নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজও যাঁর অন্তর্ধান নিয়ে রহস্যের সমাধান হয়নি। ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটকে জন্মগ্রহণ গ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজির কর্মকাণ্ডের কথা লিখতে বসলে তা শেষ হবে না। তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বহু ঘটনাই মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার কাজ করে। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ তাঁকে ছোট থেকেই অনুপ্রাণিত করত। তবে দেশভক্তির পাশাপাশি নেতাজি ছিলেল মা কালীর একনিষ্ঠ ভক্ত। দেশত্যাগ করার আগে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মায়ের পায়ের ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
নেতাজি গবেষক ডঃ জয়ন্ত চৌধুরীর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মা কালী ছিলেন নেতাজির শক্তির উৎস। জীবনের প্রতি পর্বে নেতাজির আরাধ্য দেবী ছিলেন মা কালী। এমনকী নেতাজির এলগিন রোডের বাড়িতে তাঁর শোওয়ার ঘরের একদম কোণে মা কালীর এক রুদ্র মূর্তির ছবি বাঁধানো আছে। মা কালীর টানে নেতাজি প্রায়ই ছুটে যেতেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। দক্ষিণেশ্বর মন্দির ছিল নেতাজির খুব প্রিয় এক জায়গা। নৌকা করে বেলুড় মঠে যেতেন গঙ্গা পেরিয়ে। আর সেই সময় নৌকাতে গুনগুন করে শ্যামাসঙ্গীতও গাইতেন। নৌকায় তাঁর সঙ্গে থাকতেন প্রফুল্ল সরকারের মতো বিখ্যাত মানুষেরা।
১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাস। নেতাজি তখন এলগিন রোডের বাড়িতে গৃহবন্দী। বাড়ির উপর নজর রাখছেন প্রায় ১৫ জন ব্রিটিশ গোয়েন্দা। রয়েছে প্রায় ৭ টি স্তরের পুলিশি বেষ্টনী। এই পুলিশি বেষ্টনী ভেদ করে নেতাজি বেরিয়ে এসেছিলেন। মহানিষ্ক্রমণের ঠিক কয়েকদিন আগে তিনি গভীর রাতে ভাইজি ইলা বসুকে মায়ের পায়ের ফুল ও চরণামৃত নিতে পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। নেতাজি সংকল্প নিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর আশীর্বাদ না নিয়ে তিনি দেশত্যাগ করবেন না। এই ঘটনার কয়েকদিনের পরই দেশত্যাগ করেন নেতাজি। নেতাজি যেখানেই যেতেন তাঁর সঙ্গে থাকত গীতা, জপের মালা এবং মায়ের পায়ের শুকনো জবাফুল। শক্তি সঞ্চয় করতে মা কালীই ছিল নেতাজির ভরসা।
নেতাজি যখন কারাগারে বন্দি তখনও করতেন মা কালীর উপাসনা। চিঠির উপরে লিখতেন ‘কালী মাতা’। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্সি জেলে নেতাজি যে অনশন শুরু করেছিলেন- তা ছিল কালীপুজোর পবিত্র দিনে। আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করার সময়েও সিঙ্গাপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়মিত যেতেন নেতাজি। তাই দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি নেতাজি পেতেন মা কালীর থেকেই। আর এই শক্তি দিয়েই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধানতা সংগ্রামে।
তথ্য: নেতাজি গবেষক জয়ন্ত চৌধুরীর থেকে প্রাপ্ত