Netaji Subhash Chandra Bose 23 January: নেতাজির ছবির সামনে ধূপ জ্বেলেই এখনও প্রতিদিন সকাল শুরু হয় পাহাড়ের কোলের ছিমছাম সাদা বাড়িটায়। ব্রিটিশ স্থাপত্যে তৈরি ওই বাড়িতে বড় বড় পাল্লা দেওয়া জানলা। তিনকোনা আর্চের ভঙ্গিতে টিনের চাল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে বারান্দা, পাশেই গোলাকৃতি বৈঠকখানা। কার্শিয়াংয়ের বাড়িতেই টানা ছ’মাস গৃহবন্দি থাকতে হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। তার পরেও নানা সময়ে তিনি ওই বাড়িতে যান বলে জানা যায়।
১৯৩৬ সালে এই বাড়িতেই টানা ৬ মাস ব্রিটিশরা গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন নেতাজিকে। সেটা ১৯৩৬-এর জুন থেকে ডিসেম্বর। ওই সময়েই নেতাজি গিদ্দা পাহাড়ের এই বাড়িতে বসেই চিঠি লিখেছিলেন জওহরলাল নেহরু,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে, এমনটাই জানা যায়। পরবর্তী সময়ের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর ভাষণেরও খসড়াও লিখেছিলেন এই ঘরে বসেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নেতাজিকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এই বাড়ির ঠিকানাতেই। ১৯৯৬ সালে এই ভবনটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে। এখন এটি “নেতাজি মিউজিয়াম” হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়িটি। রাজ্যের উদ্যোগে ভবনটির সৌন্দার্যায়ন করা হয়। প্রতি বছরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে মিলবে নেতাজীর লেখা নানান চিঠির প্রতিলিপি, কিংবা বিশ্বকবির নেতাজীকে লেখা চিঠি। আজ পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন গিদ্দা পাহাড়ের এই সাদা বাড়িটি। রয়েছে নেতাজির স্মৃতিমাখা আরও অনেক কিছু। সবই ঠাঁই পেয়েছে পাহাড়ের এই নেতাজি সংগ্রহশালায়। দেশ স্বাধীনের আগে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনেই নামতেন নেতাজি। তারপর পৌঁছতেন গিদ্দা পাহাড়ে আজ সবই স্মৃতি। সেইসব স্মৃতিই আঁকড়ে ধরে বসে আছে গিদ্দা পাহাড়!
কার্শিয়াংয়ের গিদ্দা পাহাড়ের বাড়িটি নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বসু কিনেছিলেন অসমের এক ডেপুটি পুলিশ সুপারের থেকে। তখন ১৯২২ সাল। এই বাড়িতে ১৯৩৬-এর জুন থেকে ডিসেম্বর নেতাজিকে ব্রিটিশরা গৃহবন্দি করে রাখে বলে তথ্য রয়েছে। পরে নেতাজি ‘মুক্ত’ অবস্থাতেই এই বাড়িতে এসেছেন। এটি এখন নেতাজি সংগ্রহশালা। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠি গবেষকদের দাবি, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর ক্ষতি করে কোনও আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে এই বাড়িতে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে চিঠিতে আলোচনা শুরু করেন নেতাজি। এনআরসি, সিএএ নিয়ে যখন দেশ উত্তাল, তখন নেতাজির কার্শিয়াংয়ের বাড়িতে রাখা কবির লেখা চিঠির যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
প্রচুর পর্যটক গিদ্দা পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি নেতাজির বাড়ি অধুনা মিউজিয়ামও ঘুরে দেখে যান। সঙ্গে নিয়ে যান একবুক স্মৃতি।