Advertisement

June Malia: অভিনেত্রী, সিঙ্গল মাদার, রাজনীতিবিদ, ছকভাঙা চরিত্র জুন মালিয়া

তাঁকে দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই তিনি ৫১টি বসন্ত কাটিয়ে ফেললেন। তিনি জুন মালিয়া (June Malia)। স্ক্রিনে আত্মপ্রকাশের সময় থেকেই ছকভাঙা চরিত্র তিনি। ব্যক্তি জীবনেও তার কোনও অন্যথা হয়নি। আজ তাঁর ৫১তম জন্মদিনে ফিরে দেখা অভিনেত্রী জুন মালিয়ার সফর।

জুন মালিয়া
রজত কর্মকার
  • কলকাতা,
  • 24 Jun 2021,
  • अपडेटेड 12:56 PM IST
  • তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দার্জিলিঙে। মহিষাদল রাজ পরিবারের মেয়ে জুন।
  • মা-কে ঘিরেই তাঁর জীবন আবর্তিত হয়েছে। মা পারুল দুবে এক দিনকে যেমন তাঁর বন্ধু ছিলেন, তেমনই কঠোর শাসন করেছেন।
  • জুন একবার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছিলেন, মায়ের হাতে চড় খেতে হয়েছিল তার জন্য।

প্রায় আড়াই দশক কাটিয়ে ফেলেছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু তাঁকে দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই তিনি ৫১টি বসন্ত কাটিয়ে ফেললেন। তিনি জুন মালিয়া (June Malia)। স্ক্রিনে আত্মপ্রকাশের সময় থেকেই ছকভাঙা চরিত্র তিনি। ব্যক্তি জীবনেও তার কোনও অন্যথা হয়নি। আজ তাঁর ৫১তম জন্মদিনে ফিরে দেখা অভিনেত্রী জুন মালিয়ার সফর।

তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দার্জিলিঙে। মহিষাদল রাজ পরিবারের মেয়ে জুন। কিন্তু বাবাকে নিয়ে কোনও দিন কথা বলতে শোনা যায়নি। বরং মা-কে ঘিরেই তাঁর জীবন আবর্তিত হয়েছে। মা পারুল দুবে এক দিনকে যেমন তাঁর বন্ধু ছিলেন, তেমনই কঠোর শাসন করেছেন। জুন একবার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছিলেন, মায়ের হাতে চড় খেতে হয়েছিল তার জন্য। জুন একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তখন কৈশোরে সদ্য পা রেখেছেন তিনি। তাঁর এক বয়ফ্রেন্ড রোজই বাড়িতে ফোন করত। জুন তাঁর সঙ্গে কথাও বলতেন। এমনই একদিন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন, সে সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন তাঁর মা। তৎক্ষণাত ফোনটি কেড়ে নিয়ে ডায়ালে নামিয়ে দিয়েছিলেন এবং মেয়েকে সপাটে চড় মেরেছিলেন। ওই বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে কেন ছেলেদের সঙ্গে গল্প তা নিয়েও জুনকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল জুনকে।

অনেকেই জানেন না, খুব স্ট্রাগল করে তাঁকে নিজের জায়গা তৈরি করতে হয়েছে। খুব কম বয়সেই প্রথম বিয়ে, দুই সন্তান এবং বিয়ে ভাঙা। জুন প্রাক্তন স্বামীর থেকে খোরপোশ দাবী করেননি সেই বয়েসে, যেখানে জুনের বাবা তখন ক্যানসারের রোগী। জুন এতটাই আত্মমর্যাদাসম্পন্না ছিলেন যে, সিদ্ধান্ত নেন যে লোকটি তাঁকে এবং তাঁর বাচ্চাদের ভালই বাসল না, সেখানে তার টাকায় বাচ্চাদের ভরনপোষণ করে কী লাভ!

জুন তখন নিজের বাবার ওই অবস্থাতে কী করবেন, নিজের অবস্থার কথা বলবেন কি না, ভেবে পান না। কিন্তু শেষ অবধি জানান বাবাকে। জুনের বাবা বলেছিলেন “তুমি এত ভেবো না, আমার কাছে চলে এসো বাচ্চাদের নিয়ে।” বাপের বাড়ি চলে আসেন জুন। বাবা-মা ভরসার হাত বাড়ান এবং নিজের মনের জোর জুনকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে।

Advertisement

নব্বই দশকে কিন্তু ‘সিঙ্গেল মাদার’ শব্দবন্ধটা বহুল প্রচলিত ছিল না। অনেকে কষ্ট করে, মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিতেন। আপস করতেন। ভালবাসাহীন সংসার চলত। কিন্তু সে সময়ে জুন অনেকটাই এগিয়ে ভাবেন তাঁর দুই সন্তান শিবাঙ্গী ও শিবেন্দ্রর মানসিক বিকাশের জন্য। সন্তানদের ভাবনার সঙ্গেই কিন্তু মন দিয়েছেন নিজের কেরিয়ারে। যখন জুন ইন্ডাস্ট্রিতে আত্মপ্রকাশ, তখন যেন এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল টালিগঞ্জ পাড়ায়। কে জানত তখন জুনের অতীত!

বাংলা সিনেমায় জুনের আবির্ভাবটা একটা সতেজতা এনে দিয়েছিল। বাংলা ছবি তখন নতুন মুখের অভাবে ধুঁকছিল। নায়িকাদের চিরাচরিত মুখ বলতে সে সময় সেই ইন্দ্রাণী হালদার নতুবা দেবশ্রী অথবা বম্বে থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা অভেনত্রীদের দল। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তরাও সে সময় খুব একটা পুরনো হননি ইন্ডাস্ট্রিতে। বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েক জন। সেখানে জুনের ছিপছিপে চেহারা, টানা চোখ, নির্মেদ শরীরি বিভঙ্গ এবং সর্বোপরি একটা আর্বানাইজড লুক অনেকেরই পছন্দ হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর বেশকিছু সাহসী সিনে অভিনয়। সবমিলিয়ে রাতারাতি বাংলা সিনেমার হাইক্লাস সেলিব্রিটি-তে পরিণত হয়েছিলেন জুন।

জুন টিভিতে এসছিলেন ‘তৃষ্ণা’ সিরিয়াল দিয়ে। তখন থেকেই সবার দুপুরের ঘুম কেড়ে নেয় জুনকে দেখার তৃষ্ণা। এর পরে সুদেষ্ণা রায়ের সৌজন্য ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি ডকুমেন্টরিতেও ছোট্ট অভিনয় জুনের। পরিচালক প্রভাত রায় তাঁর নতুন ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। সুদেষ্ণা রায় প্রভাত রায়কে বলেন জুনের কথা। জুন ফাইনালি সুযোগ পান বড় পর্দায়। ‘লাঠি’ সিনেমায় ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবশ্রী রায়ের বড় নাতনির ভূমিকায় জুনকে নিলেন প্রভাত রায়। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সুপারহিট সেই ছবিতে মাধ্যমিকে থার্ড ডিভিশন পাওয়া বখে যাওয়া মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করলেন জুন। যে সুন্দরী যে রূপ দিয়ে ভোলায় বিভিন্ন ছেলেকে। মাষ্টারমশাই ঠাকুর্দার শিক্ষায় শেষ অবধি বদল হয় নাতনির।

অমন একটি বাণিজ্য সফল ছবি, অত বিগ স্টারকাস্ট– ভিক্টর, দেবশ্রী, প্রসেনজিৎ, শতাব্দী, অভিষেক, ঋতুপর্ণা, সেখানে জুন নিজের জায়গাটা বুঝিয়ে দেন। বুঝিয়ে দেন যে, এই মেয়ে হারতে আসেনি। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘রূপকথা’ সিরিয়ালে এক দুপুরে বাঙালির অন্দরমহলে ঝড় তুলল শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-জুন মালিয়ার অন্তরঙ্গ শয্যাদৃশ্য। সে সময় এমন দৃশ্য যেন বাংলা টেলিভিশনকে সাবালক করেছিল।

জুন প্রথম মায়ের রোল করতে শুরু করেন ‘চারুলতা’ সিরিয়ালে। ‘সাঁঝের বাতি’র এক দশক আগে। তাও জুনের নাম শিরোনামে আজও ওঠে। জুন পাথ ব্রেকিং ছবি করেছেন বৌদির রোলে ‘তিন ইয়ারি কথা’। তার পরে আসে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’। জুনের আধখোলা ব্লাউজ পোস্টারে ছিল। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘পদক্ষেপ’, ‘২২ শ্রাবণ’, ‘দ্য বং কানেকশন’, গৌতম ঘোষের ‘যাত্রা’। এখনও মেগা সিরিয়ালে কি ‘সোয়েটার’ সিনেমায় মায়ের রোল করলেও, ব্যক্তিত্বসম্পন্না জননী জুন সেখানেও দারুণ স্টাইল আইকন। জুন মালিয়া যেন মুনমুন সেনের উত্তরসূরী। ‘নীল নির্জনে’তে মুন আর জুন দুজনেই ঐ পাখিটাকে খুঁজচ্ছিল। পাখিটা বারবার ডাকত মন কেমন করিয়ে। খোঁজা কি শেষ হল? উত্তর মেলেনি। কিন্তু পরে বোঝা গেছে, মুন নিজের জায়গাটা জুনকে দিয়ে দিয়েছেন যেন।

২০১৯ সাল ছেলে-মেয়েকে সাবালক এবং স্বাবলম্বী করেছেন জুন। দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। জুন তখন ৪৯। কিন্তু যিনি ছক ভাঙার জন্যই এসেছএন তিনি তো ছক ভাঙবেনই। ভাঙলেন। দীর্ঘ দিনের বয়ফ্রেন্ড সৌরভ চট্টোপাধ্যায়-কে বিয়ে করেন ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখে। ১৪ বছরের সম্পর্ক নাম পেল সম্পর্কের। তা এ নিয়ে সোশাল মিডিয়া থেকে সংবাদ মাধ্যমে হইচই কম হয়নি। কিন্তু জুন তাতে কোনও দিনই আমল দেননি। আপাতত অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতিতেও তিনি ব্যস্ত। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে জিতে ছক ভাঙার পরিপূর্ণতা তাঁর জীবনে।

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement