কেউ বলেন সবজান্তা ত্রিকালদর্শী বাবা। কেউ বলেন বাবা নয়, জ্যাঠা, আধুনিক সিধু জ্যাঠা। এখনকার ফেলুদাদের অত টাইম নেই যে জ্যাঠার কাছে গিয়ে উইলিয়াম জেমস হার্শেলের গল্প শুনবে। বা মনের জানালা খোলা আছে কিনা তার পরীক্ষা দেবে। এখন সে মনের জানালা ধরে অন্য কেউ উঁকি দিয়ে গেছে। যার সামনে বইপত্তর সব ফেল পড়ে যাওয়ার জোগাড়। এলিফ্যান্ট টু আলপিন সব কিছু খোঁজার জন্য একটাই মন্ত্র, বাবা মন কী আঁখে খোল...।
তা এই মানস চক্ষু খুলে প্রতি বছর একটা নিপাতনে সিদ্ধ ভুল করে চলেছেন আমাদের সকলের ইষ্টদেবতা গুগল বাবা। প্রতি বছরই ৭ মে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন হিসাবে সারা বিশ্বের বাজারে ঢ্যারা পিটিয়ে লোক হাসাচ্ছেন সবজান্তা জ্যাঠা। সব লোক যদিও হাসে না। যাঁরা বঙ্গাব্দ আর ইংরেজি ক্যালেন্ডারের তফাত বোঝেন তাঁরা হাসেন। বাকি যত আমির ও ওমরা, হোমড়া-চোমড়া, সকলেরই ওই এক রা... শুভ জন্মদিন গুরুদেব। বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা লিখতে গিয়ে মনের দার্শনিককে টেনে বার করে আনেন।
ইংরেজি ছেড়ে যদি বাংলায় টাইপ করে পঁচিশে বৈশাখ লিখে গুগল বাবার দরবারে সার্চ করেন, তখন কিন্তু একেবারে ঠিকঠাক তথ্য তুলে ধরছেন তিনি। তফাত শুধু ভাষায়। আর তফাত দৃষ্টিভঙ্গিতে। বঙ্গাব্দের হিসেব আজ Bong-রা রাখেন না। সকলেই খ্রিষ্টাব্দই মনে রাখেন। খুব একটা দোষ দেওয়া যায়। ছোট থেকে যেমনটা শেখানো হবে তেমনটাই তো শিখবেন।
ইংরেজি তারিখের মাঝেও ইস্কুলে কিন্তু এই বিশেষ বাংলা তারিখ গুলো জ্বলজ্বল করত। যখন গানে, কবিতায়, নাটকে প্রকৃত অর্থে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হত গুরুদেবের চরণে। গত ২ বছর তো সেখানেও বড় ফাঁড়া। করোনার দাপটে সোশাল মিডিয়া সর্বস্ব মানুষ এখন আবার ঘরকুনো। মানে, একে হন, তার পর পেয়েছে রামের আজ্ঞা। সব মিলিয়ে সোশাল-স্মরণ আর গুগল বাবার আশীর্বাদে অংরেজোকে নকসে কদম পর... ৭ মে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করছেন।
তা করুন। আপনাদের আর গুগলের ৭ মে থাক। আমাদের পঁচিশে বৈশাখ আছে। এই অধম বাঙালির তরফ থেকে ছোট্ট একটু ঝামা।