Subrata Mukherjee and Satyajit Ray: দিন কয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বর্ণময় এই রাজনীতিবিদের অবদান ছিল সত্যজিৎ রায়ের 'সোনার কেল্লা' ছবি তৈরিতে। শুনলে খানিকটা অবাকই হতে হয়।
সোনার ইতিহাস
কী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি? জেনে নেওয়া যাক সত্যজিৎ রায় গবেষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। মনে করা হয়, তিনি না থাকলে এই সিনেমাটা তৈরি হওয়াটা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তো।
এলেন সুব্রত
তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর দৌত্যে সেই অনিশ্চয়তা কাটানো গিয়েছিল। সোনার কেল্লা রিলিজ হয়েছে এবং যথারীতি তুমুল হিট। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, তৎকালীন সময়ে সোনার কেল্লা তৈরিতে করতে খরচ হয়েছিল ৭ লক্ষ টাকা। আর তা বক্স অফিসে ব্যবসা দিয়েছে ১৩ লক্ষ টাকার।
সোনার কেল্লা তৈরিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, "১৯৭৩ সালের কথা। সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গিয়েছে। কে কে অভিনয় করবেন, তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। প্রযোজকও মোটামুটি ঠিক।" বলা যেতে পারে যেটা যে কোনও সিনেমা তৈরির জন্য কোথায় সব থেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, প্রযোজক ঠিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে কোনও কারণে তাঁরা গররাজি হয়ে গিয়েছেন। আর সেই কারণে থমকে সিনেমা তৈরির কাজ। আসলে স্ক্রিপ্ট রেডি, অভিনেতাদের নির্বাচন শেষ। প্রযোজকও মোটামুটি কথা হয়েছিল। কিন্তু স্ক্রপ্ট শোনার পর গান-বর্জিত, নায়িকা-বর্জিত ছবি করার ব্যাপারে ছবি করার ব্যাপারে প্রযোজক মহলে তখনও উৎসাহের অভাব। ফলে রাজি হয়েও শেষ মুহূর্তে প্রযোজক পিছিয়ে গেলেন।
আমরা কিছু করতে পারি?
দেবাশিসবাবু বলেন, "সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন সত্যজিৎ-ভক্ত। তিনি সে সময় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী। বিষয়টি তিনি কোনও ভাবে জানতে পারেন। আর তারপর তিনি তা তোলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের কাছে। বলেন, সত্যজিৎ রায় ছবি করবেন বলে স্ক্রিপ্ট লিখে বসে আছেন। কিন্তু প্রযোজক পাচ্ছেন না। আমরা কিছু করতে পারি?"
সিনেমায় এর আগেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর্থিক সাহায্য করেছিল। সেটা হচ্ছে 'পথের পাঁচালী।' কিন্তু সে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এগিয়ে এসেছিলেন সেই ছবি প্রযোজনার কাজে। সেটা ১৯৫৪ সালের কথা। ফলে বিশ সাল বাদে যে ফের মিরাকেল হবে, কেউ জানত না।
তিনি জানান, সিদ্ধার্থশঙ্কর এবং সত্যজিৎ বাল্যবন্ধু ছিলেন তা নয়, তাঁরা দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও। এবং এক সময় দু'জন পাশাপাশি বাড়ি থাকতেন। সুব্রতবাবুর থেকে জানতে পেরে সিদ্ধার্থশঙ্কর বলেন, "যাও একবার মানিকের সঙ্গে কথা বলো।"
আর তারপর ইতিহাস। প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই সত্যজিৎ রায় রাজি। শুরু হল লোকেশন দেখার জন্য তোড়জোড়। সিনেমা যথারীতি তৈরি হয়ে গেল এবং বাঙালি তো বটেই সারা দুনিয়ার কাছে সমাদৃত।
আরও এক টুকরো ইতিহাস
পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে শুধু সোনার কেল্লা ছবিটি প্রযোজনা করেছিল, তেমন নয়। এর পাশাপাশি আরও ইতিহাস আছে। আর তা হল ছবি ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য সুব্রত এবং সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। খুলেছিল এক নতুন বিভাগ। সোনার কেল্লার দৌলতে।
ছবি পরিবেশনার জন্য তৈরি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র উন্নয়ন নিগম লিমিটেড। সেটি ছিল রাজ্য সরকারের তথ্য ও জনসংযোগের অধীনে। এই বিভাগ খোলা হয়েছিল যাতে সরকার প্রযোজিত ছবির ডিস্ট্রিবিউশন ঠিক ভাবে করা যায়।
পথের পাচালীর ২০ বছর পর যে বিভাগটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল, সোনার কেল্লার সাফল্যের পর নতুন করে উদ্যমী হয়ে ওঠে। এর পরে রাজ্য সরকারে তরফে আরও কয়েকটি ছবির প্রযোজনার কাজে উদ্যোগ নিয়েছিল। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
১৯৭৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর রিলিজ করেছিল সেই ছবি। সরকার প্রযোজিত এবং ছোটদের জন্য ছবি বলে করমুক্ত করে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিল সরকার।