River Tourism In India: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে বাংলাদেশ হয়ে অসমের ডিব্রুগড় পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম বিলাসবহুল নদী ক্রুজ 'গঙ্গা বিলাস' উদ্বোধন করতে চলেছেন। বিদেশি পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে এই বিলাসবহুল ক্রুজ। ক্রুজটি ভারত ও বাংলাদেশের নদী পেরিয়ে ৫০ দিনে ৩,২০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে।
গঙ্গা বিলাস, ভারতের তৈরি প্রথম নদী ক্রুজ, বারাণসী এবং ডিব্রুগড়ের মধ্যে ৫০ দিনের মধ্যে মোট ৩,২০০ কিলোমিটার দূরত্ব কভার করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি ভিডিও-কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেন, তখন তিনি এই ক্রুজের কথা উল্লেখ করেছিলেন। পিএম মোদী বলেছিলেন, 'কাশী থেকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত এই ক্রুজ পর্যটন ভারতের ক্রুজ পর্যটনের ক্ষেত্রে একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হবে, এটি বিশ্বের একটি অনন্য ক্রুজ হবে। আমি পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে এর সুবিধা নিতে অনুরোধ করছি। এই ক্রুজটি ১৩ জানুয়ারি তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা শুরু করবে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ক্রুজ পরিষেবা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় গঙ্গার তীরে উপস্থিত থাকবেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই ক্রুজে পাঁচতারা হোটেলের মতো সুবিধা রয়েছে। ১৮টি স্যুট খুবই বিলাসবহুল। এটিতে রেস্তোরাঁ, স্পা এবং সানডেকও রয়েছে। রেস্তোরাঁটিতে কয়েকটি বুফে কাউন্টার রয়েছে যেখানে কন্টিনেন্টাল এবং ভারতীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
৩,২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করবে
বারাণসী থেকে ছাড়ার পরে, গঙ্গা বিলাস ক্রুজ ডিব্রুগড় পৌঁছনো পর্যন্ত প্রায়৫০ দিনে ৩,২০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে। এই ক্রুজ চলাকালীন ২৭টি নদী প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাবে, যা এর মধ্য দিয়ে ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রমাণিত হবে। বন্দর, নৌপরিবহন ও জলমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল গত বছরের নভেম্বরে একটি ট্যুইটের মাধ্যমে এই ক্রুজ সম্পর্কে তথ্য সবার সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন।
আপনি শুধু দেশেই নয় বিদেশেও ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাবেন
এখানে রিভার ক্রুজ যাত্রার সময় আপনি শুধু ভারতীয় নদীতেই ঘোরাফেরা করবে না, প্রতিবেশী বাংলাদেশের নদীতেও প্রবেশ করবেন ডিব্রুগড়ে যেতে। এর মাধ্যমে পর্যটকরা বিদেশ ভ্রমণের পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে
৫০ দিনের যাত্রা রয়েছে কলকাতাও
যাত্রার সময়, এই ক্রুজটি স্থাপত্য অনুসারে ৫০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করবে, যার মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও স্থান রয়েছে। শুধু তাই নয়, এটি সুন্দরবন এবং কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান সহ দেশের সবচেয়ে সুন্দর জাতীয় উদ্যান এবং অভয়ারণ্যগুলির মধ্য দিয়ে যাবে। এরমধ্যে ১২ দিন এই তরী থাকবে বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখানো হবে সেই শহরের পর্যটনকেন্দ্রগুলি। মুর্শিদাবাদ, মায়াপুর, কালনা, ব্যান্ডেল, চন্দননগর ও কলকাতার মতো শহরগুলিও দেখতে পাবেন পর্যটকরা। বর্ণনার জন্য রাখা হবে গাইড।
জিম, স্পা, কালচারাল ফাংশন সহ ৫ তারকা ভ্রমণ
এই ক্রুজটি আপনাকে বিশ্বের সেই পাঁচতারা রেটেড ক্রুজে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে, যা এখন পর্যন্ত আপনি শুধুমাত্র সিনেমায় দেখে রোমাঞ্চিত হতেন। পর্যটকদের ৫০ দিনের জন্য ক্রুজে ফিট রাখতে, এর জন্য একটি জিম করা হয়েছে এবং স্পার সুবিধাও রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিনোদনের জন্য সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওপেন এয়ার অবজারভেশন ডেক, ব্যক্তিগত বাটলার পরিষেবার মতো পাঁচতারকা সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে ৮০ জন পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন
গঙ্গাবিলাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, এই ক্রুজে ৮০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। সাধারণ কক্ষ ছাড়াও এর ওপর ১৮টি স্যুটও তৈরি করা হয়েছে, যার স্থাপত্য নকশা করা হয়েছে রাজকীয় কায়দায়। ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে যে অনন্য ডিজাইনের এই ক্রুজটি ভবিষ্যৎ দিকে তাকিয়েই তৈরি করা হয়েছে।
ক্রুজের সময়সূচি
আগে প্রকাশিত গঙ্গা বিলাস ক্রুজ টাইমটেবিল অনুসারে, এই ক্রুজটি ১৩ জানুয়ারী বারাণসী থেকে ছাড়ার পর অষ্টম দিনে পাটনা পৌঁছবে। এই সময় ক্রুজটি বক্সার, রামনগর এবং গাজিপুরের মধ্য দিয়ে যাবে। পাটনার পর এটি ফরাক্কা ও মুর্শিদাবাদ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছাবে ২০ তারিখ। এখান থেকে পরদিন ক্রুজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। এটি তারপর ১৫ দিন বাংলাদেশ সীমান্তে থাকবে। সেখান থেকে এটি গুয়াহাটি হয়ে ভারতীয় সীমান্তে ফিরে আসবে এবং তারপর শিবসাগর হয়ে ৫০ তম দিনে তার চূড়ান্ত গন্তব্য অর্থাৎ ডিব্রুগড়ে যাত্রা শেষ করবে। আধিকারিক জানিয়েছেন যে এই যাত্রাটি হবে একক ক্রুজে বিশ্বের দীর্ঘতম ভ্রমণ। এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিভার ক্রুজ।