড় পেরিয়ে গিরিশ অ্যাভিনিউ ধরে এগোলে দেখা যায় গিরিশচন্দ্র ঘোষের ঐতিহাসিক বাড়ি। একসময় যেখানে বাংলা নাটকের সৃষ্টিধর্মী পরিকল্পনা হতো, আজ সেই বাড়ির বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে গভীর ফাটল। খসে পড়েছে পলেস্তরা, মরচে ধরেছে লোহার রড, আর দেয়ালে গজিয়েছে বট-অশ্বত্থের শিকড়।

বাড়ির ভিতরে রক্ষিত আছে গিরিশচন্দ্রের ব্যবহৃত লাঠি, জুতো, দুষ্প্রাপ্য বই, এবং নাটকের পাণ্ডুলিপি। অথচ সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কোনও পরিকল্পনা নেই। একসময় কেয়ারটেকার দায়িত্বে থাকলেও এখন বাড়ি পাহারা দেওয়া হয় তিনজন নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে। তাঁরা পালা করে কাজ করেন, তবে সাফাই বা সংস্কারের কোনও দায়িত্ব তাঁদের ওপর নেই।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, 'গিরিশ ঘোষের মতো নাট্যব্যক্তিত্বের ভিটে যদি এমন অবস্থায় পড়ে থাকে, তা আমাদের লজ্জিত করে। নিয়মিত সংস্কার না হলে এই ঐতিহাসিক বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে।'

নটী বিনোদিনীর বাড়ি: ইতিহাসের নীরব সাক্ষী
স্টার থিয়েটারের গলিতে অবস্থিত ‘গোপাল কুটীর’ নামে পরিচিত নটী বিনোদিনীর বাড়ির অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ১৯৯৪ সালে একটি ফলক লাগানো হলেও বাড়িটির সংরক্ষণে সরকার বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসেনি। তবে সম্প্রতি রঙ করা হয়েছে বাড়িটি। বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা রত্না দাস ও তাঁর স্বামী সুব্রত দাস নটী বিনোদিনীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তাঁরা বিনোদিনীর ব্যবহার করা ঘর ও কিছু জিনিস যত্নে রেখেছেন।

তবে সাধারণ মানুষের জন্য এই বাড়ি উন্মুক্ত নয়। শুধুমাত্র কালীপুজোর দিন দর্শনার্থীরা বিনোদিনীর স্মৃতিবিজড়িত ঘর এবং ঠাকুরঘর দেখার সুযোগ পান। অতীতে চুরির ঘটনার কারণে বাড়ির অন্যান্য অংশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Advertisement

ঐতিহ্যের কেন্দ্রে বাগবাজার
বাগবাজার এলাকা কলকাতার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রামকৃষ্ণদেব, সারদা দেবী, এবং ভগিনী নিবেদিতা সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই এলাকার সঙ্গে জড়িত। গিরিশ ঘোষ নিজেও রামকৃষ্ণদেবের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, 'ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি যেমন সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তেমনভাবে গিরিশ ঘোষ ও নটী বিনোদিনীর বাড়িও সংরক্ষণ করা উচিত। এগুলি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, আমাদের গর্বের অংশ।'

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পুজা পাঁজা বললেন, 'গিরিশ ঘোষের বাড়ির অবস্থা খারাপের কথা পুরসভা জানে। সংস্কারের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক আমরা চাই। তবে এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার ক্ষেত্রে নিয়মাবলি মেনে চলতে হয়। আমরা সচেতন রয়েছি।'

কেবল ফুল আর আলো নয়, চাই স্থায়ী উদ্যোগ
প্রতিবছর গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্ম ও মৃত্যুদিনে বাড়িটিতে মালা ও রঙিন আলো লাগানো হয়। কিন্তু সারা বছর বাড়িটি পড়ে থাকে অযত্নে। নাট্যপ্রেমীদের দাবি, স্থায়ী সংরক্ষণ এবং হেরিটেজ মিউজিয়াম তৈরির মাধ্যমে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা হোক।

 

Read more!
Advertisement
Advertisement