রূদ্ধশ্বাস এক ঘণ্টা। সিরাজ দাপটে ঘুরল ম্যাচ। অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফির ফাইনালে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানটান উত্তেজনার সাক্ষী থাকল ক্রিকেট দুনিয়া। মহম্মদ সিরাজের দৌলতে মাত্র ৬ রানে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত। সোমবার সকালে সিরাজ ঝড়েই খতম হল ইংল্যান্ডের শেষ ইনিংস।
তবে এদিন যেন হেরেও হারল না ইংল্যান্ড। ভাঙা কাঁধ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন ক্রিস ওকস।
কাঁধে ব্যান্ডেজ বেঁধে, জাম্পারের ভিতরে বাঁ হাত গুঁজে, এক হাতে ব্যাট করতে নামেন ওকস। তাঁর এক হাতে মাঠে নামার সাহস দেখে আপ্লুত হয়ে পড়ে গোটা গ্যালারি। এটা যে এই সিরিজের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রথম দিন ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাউন্ডারি বাঁচাতে ডাইভ দিয়েই কাঁধে চোট পান ওকস। বাঁ হাত কাঁধ থেকে খুলে যায়। ডাক্তাররাই তখনই সাফ জানিয়ে দেন যে, আপাতত ব্যাট ধরাই সম্ভব নয়। কিন্তু ম্যাচের শেষ, টানটান উত্তেজনার পরিস্থিতিতে সেই ব্যান্ডেজ করা কাঁধ নিয়েই নেমে পড়লেন ওকস। আর তার মাধ্যমেই যেন বিশ্বের সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমীদের স্যালুট কুড়িয়ে নিলেন ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার।
চোখে মুখে যন্ত্রণা, বুকে সাহস। হাঁটার ভঙ্গিতে যেন এক দৃঢ় মানসিকতা। এক হাতে ব্যাট করতে নেমে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। গ্যালারির সকলে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর জেদকে সম্মান জানালেন।
ডে ফোরের শেষেই অবশ্য এর আভাস দিয়েছিলেন জো রুট। বলেছিলেন, 'ওঁকে যদি বাঁ হাতে খেলতে হয়, তাও খেলবে। ওঁর মধ্যে এই মানসিকতাই রয়েছে। এই কারণেই ওঁ আলাদা।' পাশাপাশি ঋষভ পন্থের সঙ্গেও তাঁর তুলনা করেন জো রুট। ঋষভও সিরিজের শুরুতে চোট নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।
এর আগেও চোট নিয়ে লড়েছেন অনেকে
টেস্ট ক্রিকেটে এমন নজির এর আগেও মিলেছে। ২০০৯ সালের সিডনি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ ভাঙা হাত নিয়েই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সার ঝড় সামলে ১৭ বল টিকেও গিয়েছিলেন। মাত্র ১০ বল বাকি থাকতেই তাঁকে ফিরতে হয়।
১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের সেলিম মালিকও ভয়ঙ্কর চোট নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সেবার ফয়সলাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল। তাতে মালকম মার্শালের বল এসে সজোরে তাঁর হাতে আঘাত করে। এরপর আর্ম স্লিং নিয়েই ব্যাট করতে নামেন সেলিম মালিক। কৌশলে ডান হাত ও বাঁ হাত উল্টে ব্যাটিং চালিয়ে যান। দারুণ সাপোর্টও দিয়েছিলেন।
সেই সমস্ত ইতিহাসের পাতায় এবার লেখা হল ওভালের ওকসের অধ্যায়ও। আর ভারত? স্ট্র্যাটেজি, লড়াই আর সিরাজের দুরন্ত বলে মিলল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়।