Advertisement

সারা পাহাড় যখন ঘুমোয়, তখন জেগে থাকে সেবকেশ্বরী মা

মানুষের বিশ্বাস, গোটা পাহাড়-জঙ্গল সহ জনপদ নিঝুম হয়ে যায়। রাতের পর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে চরাচর, তখন একমাত্র জেগে থাকেন ‘সেবকেশ্বরী মা’।

সেবকেশ্বরী কালীমন্দির
সংগ্রাম সিংহরায়
  • শিলিগুড়ি,
  • 29 Oct 2021,
  • अपडेटेड 5:32 PM IST
  • রহস্য, মিথ, কিংবদন্তী, সেবকেশ্বরীর পুঁজি
  • শহর ছেড়ে মানুষ সারা রাত পুজো দেখেন
  • ভক্তরাই এখানকার সম্পদ

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। মানুষের বিশ্বাস, গোটা পাহাড়-জঙ্গল সহ জনপদ নিঝুম হয়ে যায়। রাতের পর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে চরাচর, তখন একমাত্র জেগে থাকেন ‘সেবকেশ্বরী মা’। মায়ের প্রতি যেমন রয়েছে শ্রদ্ধা, ভয়, ভক্তি তেমনই রহস্য মাখা এই পাহাড়ি শৈলচূড়ায় একাকী মা যেন অতন্দ্র প্রহরী। 

অপার্থিব ভক্তি

তাই কার্তিকী অমাবস্যার রাতে পাহাড়ি পথে বিপদসঙ্কুল চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মন্দিরে শহরের পুজোর চাকচিক্য, জৌলুস হেলায় ত্যাগ করে বহু ভক্ত হাজির হন সেবকে। রাত জেগে পুজো দেখেন। তখন প্রত্যেকেই এক একজন খ্য়াপা। কালীপুজোর রাতেও ঘোর অমাবস্যায় তখন উপচে পড়া ভিড়। তিলধারণের জায়গা থাকে না। যে সেবক পাহাড় সূর্য ডুবলেই গা এলিয়ে দিয়ে পড়ে থাকে, সেখানে রাতভর থাকে ভক্তদের ভিড়। অপার্থিব একটা রশ্মি যেন উপর থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।

পাঁঠা বলি হয় আজও, ভোগের নানা প্রকার

এখানে এখনও পাঁঠা বলি হয়। মানতের পাঁঠার সংখ্যাও বেড়েই চলে প্রতি বছর। মন্দিরের উপর পাহাড়ের কোলে সারি সারি খিচুড়ির কড়াই ফুটতে থাকে সন্ধ্যা থেকেই। সকাল পর্যন্ত যতক্ষণ শেষ ভক্ত রাতভর পুজোর পর সম্বিতে না ফিরে বাড়ি ফিরে না যান, ততক্ষণ চলে খিচুড়ির ভোগ। অন্তত দেড়শো কড়াই নামে কালীপুজোর রাতে। পুজোর সময় মায়ের ভোগে থাকে সাদা ভাত, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, ঘ্যাঁটের তরকারি, আলু ফুলকপির সবজি, ফ্রাইড রাইস, ছোলার ডাল, পায়েস, সুজি। বিশেষভাবে বোয়াল মাছ দিয়ে তার সঙ্গে দই-মিষ্টি তো রয়েছেই। তা ছাড়া মাছ ভাজা, চিঁড়ে ভাজা রয়েছে কারণ এ দিয়ে উৎসর্গ করা হয় মাকে। মন্দিরের মানত করে ফল পাওয়া ভক্তরাই মন্দির সংস্কার করে দিয়ে থাকেন।

পঞ্চমুন্ডির আসন

মন্দিরে রয়েছে পঞ্চমুন্ডির আসন সেই আসন স্বপ্নে-পাওয়া। নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল নামে এক ব্যক্তি বহুদিন আগে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেই তিনি বর্তমান বেদির সামনে এসে দেখেন একটি বেদি করা আছে। তার সামনে একটি ত্রিশূল এবং জবাফুল তাছাড়া একটা বেলপাতা পড়ে রয়েছে। তা দেখবার পর মাকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। এটা মোটামুটি ১৯৫০ সাল নাগাদ। তখন সে রাস্তা দিয়ে শুধু সেনাবাহিনীর গাড়ি যাতায়াত করতো। সেনা জওয়ানরা রাত্রির সীমান্ত পাহারা দিতে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে যেতেন সেনারা। তবে এখানে মাটির মূর্তি বসানোর আগে প্রথম মায়ের পুজো করে। তবে তার আগে কবে থেকে পুজো শুরু হয়েছে, তা কেউ জানে না।

Advertisement

কোভিড বিধি মেনে হবে পুজো

প্রায় ঢিলছোঁড়া দূরত্বে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, তরাই, ডুয়ার্স তো বটেই, সিকিম, বিহার, ভুটান, নেপাল থেকেও ভক্তরা আসেন ফি বছর। যদিও গত বছর থেকে করোনার নানা বিধি নিষেধে কিছুটা তাল কেটেছে। এবার অতটা বিধি নিষেধ না থাকলেও এবারও সন্তর্পনে কোভিড বিধি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

মন্দির বারবার বদল হয়েছে

আনুমানিক ১৯৭২-এ আধুনিক মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। কয়েক বছরের মধ্যে মন্দিরটি তৈরি হয়। তবে তার আগে বহু প্রাচীণ কাল থেকে ওই জায়গায় পুজো হতো বলে জানা গিয়েছে। তখন অবশ্য় মন্দির ছিল না। পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ওই মন্দির স্থাপন হয়।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement