Advertisement

Chickens Neck: শিলিগুড়ি করিডরটি আসলে কী? চিন-বাংলাদেশের নজরে কেন? যা জানা জরুরি

Siliguri Corridor: কোনও দেশের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হলে বা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এই করিডর সহজেই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, যার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

চিকেনস নেক বা শিলিগুড়ি করিডরচিকেনস নেক বা শিলিগুড়ি করিডর
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 08 Apr 2025,
  • अपडेटेड 1:47 PM IST
  • সেনা ঘাঁটিতে রেল এবং সড়কপথে পৌঁছনো যায়
  • নেপাল, ভুটান এমনকী বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য
  • শিলিগুড়ি করিডর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং মূল ভূখণ্ডের মধ্যে একমাত্র স্থলপথ সংযোগ হল শিলিগুড়ি করিডর, যা ভূগোলবিদ ও কৌশলবিদদের কাছে 'চিকেনস নেক' নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও তরাই অঞ্চল ধরে বিস্তৃত এই করিডরটি সবচেয়ে সরু অঞ্চলটি মাত্র ১৭ কিলোমিটার চওড়া। চারপাশে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ ঘেরা এই ভূখণ্ড কেবল ভৌগোলিক নয়, ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

শিলিগুড়ি করিডর ভারতের ‘লাইফলাইন’-এর মতো। কারণ এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে আটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখে। এই করিডরের উপরই নির্ভর করে সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ, জরুরি সামরিক যাতায়াত এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছনো। সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে চিন আগ্রাসন বা উত্তেজনার সময় এই করিডরের ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই করিডরের সরুতা এবং চারপাশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত একে অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তুলেছে। কোনও দেশের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হলে বা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এই করিডর সহজেই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, যার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ছবিটি প্রতীকী

সেনা ঘাঁটিতে রেল এবং সড়কপথে পৌঁছনো যায়

শিলিগুড়ি করিডর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটিতে রেল এবং সড়কপথে পৌঁছনো যায়। নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) রেলস্টেশন থেকে গুয়াহাটি, তাওয়াং সহ নানা কৌশলগত এলাকায় সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তাওয়াং চিন সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় সেনার গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি আছে। এছাড়া এই করিডরের মাধ্যমে দ্রুত সৈন্য মোতায়েন, অস্ত্র সরবরাহ এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। ২০১৭ সালের ডোকলাম সঙ্কট বা ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের সময়ও শিলিগুড়ি করিডরের গুরুত্ব নতুন করে সামনে আসে।

নেপাল, ভুটান এমনকী বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য

শুধু সামরিক নয়, শিলিগুড়ি করিডর পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবাহের মূল কেন্দ্র। এই করিডর দিয়েই প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী গাড়ি দেশের অন্যান্য অংশ থেকে উত্তর-পূর্বে প্রবেশ করে। এখানকার শিলিগুড়ি শহর বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। নেপাল, ভুটান এমনকী বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যও এই অঞ্চল ঘিরেই পরিচালিত হয়।

Advertisement

শিলিগুড়ি করিডর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

পর্যটনের ক্ষেত্রেও শিলিগুড়ি করিডর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম সহ পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র প্রবেশদ্বার এটি। ফলে এই করিডরের নিরাপত্তা ও পরিবহন পরিকাঠামো দেশের পর্যটন শিল্পকেও প্রভাবিত করে।

তবে এই করিডরের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এর ভূগোলিক সরুতা একে অতি সংবেদনশীল করে তুলেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ—ভূমিকম্প, ভূমিধস, বন্যা—এই করিডরের যানচলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। একইভাবে, বিদেশি আগ্রাসন বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহও এখানে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প পথ গড়ে তোলা, রেল ও সড়কপথ উন্নয়ন এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই আন্তঃরাজ্য সংযোগ মজবুত করতে নতুন হাইওয়ে ও সেতু নির্মাণে জোর দিচ্ছে।

শিলিগুড়ি করিডর কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের জন্য একটি কৌশলগত ‘লাইফলাইন’। এর গুরুত্ব শুধু সীমান্ত সুরক্ষায় নয়, বাণিজ্য, পর্যটন এবং আন্তঃদেশীয় সম্পর্কেও বিরাট। তাই এই করিডরের উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং বিকল্প রুট নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করাই হবে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়াস।

Read more!
Advertisement
Advertisement