নেপালের রাজার প্রস্তাব পেয়ে একটু চমকেই গিয়েছিলেন নেহরু। তবে জবাবে যা বলেছিলেন, তা বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে সেই ঘটনাটি নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল। আজ যখন নেপালে সরকার পতন হয়ে গেল, Gen Z বিক্ষোভকারীরা হিংসাত্মক আন্দোলন করে কেপি শর্মা ওলিকে দেশছাড়া করলেন, এই আবহে ৭৫ বছর আগের নেহরু-ত্রিভূবনের ঘটনাটি মনে করার অবকাশ থেকেই যায়।
১৭ বছরে ১৪ বার প্রধানমন্ত্রী বদল
ভারতের আরও তিন প্রতিবেশী দেশের মতো অবস্থা হল নেপালে। ২০২৪ সালে যেভাবে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় নেপালেও সরকার পড়ে গেল। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু। ২০০৬ সালে যখন নেপালে মাওবাদীরা সশস্ত্র আন্দোলনের পরে ক্ষমতায় এসেছিল, তখনও ভারতের এই পড়শি দেশটিতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করেছিল অনেকেই। কিন্তু নেপালবাসীকে হতাশই হতে হয়েছিল। শাসকদের আকণ্ঠ দুর্নীতিই কপালে জুটেছিল নেপালবাসীর। ১৭ বছরে ১৪ বার প্রধানমন্ত্রী বদল। ৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা তার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন।
আঁচ পেয়েছিলেন ত্রিভূবন বীর বিক্রম শাহ
১৯৫১ সালে যখন রাজা ত্রিভূবন বীর বিক্রম শাহ সম্ভবত নেপালের অস্থির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের আঁচ তখনই পেয়েছিলেন। যার নির্যাস, নেপালকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর লেখা বই 'দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স'-এ এই গোটা ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। বইটির ১১ নম্বর চ্যাপ্টারে 'মাই প্রাইম মিনিস্টার: ডিফারেন্ট স্টাইলস, ডিফারেন্ট টেম্পারমেন্ট' শীর্ষক অনুচ্ছেদে প্রণববাবু লিখছেন, 'প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীর কাজের নিজস্ব স্টাইল থাকে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কাজের স্টাইলের সঙ্গে নেহরুর কাজের স্টাইল একম আলাদা। বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের মতো ইস্যুগুলিতে, একই রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত হলেও,তাঁদের ধারণা ও চিন্তাভাবনা পৃথক হতেই পারে।'
নেহরু চাননি, নেপাল ভারতে জুড়ে যাক
প্রণববাবুর মতে, 'নেপালের ইস্যু নেহরু কূটনৈতিক ভাবে ট্যাকেল করেছিলেন। নেপালে রাণাদের রাজত্বকে রাজশাহিতে বদলে ফেলা হয়েছিল। নেহরু চেয়েছিলেন, নেপালে গণতান্ত্রিক শাসন হোক।'
তিনি লিখছেন, 'মজার বিষয় হল, নেপালের রাজা ত্রিভূবন বীর বিক্রম শাহ নেহরুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, নেপালকে ভারতের অংশ করে নিন। কিন্তু নেহরু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন, কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, নেপাল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীন থাকাই উচিত।' প্রণব মুখোপাধ্যায় নেহরুর কাজকে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, 'নেহরুর জায়গায় যদি ইন্দিরা হতেন, তাহলে এই সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। যেমন সিকিম ইস্যুতে করেছিলেন।' বস্তুত, ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই সিকিম ভারতের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে ভারতের ভূখণ্ড হয়েছিল।
১৮৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত নেপালে রাণাদের নিরঙ্কুশ শাসন ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা,১৯৪৯ সালে চিনে বিপ্লবের পরে নেপালের ঘুম ভেঙেছিল। ১৯৫১ সাল থেকে নেপালে ক্ষমতা বদল শুরু হয়ে যায়। রাজা ত্রিভূবন তড়িঘড়ি বিদেশ থেকে নেপাল পৌঁছন। রাজতন্ত্রের সাংবিধানিক প্রণালির মাধ্যমে গণতন্ত্র স্থাপনের কাজ শুরু করেন। সেই সময়ই নেপালকে ভারতের ভূখণ্ডের অংশ করার জন্য নেহরুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।