Advertisement

Baruni Mela 2025: বারুণী মেলায় লক্ষ লক্ষ মতুয়া ভক্তের মহামিলন কীসের টানে? কেন এই মেলা?

এই মিলন মেলা প্রথম শুরু হয় হরিচাঁদ ঠাকুরের তিরোধানের পর, ১৮৭৯ সালে। ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র যজ্ঞেশ্বরের (বৈষ্ণবদাসের পুত্র) হাত ধরে। অধুনা বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার পদ্মবিলা গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের এই জন্মোৎসব পালন করা শুরু করেন তিনি।

বারুণী মেলা ২০২৫বারুণী মেলা ২০২৫
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 28 Mar 2025,
  • अपडेटेड 1:39 PM IST
  • হরিচাঁদ ঠাকুরের এই জন্মোৎসব
  • ওড়াকান্দিতে কামনা সাগর খনন করেন
  • "হরি বলো হরিব লো" ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা

এ কোনও সাধারণ মেলা নয়, এ মেলা এক মহামিলন মেলা। এই পূণ‍্যভূমির স্পর্শ মতুয়াদের হৃদয়ে এনে দেয় এক নির্মল প্রশান্তি। সারা বছর কোটি কোটি মতুয়া ভক্ত অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন‍্য। এই দিনে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে ছুটে আসেন তাদের প্রাণের ঠাকুরের পূণ‍্যভূমিতে। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের উত্তরসূরীরা এই ঠাকুরনগরের মাটিতেই বসবাস করেন, সেই আবেগেই মতুয়ারা ছুটে আসেন এখানে। সাত দিনের এই মেলায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না। লক্ষ লক্ষ মতুয়া ভক্তরা ডংকা, কাঁসর, নিশান, সিংঘা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমান এই শ্রীধাম ঠাকুরনগরে। এই ক’দিন বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে হরিবোল, হরিবোল। হরিধ্বনিতে এলাকার চেহারাই আমূল বদলে যাই।

হরিচাঁদ ঠাকুরের এই জন্মোৎসব

এই মিলন মেলা প্রথম শুরু হয় হরিচাঁদ ঠাকুরের তিরোধানের পর, ১৮৭৯ সালে। ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র যজ্ঞেশ্বরের (বৈষ্ণবদাসের পুত্র) হাত ধরে। অধুনা বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার পদ্মবিলা গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের এই জন্মোৎসব পালন করা শুরু করেন তিনি। পরপর তিন বছর (১৮৭৯-১৮৮১ সন) তিনি পদ্মবিলাতে এই জন্মোৎসব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ‍্যপুত্র শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর তার খুল্লতাত যজ্ঞেশ্বরকে পদ্মবিলার অনুষ্ঠান বন্ধ করে যৌথভাবে ওড়াকান্দিতে এই জন্মোৎসব পালন করার আহ্বান জানান। তারপর ১৮৮২ সাল থেকে এই জন্মোৎসব ওড়াকান্দিতে শুরু হয়। ওড়াকান্দিতে প্রথম তিন বছর (১৮৮২-১৮৮৪ সন) অনাড়ম্বরভাবে এই জন্মোৎসব পালিত হয়েছিল। কিন্তু ১৮৮৫ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুর সকল মতুয়াদেরকে ডঙ্কা-কাসর-নিশান সহযোগে দলবল নিয়ে ওড়াকান্দিতে আসার আহ্বান জানান পূণ‍্যতিথিতে। সেই থেকে কোটি কোটি মতুয়া ভক্তরা দলবল নিয়ে ওড়াকান্দিতে আসতে শুরু করেন। অবশ্য তখনও পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মোৎসব উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

আরও পড়ুন

ওড়াকান্দিতে কামনা সাগর খনন করেন

এর বছর দশেক পর হরিচাঁদ ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত জগদীশ চক্রবর্তী মহাশয় গুরুচাঁদ ঠাকুরের অনুমতিক্রমে ওড়াকান্দিতে কামনা সাগর খনন করেন। উদ্দেশ্য, যাতে মতুয়া ভক্তরা ঠাকুরের পূণ‍্যতিথিতে এসে পূণ‍্যস্নান করতে পারেন। এবং স্নানের পর ভক্তরা ওই পুকুরে ডুব দিয়ে উঠে কামনা করতে পারে যে - "হে ঠাকুর আমি যেন তোমার দেখানো পথে চলতে পারি"। সেই থেকে শুরু হোলো ওড়াকান্দিতে বারুনী স্নান, আর এই স্নানকে কেন্দ্র করেই শুরু হলো বারুনী মেলা, যা আজও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে হয়ে চলেছে ওড়াকান্দিতে।

Advertisement
বারুণী মেলা পুণ্যস্নান

"হরি বলো হরিব লো" ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা করে ছুটে আসেন এই পূণ‍্যভূমিতে

তবে দেশভাগের সময়ে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গে চলে এলেও ঠাকুরনগরের এই বারুনীমেলা তখনও কিন্তু শুরু হয়নি। পরে, বিগত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি ওড়াকান্দির অনুকরণে এই বারুনী স্নান ও বারুনীমেলা ঠাকুরনগরে শুরু হয়। সেই থেকে ঠাকুরনগরেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতি বছর হয়ে চলেছে এই বারুনী স্নান ও বারুনী মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মতুয়া ভক্তরা ডঙ্কা নিশান কাসর শিঙ্গা সহযোগে "হরি বলো হরিব লো" ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা করে ছুটে আসেন এই পূণ‍্যভূমিতে।

আজ অগণিত মানুষের মতো আমিও এক অপার বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখি সেই লক্ষ মানুষের ঢল। আর অবাক বিস্ময়ে ভাবি - কি জানি কোন অদৃশ্য জাদুতে, নাকি কোনও এক অমোঘ টানে, যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে এগিয়ে চলেছে সেই অগণিত মানুষের ঢল। জানি রক্ত মাংসের ভগবান বাস্তবের মাটিতে নেমে না এলে আমরা এই অপরূপ দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম। তাই হয়তো আমাদের অন্তরাত্মা অস্ফুটেই যেন বলে ওঠে -- জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ।

একদা এই ভারতের নির্যাতিত নিপীড়িত সমাজের মুক্তি দিতে আলোর দিশা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহামানব হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুর, তাদের স্মরণে আজ তার ভক্তরা তাদের জীবনের সব জ্বালাযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ভক্তিভরে ডুব দিতে আসেন ঐ কামনা সাগরে, তাছাড়া তারা এই পূণ‍্যভূমির একটু ধূলো মেখে ধন‍্য হতে এখানে আসেন। কামনা সাগরের স্নান আর বারুনী মেলা এভাবেই হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলেছে জাতি-ধর্ম বর্ণ-লিঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে দূর থেকে বহু দূরে।

Read more!
Advertisement
Advertisement