২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর। লাগাতার আন্দোলন, বাধার পর সিঙ্গুর থেকে টাটা ন্যানো প্রকল্প সরানোর ঘোষণা করেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা। এরপর অনেক জল গড়িয়েছে বাংলার বুকে। বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী! টাটা মুখ ফেরানোর পর বাংলায় না এসেছে বাণিজ্য, না লক্ষ্মী। এরপর বার কয়েক বাংলায় শিল্প ফেরানোর আশা জাগান রতন টাটা। ৯ অক্টোবর, ২০২৪-এ সেই আশার দীপও নিভে যায়। প্রয়াণ হয় রতন টাটার। সময়টা সেই অক্টোবর।
২০০৬ সালে 'ন্যানো' কারখানার ঘোষণা টাটার
২০০৬ সালের ১৮ মে রতন টাটা হুগলির সিঙ্গুরে ‘ন্যানো’ গাড়ির কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করেন। এরপরই শুরু হয় জমি আন্দোলন। ৯৯৭ একর জমির মধ্যে ৪০০ একর জমি নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। জোরপূর্বক জমি দখলের দাবিতে সিঙ্গুরে আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে বাংলায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। অন্যদিকে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লাগাতার আন্দোলন।
সিঙ্গুর থেকে ন্যানো প্রকল্প সরানোর পর কী বলেন রতন টাটা?
ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন রতন টাটা বলেছিলেন, "আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালেও মাথা সরাব না।" দু'বছর টানাপোড়েনের পর বিদায়বেলায় তিনি বলেন, "দু’বছর আগে আমি বলেছিলাম, কেউ যদি আমার মাথায় বন্দুক ঠেকায়, তাহলেও আমি মাথা সরাব না। আমি মনে করি ট্রিগারেই চাপটা দিয়েছেন মিস ব্যানার্জি।"
তৎকালীন সরকার (বামফ্রন্ট) প্রসঙ্গে টাটা বলেন, "আমরা যে দু’বছর কাজ করেছি, সরকার আমাদের যে সমর্থন দিয়েছে এবং তারা যে সুবিধা দিয়েছে তার জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। দুর্ভাগ্যবশত আমরা বিরোধীদলগুলির আন্দোলন এবং আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়েছি। যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।" এরপরই বাংলা থেকে বিদায় নেয় ন্যানো প্রকল্প। পড়েই থাকে সিঙ্গুরের জমি। কঙ্কালসার চেহারা নিয়ে আজও পড়ে রয়েছে সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর জমি।
প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার পর দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন রতন টাটা। বলেছিলেন, "আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের অনেকের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত এই প্রকল্পে যাঁরা শুরু থেকে কাজ করেছেন, তাঁদের জন্য এই সিদ্ধান্ত আরও হতাশাজনক। তবুও মনে করি, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আমাদের বিকল্প কিছু করার নেই।"
এরপর কয়েকবার ফের বাংলামুখী হওয়ার পরিকল্পনা করলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। অবশএষে ২০২৪-এর ৯ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত কারণে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।