Advertisement

Pahalgum Ground Report Now: 'গোটা গ্রাম বসে গিয়েছে, বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে', পহেলগাঁওয়ে শুধুই আক্ষেপ

Pahalgum Ground Report Now: 'পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা ভালো চলছিল। এপ্রিল-মে-জুনে এমন ভিড় হতো যে মানুষকে ফিরিয়ে দিতে হতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলত। এখন অবস্থা আলাদা। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে, তা পর্যটকদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে। উঠতি ব্যবসা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এখন শুধু ভবিষ্যতের ওপরই ভরসা।'

'গোটা গ্রাম বসে গেছে, বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে', পহেলগাঁওয়ে শুধুই আক্ষেপ'গোটা গ্রাম বসে গেছে, বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে', পহেলগাঁওয়ে শুধুই আক্ষেপ
Aajtak Bangla
  • পহেলগাঁও,
  • 16 Aug 2025,
  • अपडेटेड 12:51 AM IST

Pahalgum Ground Report: পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার পর প্রায় চার মাস কেটে গিয়েছে। পর্যটনের পিক সিজন এসে চলে গিয়েছে, কিন্তু শ্রীনগরের লালচক আর ডাল লেক থেকে শুরু করে পহেলগাঁও পর্যন্ত নীরবতা। সামান্য যেটুকু চাকচিক্য আছে, তা স্থানীয় পর্যটকদের কারণে, যারা ভিড় কম দেখে ঘুরতে আসছে। বন্ধ থাকা বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট স্পট একে একে খুলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতে ফাঁকা ফাঁকাভাব আরও বেশি করে বোঝা যাচ্ছে।

'পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা ভালো চলছিল। এপ্রিল-মে-জুনে এমন ভিড় হতো যে মানুষকে ফিরিয়ে দিতে হতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলত। এখন অবস্থা আলাদা। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে, তা পর্যটকদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে। উঠতি ব্যবসা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এখন শুধু ভবিষ্যতের ওপরই ভরসা।'

কাশ্মীরে ঘোড়াওয়ালা থেকে শুরু করে হাউসবোট মালিক, সবার গলায় একটাই আক্ষেপ, 'আমাদের কী দোষ ছিল'? এই অনুভূতি জ্বর কমে যাওয়া স্বাদের মতো জিভে লেগে আছে।

আরও পড়ুন

পহেলগাঁও হামলার পরপরই ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানো হয়। ভারতীয় সেনা যৌথ অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায় এবং ধ্বংস করে। এরপর দুই সপ্তাহ আগে চালানো হয় ‘অপারেশন মহাদেব’, যেখানে সেই সন্ত্রাসীদের মেরে ফেলা হয় যারা বৈশ্বরণ ভ্যালিতে পর্যটকদের হত্যা করেছিল।

এ সময় অনেক কিছু ঘটেছে। পাহাড়-ঝিল-উপত্যকার কাশ্মীরে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খোলাখুলি কথা বলা হলো। মোমবাতি মিছিল বের করা হলো। কাঁদতে কাঁদতে ফুটপাথের দোকানদাররা পর্যটকদের ফিরে আসার অনুরোধ করল। প্রশাসনও নিরাপত্তার আশ্বাস দিল। তারপর? কাশ্মীর কি ছন্দে ফিরেছে, নাকি ৩০ বছরের পুরোনো নীরবতা ফিরে এসেছে?

হামলার ১০০ দিন পরে aajtak.in সেখানে পৌঁছে খতিয়ে দেখল, এই সময়ের মধ্যে কী বদলেছে, আর কী বাকি। পহেলগাঁওয়ে মার্কেট আর বেতাব ভ্যালিতে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, যাদের জীবিকা পুরোপুরি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। তারা এখনও সেই জায়গায়, সেই কাজের ওপর নির্ভর করে আছে। শুধু ব্যস্ততার জায়গায় এসেছে অপেক্ষা।

Advertisement

ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বেশিরভাগ চালক খালি বসে আছে। আমরা পৌঁছতেই আগে ভিড় জমল, তারপর ক্যামেরা দেখে সরে গেল। 'বিষয়টা বড় করে দেখানো হয়। আগেই অনেকবার জেরা হয়েছে। দরকারও ছিল। এত মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের পেটে লাথি পড়ছে,',নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্যাক্সি চালক বললেন।

১০০ দিনের বেশি হয়ে গেছে, এখনও কি একই অবস্থা?
'দেখছেন না? এখানে আপনারা ছাড়া আর কোনও বাইরের লোক নেই। রোটেশনে কাজ চলছে। আজ এই চালাবে, কাল ও। আগে প্রতিদিন ১৫০০ বা পিক সিজনে আরও বেশি আয় হতো। এখন কখনও ২০০-৩০০ আসে, কখনও কিছুই না।'

কিছুটা তো ভালো হয়েছে নিশ্চয়ই!
'এখনও না। তবে আশা আছে। শুনেছি সরকার পর্যটকদের ৭০০০ টাকা করে দিচ্ছে কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য। সব জায়গায় সেনা আর পুলিশ মোতায়েন আছে। যদি সব ঠিক থাকে, অগাস্ট শেষের দিকে পরিস্থিতি আগের মতো হবে।' এই "পর্যটনে গেলে টাকা", এ কথা ট্যাক্সি চালক থেকে শুরু করে জুতো পালিশ করা লোক পর্যন্ত বলছে। কেউ জানে না খবর কোথা থেকে এসেছে, কিন্তু সবাই শুনে শুনে বলে যাচ্ছে।

সরকারি ডেটা অবশ্য আশার কথা বলছে না। ২০২৪ সালে দেশি পর্যটক এসেছিল ২ কোটি ৩৫ লক্ষের বেশি, বিদেশি ৬০ হাজারের ওপরে। কিন্তু এই বছর জুন পর্যন্ত দেশি পর্যটক মাত্র ১ কোটির কাছাকাছি, অথচ পিক সিজন পেরিয়ে গিয়েছে।

হামলার পর নিরাপত্তার কারণে প্রায় ৫০টি জায়গা বন্ধ করা হয়েছিল। ধাপে ধাপে খোলা হচ্ছে, কিন্তু এখনও অনেক স্পট বন্ধ আছে এবং কবে খোলা হবে প্রশাসন জানায়নি। শ্রীনগর আর পহেলগাঁওয়ে ব্যস্ত জায়গায় এখন হয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান, নয়তো নীরবতা।

পহেলগাঁওতে ঘোড়াওয়ালাদের বড় স্ট্যান্ডে আগে ঘোড়ার জন্য ঠেলাঠেলি হতো। ইচ্ছে মতো দাম চাওয়া হতো। এখন দিনের অনেকটা কেটে গেলেও তারা গ্রাহকের অপেক্ষায়। কিছু লোক কথা বলতে রাজি হয়নি।

শেষে গুলাম নবি নামে এক যুবক বলল, 'আগে ভালো আয় হতো। এখন অনেক দিন গ্রাহক মেলে না। ঘোড়ার খাওয়ার খরচই দিনে ৩০০-৪০০ টাকা। তারা তো না খেতে চেয়ে বলতে পারে না। তাই ধার করে খাওয়াচ্ছি।' কীভাবে শোধ দেবে? প্রশ্ন শুনে সে শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে।

পহেলগাঁও বাজারে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো শাল বিক্রেতা মুর্তজার সঙ্গে। আগে লোকজন নিজেরাই দোকানে আসত, এখন তারা ডাকাডাকি করে গ্রাহক টানছে। 'আগে দিনে ১০-১৫ হাজার হতো। আমরা পাইকারি করি, তাই ঠিক আছি। কিন্তু বাকিদের অবস্থা খারাপ। যেসব হোটেলে আগে রুম পাওয়া যেত না, এখন খালি। অনেকে হোটেল লিজ নিয়েছিল সিজনে আয় করার জন্য, এখন লাখ লাখ ভাড়া দিয়ে ডিপ্রেশনে আছে।'

বাজারে সেনা আর বিএসএফ দাঁড়িয়ে। এক জওয়ান বলল, 'আগে ভিড়ে স্থির থাকা যেত না, এখন রাস্তা ফাঁকা। এতে বিপদও বাড়ে।'

১৫ অগাস্টের পর ট্যুরিজম বাড়ার আশা করা হচ্ছে
বেতাব ভ্যালিতে দেখা হলো শাহিদা নামের ১১ বছরের মেয়ের সঙ্গে, যে কবুতর নিয়ে ছবি তুলিয়ে টাকা রোজগার করে। জিজ্ঞেস করলাম, কবুতর ছেড়ে দাও না? সে বলল—'তাহলে কাক খেয়ে ফেলবে, এখন অন্তত বেঁচে আছে।' ফটোগ্রাফার আশিফ হুসেন আর মোহাম্মদ আলতাফ শেখ বললেন, 'আমাদের গোটা গ্রাম বসে গেছে, বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে। ঘোড়াওয়ালা, হোটেলওয়ালা, গাইড, সবাই ফাঁকা।'

শেষে ডাল লেকে হাউসবোট মালিক জামির হুসেন বাট জানালেন, আগে সিজনে এত কাজ থাকত যে সারা বছরের খরচ উঠে যেত। এখন দিনে মাত্র ১০টি শিকারায় যাত্রী ওঠে, রোটেশনে কাজ হচ্ছে।

তিনি বললেন, 'আমাদের কিছু আয় আছে চাষবাস থেকে, কিন্তু সঙ্গীদের কষ্ট দেখে খারাপ লাগে। আশা করি ঔজ্জ্বল্য ফিরবে।' ফিরতে ফিরতে ড্রাইভার বলল—'পতা নেহি, কাশ্মীরকে কিসকা বদদুয়া লাগ গেয়ি!'

 

Advertisement
Read more!
Advertisement
Advertisement