Advertisement

Rishi Kapoor: ববি-র প্রিমিয়ারে সত্যজিতের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন ঋষি কাপুর

ছবির পরিচালক রাজ কাপুর (Raj Kapoor) বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ করেছিলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়-কে (Satyajit Ray)। অত ভিড়ের মাঝেও মেজো ছেলে ঋষিকে (Rishi Kapoor) বলেন রাজ কাপুর, 'ইনি আমাদের সকলের গুরু। প্রণাম করো।' দীর্ঘদেহী সত্যজিৎ তাতে খানিকটা বিব্রতই হয়েছিলেন। তবে মাথায় দিয়ে আশীর্বাদ করেন ঋষিকে।

স্বর্ণ মন্দিরে ঋষি কাপুর
রজত কর্মকার
  • কলকাতা/মুম্বই,
  • 30 Apr 2021,
  • अपडेटेड 12:08 PM IST
  • সত্যজিৎ রায়ের প্রতি কাপুর পরিবারের বিরাট শ্রদ্ধা ছিল।
  • বিশেষত এ কারণেই বাংলা সিনেমা এবং তারকাদের সঙ্গে ভালো সখ্যতা ছিল ঋষি কাপুরের।
  • তাঁর অন্যতম প্রিয় ছবি ছিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'ক্লাসিক' নায়ক। উত্তম কুমারের অভিনয় দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

মেট্রো সিনেমার (Metro Cinema) লবিতে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। তখনও সেই পুরনো খোল-নলচে নিয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেট্রো। ১৯৭৩ সাল। ববি (Boby) ছবির প্রিমিয়ারে হাজির সিনমার কলাকুশলী এবং অভিনেতারা। আমন্ত্রিত টালিগঞ্জের তাবড় অভিনেতা এবং সিনেমা ব্যক্তিত্ব। ছবির পরিচালক রাজ কাপুর (Raj Kapoor) বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ করেছিলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়-কে (Satyajit Ray)। অত ভিড়ের মাঝেও মেজো ছেলে ঋষিকে (Rishi Kapoor) বলেন রাজ কাপুর, 'ইনি আমাদের সকলের গুরু। প্রণাম করো।' দীর্ঘদেহী সত্যজিৎ তাতে খানিকটা বিব্রতই হয়েছিলেন। তবে মাথায় দিয়ে আশীর্বাদ করেন ঋষিকে।

সত্যজিৎ রায়ের প্রতি কাপুর পরিবারের বিরাট শ্রদ্ধা ছিল। বিশেষত এ ক্ষেত্রে শশী কাপুরের (Shashi Kapoor) নাম উল্লেখ করতে হয়। তিনি এক প্রকার নাছোড়বান্দা হয়ে সত্যজিতের পিছনে পড়েছিলেন যাতে হিন্দি ফেলুদার (Feluda) চরিত্রে তিনি অভিনয় করতে পারেন। বিশেষত এ কারণেই বাংলা সিনেমা এবং তারকাদের সঙ্গে ভালো সখ্যতা ছিল ঋষি কাপুরের। তাঁর অন্যতম প্রিয় ছবি ছিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'ক্লাসিক' নায়ক। উত্তম কুমারের অভিনয় দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। সিনেমাটি বার বার দেখতেন ঋষি। শেখার চেষ্টা করতেন।

ছোটবেলা থেকে গোলগাল ঋষি খেতে বড় ভালোবাসতেন। এ কারণেই সম্ভবত শ্রী ৪২০ ছবিতে শিশু চরিত্রে তাঁকে শুধুমাত্র চকোলেটের লোভ দেখিয়ে অভিনয় করিয়ে নিয়েছিলেন নার্গিস। অনেকেই জানেন না যে প্রথমবার এই ছবিতেই মুখ দেখিয়েছিলেন, মেরা নাম জোকারে নয়। যদিও মেরা নাম জোকার সিনেমায় অভিনয় করার জন্য শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋষি কাপুর। ছবি একেবারেই চলেনি। তবে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল রাশিয়ায়। কারণ ছবিতে রাশিয়ার তৎকালীন বেশ কয়েকজন নামী শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন। এ জন্য আজ পর্যন্ত রাজ কাপুরের জন্মদিনে রাশিয়ান নেভি স্কুইড এবং স্যামন মাছ পাঠায়। খাদ্যরসিক পরিবারের ইতিহাস রাশিয়াতেও বিখ্যাত হয়েছিল। আরও একটি বিষয় অনেকেই জানেন না মেরা নাম জোকার সিনেমার প্রিমিয়ার শো হয়েছিল কলকাতার লোটাস সিনেমায়। বাবার সঙ্গে এসেছিলেন ঋষিও। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আগে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ডে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋষি। সেটাই ছিল তাঁর পাওয়া প্রথম পুরস্কার। কাপুর পরিবার যেমন বাংলা ভালোবেসেছেন, তেমন বাংলা ভালোবাসা ফিরিয়েও দিয়েছে। সারা দেশের মধ্যে ববি সবচেয়ে বেশি চলেছে এ রাজ্যে।

Advertisement

বলিউডের ফার্স্ট ফ্যামিলি, তার আবার তিন পুরুষের সিনেমার ঐতিহ্য। সব মিলিয়ে ঋষি কাপুর খানিকটা ফিল্মি শিক্ষা নিয়েই অভিনয়ে পা রেখেছিলেন। কিন্তু ববির পর রোম্যান্টিক হিরো বা চকোলেট বয় ইমেজ থেকে বেরতে খুব অসুবিধা হয়েছিল। অনেকে বলেন, ছেলেকে লঞ্চ করবেন বলেই রাজ কাপুর ববি তৈরি করেছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫১টি সিনেমায় একক হিরো হিসাবে অভিনয় করেছএন। বক্স অফিসের খাতা বলছে, এর মধ্যে মাত্র ১১টি সিনেমা বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়েছিল। তুলনায় মাল্টি স্টারকাস্ট বা একাধিক হিরোর সঙ্গে মুক্তি পাওয়া সিনেমা বেশি হিট করেছে। তাঁর কৌলিণ্য, বংশ মর্যাদা কিন্তু ঋষিকে বাঁচাতে পারেনি এ ক্ষেত্রে।

এক সময় একের পর এক সিনেমা ফ্লপ হয়েছে ঋষির। সে সময় ডুবে গিয়েছিলেন মদ্যপানে। খাদ্যরসিক কাপুর পরিবারের কাছে মদ্যপান ছিল অভিশাপের মতো। রাজ-শাম্মী-শশী কেউ এর খপ্পড় থেকে বেরতে পারেননি। মদ্যপানের কারণে মধ্য তিরিশে নায়কের অভিনয় করা ছেড়েছিলেন শাম্মী। শরীর এত ভারী হয়ে গিয়েছিল তাঁর। শশী কাপুর মদ্যপানে আসক্ত হন স্ত্রী জেনিফারের মৃত্যুর পর। একই ভাবে কেরিয়ারের টানাপোড়েন ঋষিকে ঠেলেছিল মদ্যপানের দিকে। যা নিয়ে নীতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। প্রায় দুবার ঘর ভাঙতে ভাঙতে বাঁচে। এক সময় ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়িও ছেড়েছিলেন নীতু (Neetu Singh)। পরে অবশ্য মিটমাট হয়।

ছোটবেলার স্মৃতিকথায় ঋষি জানিয়েছিলেন রাজ কাপুরের মদ্যপানের ঘটনা। নার্গিসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মদ্যপান চরম মাত্রায় পৌঁছায়। রোজ রাতে গাড়ি থামার শব্দ এবং তার পর রাজ কাপুরের টলোমলো পদক্ষেপে ঘরে ঢোকা। তার পর মায়ের সঙ্গে অশান্তি। এটা ছিল প্রায় রোজকার ঘটনা। তিনি নিজে কিন্তু এমনটা চাননি কোনও দিন। তবে না চাইলে কী হবে, অভিশাপ বলে কথা! মদ্যপান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন শতাব্দীতে নতুন রূপে ঋষিকাপুরকে দেখতে পাই আমরা। নায়কের খোলস ছেড়ে চরিত্রাভিনেতা ঋষি ধরা দেন রুপোলি পর্দায়।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু অভিশাপের একটা সাইড এফেক্ট আছে। সেটা কিন্তু এড়ানো মুশকিল। ক্যানসার তখন খানিকটা ভালো অবস্থায়। খাদ্য রসিক ঋষি দিল্লিতে একটি বিয়ের ফাংকশনে জোর করে গেলেন। বন্ধু এবং সহকর্মী রাকেশ রোশন তাঁকে যেতে বারণও করেছিলেন। ক্যানসারের যন্ত্রণা কী, তা রাকেশ নিজেও জানেন। কিন্তু কথা শোনেননি ঋষি। সেখান থেকেই ক্যানসার রিল্যাপ্স করে। শেষে মারণ রোগেই মাত্র ৬৭-তে চলে গেলেন ঋষি কাপুর। বড় অসময়ে। রজনী তখনও বাকি ছিল... আরও অনেক কিছু দিতে বাকি ছিল...। কিন্তু রাতজাগা পাখির ডাক উপেক্ষা করেই চলে গেলেন বলিউডের আদরের চিন্টু।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement