চাঁদে এবার আরও সহজ হতে পারে মানুষের বসবাস। কারণ যে কোনও জায়গায় শহর গড়তে গেলে প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অক্সিজেন সবার সবার আগে প্রয়োজন হয়। তবে যদি গাছ না থাকে তাহলে অক্সিজেন মিলবে না। তাই চাঁদকে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তুলতে বিজ্ঞানীদের যুগের পর যুগ ধরে চলা গবেষণার সফলতার আরও এক ধাপ অগ্রসর হল।
চাঁদের মাটিতে প্রথমবারের মতো উদ্ভিদ জন্মাতে সফল করলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি, ইনস্টিটিউট অফ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের দেওয়া এই ২০২১-র ছবিতে, একজন গবেষক ফ্ল্যার গেইনসভিলের একটি পরীক্ষাগারে জেনেটিক বিশ্লেষণের জন্য একটি শিশিতে চন্দ্রের মাটি পরীক্ষার সময় জন্মানো একটি থ্যাল ক্রেস উদ্ভিদ রেখেছেন। (এপি ফটো)
আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসার অ্যাপোলো মিশনের সময় চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল মোট ৩৮২ কিলোর পাথর। নাসা সেই পাথরগুলি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতরণ করে। কিন্তু কত বছরে এই মাটি শেষ হবে তা জানা ছিল না। আর্টেমিস মিশনের সময় আমেরিকা চাঁদ থেকে আরও মাটি আনার পরিকল্পনা করছে বলে আশা করা হচ্ছে।
চাঁদের মাটি থেকে যে গাছ জন্মেছে তা দু'টি ভ্যাকুয়াম সিলযুক্ত পাত্রে চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল। তাদের নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে কমিউনিকেশনস বায়োলজি জার্নালে। যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে চাঁদের মাটিতে প্রথমবারের মতো ফুলের চারা জন্মেছে। যদিও এই মাটিতে পৃথিবীর জল-বাতাস মিশে গিয়েছিল।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনা-লিসা পল বলেন, এর আগেও চাঁদের মাটিতে গাছপালা জন্মেছে। কিন্তু তারা সেভাবে বড় হয়নি। চাঁদের মাটিতে কোনো রোগজীবাণু নেই। এই ধরনের অন্য কোন পদার্থ নেই...যা মাটির প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি করে। আগে যে গাছপালা জন্মেছিল, তাতে শুধু চাঁদের মাটি ছিটিয়ে দেওয়া হত। এবার শুধু চাঁদের মাটিতেই গাছপালা জন্মেছে।
এনা-লিসা পল এবং প্রফেসর রবার্ট ফারল ১২ গ্রাম চাঁদের মাটি খুঁজে পেয়েছেন। ১১ বছর একটানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, পল এবং ফারল এই সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁরা অ্যাপোলো ১১, ১২ এবং ১৭ মিশন থেকে আনা মাটি খুঁজে পান। কিন্তু এত অল্প পরিমাণ মাটিতে ফসল ফলানো ছিল খুবই কঠিন কাজ। তবে দু'জনেই এই সাফল্য অর্জন করেন।
পল এবং ফারল একসঙ্গে মাটিকে চারটি ভিন্ন অংশে ভাগ করেছেন। এতে জল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ তরল ঢেলে দেন। যা চাঁদের মাটিতে হয় না। এর পরে, তাদের মধ্যে অ্যারাবিডোপসিসের বীজ দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর সেই মাটিতে বীজ গজাতে থাকে। এত অল্প মাটিতেও বীজগাছ হয়ে ওঠা সহজ কাজ নয়।