Advertisement

ঘুমোতে পারি, কিন্তু কেন ঘুমোব!

এঁরা ঘুমের সুযোগ পান না এ কথা তাঁদের অতি বড় বন্ধু বা সমর্থকও বলতে পারবেন না। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এঁরা তার সদ্ব্যবহার বা অসদ্ব্যবহার করেন না। মহান চিন্তাভাবনা! এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সদ্য প্রেমে পড়া যুগল, রোগী, প্যাঁচা, সোশাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট প্রমুখ। এঁরা এত বড় ‘আত্মত্যাগ’ কেন করেন তার সম্ভাব্য কিছু কারণ একটু দেখে নেওয়া যাক।

প্রতীকী ছবিপ্রতীকী ছবি
রজত কর্মকার
  • কলকাতা,
  • 19 Mar 2021,
  • अपडेटेड 2:12 PM IST
  • এঁরা ঘুমের সুযোগ পান না এ কথা তাঁদের অতি বড় বন্ধু বা সমর্থকও বলতে পারবেন না। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এঁরা তার সদ্ব্যবহার বা অসদ্ব্যবহার করেন না
  • এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সদ্য প্রেমে পড়া যুগল, রোগী, প্যাঁচা, সোশাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট প্রমুখ

১৯ মার্চ, বিশ্ব ঘুম দিবস। ঘুম বিলাসিদের দিন।

দেশে এমন মানুষের অভাব নেই যাঁদের কাছে ঘুম খুব প্রিয়। এর প্রধানত ২টি কারণ রয়েছে বলে আমার পর্যবেক্ষণ বা বিশ্বাস। এক, যাঁরা ঘুমোনোর সুযোগ খুব কম পান। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি, সংবাদসংস্থা, নিরাপত্তারক্ষী ইত্যাদি পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁরা। কারণ বলা অনাবশ্যক তবুও সকলের সুবিধার জন্য বলে দেওয়া ভালো। এ সব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কাজ রাতেই হয়ে থাকে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও ঘুমোনোর উপায় নেই।

দ্বিতীয় কারণটা বেশ ইন্টেরেস্টিং। এঁরা ঘুমের সুযোগ পান না এ কথা তাঁদের অতি বড় বন্ধু বা সমর্থকও বলতে পারবেন না। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এঁরা তার সদ্ব্যবহার বা অসদ্ব্যবহার করেন না। মহান চিন্তাভাবনা! এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সদ্য প্রেমে পড়া যুগল, রোগী, প্যাঁচা, সোশাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট প্রমুখ। এঁরা এত বড় ‘আত্মত্যাগ’ কেন করেন তার সম্ভাব্য কিছু কারণ একটু দেখে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন

পিরিতি কাঁঠালের আঠা
সদ্য প্রেমে পড়া ব্যক্তিরা শুধু রাতই জাগেন না, তাঁদের কানের সমস্যাও দেখা দেয়। বেচারা। অনেকে এত ফোন করেন যে তাঁদের কানে ফোঁড়া পর্যন্ত হয়। কিন্তু সে সব নিয়ে তখন ভাবার সময় আর কার থাকে বলুন। প্রেম তো বুক এফোড়-ওফোড় করা তির মেরেছে। সেই ব্যথার কাছে ও সব ফোঁড়া-টোড়া নেহাতই মামুলি ব্যাপার। ওই গানটা শোনেননি, ‘এ ব্যথা কী যে ব্যথা, বোঝে কি আনজনে...।’

এঁদের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। চাকুরিজীবী, মধ্যবয়স্ক, বিয়ে পাগল, ছাত্রছাত্রী এবং স্বভাব প্রেমিক বা প্রেমিকা। চাকুরিজীবী এবং মধ্যবয়স্কদের ক্ষেত্রে চোখের চারপাশে কালো একটা গোল্লা লক্ষ্য করা যাবে। রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললে যা হয় আর কী! যার গোল্লার রং যত বেশি গাঢ়, তাঁদের প্রেম তত বেশি ঘন। তবে মধ্যবয়স্কদের ক্ষেত্রে চোখের আশপাশ ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন স্থানে কালো গোল্লা দেখার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেকে তা লুকনোর জন্য প্রবল গরমেও কপাল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ঢেকে বেরোতে পারেন। মোদ্দা কথা প্রেমে যদি একটু লুকোচুরি না হল, তা হলে আর প্রেম কী!

Advertisement

বিয়ে পাগল
যাঁরা বিয়ে পাগল তাঁরা আবার উদাহরণ দিতে ব্যস্ত থাকেন দিনের বেশ কিছুটা সময়। প্রায়শই তাঁদের বলতে শোনা যায়, এই তো সে দিন অমুকের বিয়ে হল। ও আমার চেয়ে ৩ বছরের ছোট। বা আমার বন্ধুর ভাইয়েরও বিয়ে হয়ে গেল। বলেই চারপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নেন, কেউ গুরুত্ব দিয়ে তা শুনল কিনা। মূলত চিন্তায় এঁদের রাতে ঘুম হয় না। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে এঁরা সাত ‘পাঁকের’ চক্কর ছেড়ে বেরতে পারেন না। একদিন বয়স বাড়লেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার গালের চামড়ায় হাত বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন, কতটা ভাঁজ পড়ল। পুরুষদের মধ্যে অনেকের চিন্তায় চুল পড়ে যায়। এঁদের ফোন ঘাঁটলে প্রচুর টাকের সেলফি পাওয়া যেতে পারে। মাথায় টাকের ম্যাপ কতটা সাম্রাজ্য বিস্তার করল সেটা ভাবতে গিয়েও আরও এক বিপত্তি। ফলে ঘুম না হওয়াই স্বাভাবিক।

ওরে কচি, ওরে আমার কাঁচা
আঠারো বছর বয়সে প্রেমে পড়বে না তো আটচল্লিশে গিয়ে পড়বে? বয়সটাই প্রেম করার। ওদের দোষ নেই, দোষটা বয়সের। তবে এঁদের রাত জাগা বুঝতে হলে সক্কাল সক্কাল কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করুন। সাড়ে চুয়াত্তরটা অজুহাত দিয়ে প্ল্যান থেকে নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা করবেন এঁরা। হঠাৎ হঠাৎ সক্কলের চোখের আড়ালে গিয়ে গুন গুন করে ২টি কথা বলেই আবার সকলের সামনে চলে আসবেন। ২৩ সেকেন্ড অন্তর অন্তর হোয়াটসঅ্যাপের রিপ্লাই দিতে গিয়ে সুপারফাস্ট মোশনে আঙুল চালাবেন।

স্বভাব প্রেমিক
স্বভাব প্রেমিক বা প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু গোলমেলে। কেউ সাড়ে তিন দিন হেসে কথা বললেন বা একটু মন দিয়ে তাঁর কথা শুনলেই এঁরা বাতাস থেকে প্রেম টেনে ধরেন। বেশ কিছুদিন মল্লযুদ্ধ চলার পর চোখের কোলে জল বা পেটে রঙিন জল নিয়ে উদাস হয়ে ঘুরে বেড়ান।

রোগী এবং প্যাঁচা
রোগীদের রাতে ঘুম কম আসে বা অনেকের কাশি বা হাঁপানির সমস্যা থাকে। সে ক্ষেত্রে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাই স্বাভাবিক। প্যাঁচা তো রাতেই শিকার ধরে। বদলে দিনটা ভালো করে ঘুমিয়ে নেয় ওরা। মোদ্দা কথা ঘুম পুষিয়ে তবে নাইট আউটে বের হয়। নিজেদের পছন্দমতো ‘রেস্তোরাঁয়’ এটা-ওটা-সেটা খেয়ে দেয়ে প্যাঁচা অ্যান্ড ফ্যামিলি ফের ব্যাক টু কোটর।

সোশাল মিডিয়ার অ্যাডিক্ট
এ বার সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রজাতি নিয়ে কথা বলা যাক। সোশাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট। মাঝে-মধ্যে এঁরা এটাই বুঝে উঠতে পারেন না এঁরা আসলে কোন জগতের বাসিন্দা। বাস্তবের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতেই তাঁদের বিচরণ বেশি তা আর বলার প্রয়োজন নেই। এঁদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য রিয়্যাকশন এবং কমেন্ট জোগাড় করা। যেমন ঈশ্বর বিশ্বাসীরা মরার আগে পুণ্য সঞ্চয় করেন, ঠিক তেমন। ৬টা অ্যাকাউন্টে গড়ে ৩ ঘণ্টা করে সময় কাটালেই আঠারো ঘণ্টা শেষ। তার সঙ্গে পেটে কিছু দেওয়া আর পেট থেকে বার করা, কখনও স্নান করা বা করবেন কিনা তা নিয়ে ভাবনা এবং কিছু সময় যাতায়াত। ব্যস্... সুন্দর করে দিনের ২৪ ঘণ্টা কেটে গেল। কখন ঘুমোবে বলুন?

অন্তত একটু সহানুভূতি এঁদের জন্য খরচ করুন, প্লিজ...।

Read more!
Advertisement
Advertisement