ওভালে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক মহম্মদ সিরাজ। ওভালে টানটান উত্তেজনায় সিরাজ যেন একেবারে ফিনিক্স পাখি। আজ অর্থাত্ সোমবার ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিনে ভারতের দরকার ছিল ৪ উইকেট। ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫ রান। প্রথম ওভারেই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে দুটি ৪। চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। তারপর শুরু হল সিরাজের দাপট। ওভাল টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়া সিরাজ জানালেন, তিনি আজ ভোরে উঠেই নিজেকে বলেছিলেন, বিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস।
সিরাজের বিশ্বাসেই মিলল জয়
সিরাজের কথায়, 'আমি আজ সকালে উঠেই গুগল-এ একটি ফটো ডাউনলোড করি। ফটোতে লেখা ছিল Believe। অর্থাত্ বিশ্বাস। নিজের উপর বিশ্বাস। ওই ছবিটিই ফোনে ওয়ালপেপার করে নিয়েছিলাম।'
ওভালের মাঠে তখন চূড়ান্ত টানটান উত্তেজনা। এমন সময় ভারতের হয়ে ছন্দে ফেরেন মহম্মদ সিরাজ। ভারতীয় দলকে এনে দিলেন টেস্ট কেরিয়ারের অন্যতম সেরা জয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে মাত্র ছয় রানে জয়, ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের নজির। সিরিজে ২-২ ব্যবধানে সমতা ফেরাল ভারত। পঞ্চম দিনের সকালে সিরাজই ম্যাচের সবচেয়ে বড় পার্থক্যকারী। ইংল্যান্ডের শেষ চার উইকেটের মধ্যে তিনটিই তুলে নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। জেমি স্মিথ, জেমি ওভারটনের পর গাস অ্যাটকিনসনকে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন সিরাজ।
ওইটাও কতটা বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল
উল্লাসে ফেটে পড়েন সিরাজ। নিজের সিগনেচার ‘সিউ’ উদযাপন করে ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে আসা সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন তিনি। টেস্ট ম্যাচ তো বটেই, গোটা সিরিজেরই এক রোমাঞ্চকর সমাপ্তি। ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত সিরাজ বললেন, 'আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, সঠিক জায়গায় বল করা। উইকেট পাব কি না বা রান যাবে কি না, সেটা ভাবিনি। হ্যারি ব্রুকের ক্যাচটা যেভাবে নিয়ে বাউন্ডারির দড়িতে পা দিয়েছিলাম, তখন বুঝিনি, ওইটাও কতটা বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল।'
চতুর্থ দিনের ভুল ভুলে পঞ্চম দিনে উজার করে দিলেন
সেই চতুর্থ দিনের ঘটনা ছিল সিরাজের কাছে ভুলে যাওয়ার নয়। ব্রুকের ক্যাচ নিলেও বাউন্ডারি লাইনে পা দিয়ে দেন তিনি, যার ফলে জীবন পেয়ে যান ব্যাটার। সেই ভুল পুষিয়ে দিতেই যেন পঞ্চম দিনে নিজেকে উজাড় করে দেন সিরাজ। চাপের মুখে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে বুঝিয়ে দেন, এই জায়গাটা তাঁর কতখানি প্রাপ্য।
চূড়ান্ত দিনে খেলা শুরু হয়েছিল মাত্র ৩৫ রান দূরে থাকা ইংল্যান্ডের চারটি উইকেট নিয়ে। মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডই বুঝি সিরিজ জিতে নেবে। গাস অ্যাটকিনসন সিরাজকে ছয় মারতেই উত্তেজনা চূড়ায় পৌঁছায়। তার মধ্যেই এক হাতে ব্যাট করতে নামেন ক্রিস ওক্স, কারণ তাঁর কাঁধে চোট। অ্যাটকিনসন চেষ্টা করছিলেন ওক্সকে স্ট্রাইক না দিতে। কিন্তু সিরাজের সেই ইয়র্কার—যেটা অফ স্টাম্প উপড়ে দিয়ে জয়ের সিলমোহর দিল—সেটাই হয়ে থাকল ম্যাচের সবচেয়ে মনে রাখার মতো মুহূর্ত। ২৫ দিন ধরে চলা এই হাই ভোল্টেজ টেস্ট সিরিজ যেন শেষ দিনে সবটুকু রোমাঞ্চ জমা করে রেখেছিল। একবার ভারতের দিকে হেলে পড়ে ম্যাচ, আবার পরক্ষণেই ইংল্যান্ডের দিকে। শেষ পর্যন্ত ভারতের বোলাররাই বাজিমাত করলেন।