Advertisement

Semaphore Towers: ২০০ বছরের পুরনো এই টাওয়ারেই বেঁচে যোগাযোগের এক টুকরো ইতিহাস!

Semaphore Towers: বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের সেমাফোর টাওয়ারগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আজও অনেকেই জানেন না। তাই অবহেলায় ২০০ বছরের প্রাচীন টাওয়ারগুলিরই বেশিরভাগেরই অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থা। হয়তো এ ভাবেই একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ২০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়।

হুগলির মান্দারণ দিলাকাশের সেমাফোর টাওয়ার। ছবিটি তথাগত নিয়োগীর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া হয়েছে।হুগলির মান্দারণ দিলাকাশের সেমাফোর টাওয়ার। ছবিটি তথাগত নিয়োগীর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া হয়েছে।
সুদীপ দে
  • কলকাতা,
  • 16 May 2022,
  • अपडेटेड 11:33 AM IST
  • বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের সেমাফোর টাওয়ারগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আজও অনেকেই জানেন না।
  • তাই অবহেলায় ২০০ বছরের প্রাচীন টাওয়ারগুলিরই বেশিরভাগেরই অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থা।

আজকের দিনে যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতীতে আমাদের ট্রাঙ্ক কল ছিল - ব্যক্তিগত ব্যবহার এবং ব্যবসার জন্য দীর্ঘ দূরত্বের ফোন কল। গত দুই দশকে মোবাইল ফোন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ইন্টারনেটও তাই। বহু শতাব্দী আগে আদি ও মধ্যযুগে বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান হতো ঘোড়ার সওয়ারদের মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ফোনি এক্সপ্রেসের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বার্তা এবং চিঠি পাঠানো হতো। ভারতে প্রাথমিক বসতি স্থাপনকারী ইংরেজরা কীভাবে যোগাযোগ পরিচালনা করেছিল? টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের আগে কীভাবে তারা জরুরি বার্তা প্রেরণ করতেন?

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশে ব্যস্ত রাস্তা ও রেলপথের ধারে ঘন জঙ্গলে, পাহাড়ের চূড়ায়, এবং বারাণসীর (উত্তর প্রদেশ) কাছে চুনার পর্যন্ত মানুষের বাসস্থানের বাইরে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত লম্বা টাওয়ারগুলি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামীণ এবং আধা গ্রামীণ ল্যান্ডস্কেপে, এই লম্বা টাওয়ারগুলি যা সেন্টিনেলের মতো অদ্ভুত দেখতে। এই রহস্যময় টাওয়ারগুলির বয়স ২০০ বছরেরও বেশি! তবে তাদের টাওয়ারগুলির বেশিরভাগই অবহেলা, অযত্নে আর লুটপাটের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আজ ভেঙে পড়ার পথে। বেশ কিছু টাওয়ার সময়ের নিয়মে আবহাওয়ার প্রকোপে ভেঙে গিয়েছে আগেই। 

অনেকেই এগুলিকে 'ওয়াচ টাওয়ার' বলে ভুল করেন। কিন্তু  এগুলি কোনও ওয়াচ টাওয়ার নয়, এক একটা Semaphore Tower। টেলিগ্রাম আবিষ্কারের  আগে এই টাওয়ারগুলির মাধ্যমেই জরুরি তথ্য / সংবাদ পাঠানো হতোl ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (East India Company) হাত ধরে ১৮১৬ সাল থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যে জরুরি যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল Semaphore Tower।

আরও পড়ুন

এই ধরনের টেলিগ্রাফিক সিস্টেম (ভিজ্যুয়াল বা অপটিক্যাল টেলিগ্রাফ) শাটার সহ টাওয়ার ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল সিগন্যালের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করে। এনকোড করা তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে সংকেত পাঠানো হয়।

শোনা যায়, ১৭৯০ সাল নাদাগ নেপোলিয়ন ফ্রান্সে প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন, এটি ভিজ্যুয়াল সিগন্যালের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার একটি সিস্টেম, পিভোটিং শাটার সহ টাওয়ার ব্যবহার করে, যাকে ব্লেড বা প্যাডেলও বলা হয়। এইভাবে কাছাকাছি টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা সংকেত টেলিস্কোপের মাধ্যমে কাছের টাওয়ারে প্রেরণ করা হবে। ফরাসি বিপ্লবে এই ব্যবস্থার শিকড় ছিল এবং ফরাসি বিপ্লবী সেনাবাহিনী জরুরি বার্তা প্রেরণের জন্য একটি ভিজ্যুয়াল সিস্টেম চেয়েছিল। ক্লদ চ্যাপের উদ্ভাবিত বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর প্রয়োজন মেটাতে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং তার সামরিক অভিযানের সময় একটি বহনযোগ্য সেমাফোর টাওয়ার তৈরি করিয়েছিলেন।

Advertisement

শোনা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (East India Company) আমলে এই একই কৌশল কাজে লাগিয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে চুনার (উত্তর প্রদেশ) পর্যন্ত মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। ইংরেজ কোম্পানির কাছে টাওয়ারগুলি কলকাতা থেকে নাগপুর হয়ে বোম্বে (মুম্বাই) পর্যন্ত প্রসারিত করার প্রস্তাব ছিল। তবে আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থাটি বাতিল হয়ে যায়।

ক্লাউড চ্যাপের ১৭৯৪ সালের আবিষ্কারটি ১৮১৩ সালে ইংল্যান্ডে বাস্তবায়িত হয়েছিল। ১৮১৬-১৮৩০ সালের মধ্যে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে টাওয়ারগুলির সিরিজ নির্মাণের সঙ্গে সেমাফোর সিস্টেম চালু করেছিল। এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বারাণসীর চুনার দুর্গ (বেনারস) একটি সরল রেখা হিসাবে সারিবদ্ধ ছিল। সংযোগ বজায় রাখার জন্য ৮০ থেকে ৯০ ফুট লম্বা টাওয়ারগুলির মধ্যে ৯.৫ কিলোমিটার থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্ব ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে অপটিক্যাল যোগাযোগের এই ব্যবস্থাটি কার্যকর করা হয়নি। এই অপটিক্যাল টেলিগ্রাফ (Optical Telegraph) ব্যবস্থা ১৮৫৪ সালে ভারতে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটি ব্যবহার হ্রাস পায়, পরে বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের সেমাফোর টাওয়ারগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আজও অনেকেই জানেন না। তাই অবহেলায় ২০০ বছরের প্রাচীন টাওয়ারগুলিরই বেশিরভাগেরই অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থা। হয়তো এ ভাবেই একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ২০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়। ব্যারাকপুরে ট্রাঙ্ক রোড, ওন্দা, গোঘাট, হুগলির মান্দারণ দিলাকাশ, মাহেশের খটির বাজার, হাওড়া আন্দুলে এখনও টিকে আছে এমনই কয়েকটি সেমাফোর টাওয়ার। মজার বিষয় হল, ২০০ বছরের এই প্রাচীন জরা-জীর্ণ সেমাফোর টাওয়ারগুলি আজও আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)-র সুরক্ষা পরিকাঠামোর অন্তর্গত নয়। এগুলির সুরক্ষার জন্য সরকারি ভাবে লিখিত আবেদন জমা পড়লে তবে এগুলির দায়িত্ব নেওয়া বা সুরক্ষার বিষয়টি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের আওতায় আসতে পারে।

Read more!
Advertisement
Advertisement