রোজ রাতে জেগে ওঠে ছোট্ট মুকুল। সে ঘুমোতে পারে না। মাথায় সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যায়। ওর বাড়িটা ওর কাছে ভিনগ্রহের কিছু একটা। নিজের নয়। যে বাড়িতে সে এতদিন রয়েছে, মা-বাবার সঙ্গে প্রতি মুহূর্ত ভাগ করে নিয়েছে, সে বাড়ি তার নয়। তার মনে ফ্ল্যাশ বাল্বের মতো আসছে সোনার কেল্লা, যুদ্ধ, প্রচুর সম্পদ। ছোট্ট মুকুল বাস্তবে নেই। আশপাশে যা কিছু, সবই তার যেন অচেনা ঠেকছে। মুকুল তাঁর স্বপ্ন কাগজে আঁকে। মা-বাবা ভীত, ছেলের কী রোগ হল! মুকুলের এঁকেও শান্তি হয় না। সে যেতে চায় সেই কেল্লায়। সোনার কেল্লায়।
মুকুল একা নয়। এক ভাল ডাক্তার তাকে কথা দিয়েছেন, তিনি ওকে নিয়ে যাবেন সোনার কেল্লায়। মুকুল তৈরি। এই জন্মের পরিবার ছেড়ে সোনার কেল্লায় তার ফেলে আসা সোনালি দিনগুলো রয়েছে। সে ফিরে যেতে তৈরি। বেরিয়ে পড়ল মুকুল। রাস্তায় দেখা হল নানা চরিত্রের সঙ্গে। কেউ ভাল, কেউ দুষ্টু। তারা সবাই সোনার কেল্লার খোঁজ করছে।
এদিকে বাড়িতে, মুকুলের বাবা আরেকদলকে নিয়োগ করেছেন। তাঁরা মুকুলকে ফিরিয়ে আনবে, উদ্ধার করে আনবে। কিছু দুষ্টু লোক, যারা মুকুলের সঙ্গেই সোনার কেল্লার খোঁজ চালাচ্ছে, তাদের থেকে উদ্ধার করে আনবে।
কিন্তু কে ভাল আর কে দুষ্টু? সব কিছুই ধোঁয়াশা।
মুকুলকে আপনি দোষ দিতে পারবেন? সব মুকুলই সোনার কেল্লার চায়। সেই কেল্লা, যা তাকে রাতভর জাগিয়ে রাখে। হয়তো সেই সোনার কেল্লায়, সে হবে যুবরাজ।
অনেক ঘটনাবহুল সময়ের পরে, মুকুল খুঁজে পায় সোনার কেল্লা। কিন্তু এটা কী! সোনার কেল্লা একটি মিথ্যে কল্পনা, সব আঁকা মিথ্যে। সোনার কেল্লা মিথ্যে। 'আমি বাড়ি যাব,' বলল মুকুল।
'চলো মুকুল বাড়ি যাই, আমরা সবাই বাড়ি ফিরে যাই।'
ছোট্ট মুকুল হাসল। সে বাড়িতেই যেতে চায়।