দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে শুরু থেকেই বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। বৃষ্টির জেরে মুখের হাসি ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল বেন স্টোকসদের। সাত উইকেট হাতে। ওভার কমবে তা নিশ্চিত। তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়। চতুর্থ দিনে কেন আগে ডিক্লেয়ার করল না ভারত? টেস্টের শুরু থেকেই দল নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ ছিল। শেষদিনে তা আরও বাড়ে।
তবে সব সমালোচনার জবাব দিয়ে দিলেন গিল। ম্যাচ জিতে ভারত যে ৫টা রেকর্ড গড়ল, তার মধ্যে তিনটেই ক্যাপ্টেনের দখলে। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ১৬১ রান। ভারতকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গিয়ে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিলেন। যে পাহাড়প্রমাণ লিড ভারতীয় দল নিয়ে নিয়েছিল, সেখান থেকে ম্যাচ জেতা অসম্ভব। ব্যাজবলের জাদুতেও যা ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের অনেকেরই মত, তিনি আসলে তাঁর দুই পূর্বসূরি বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার মিশ্রন। আগ্রাসন যেমন আছে, তেমনই আছে কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা। তা না হলে, প্রথম টেস্টে এতটা বাজে ভাবে হারের পর এতটা দাপট ফিরে আসা যায়?
দুরন্ত ব্যাটিং
প্রথম ম্যাচে ইঙ্গিত মিলেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সম্ভাবনাকেই যেন বিরাট আকার দিলেন ভারতের ক্যাপ্টেন। এক ম্যাচে ৪০০-র উপর রান করা তিনিই একমাত্র ব্যাটার। শুধু তাই নয়, প্রথম ইনিংসে ২০০ করার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫০-র উপর রান। আর কোনও ক্যাপ্টেনের এই রেকর্ড নেই। ভারতীয় ক্যাপ্টেনদের মধ্যে সেনা দেশে (দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) প্রথম দ্বি শতরান করা ব্যাটার হিসেবে রেকর্ড গড়ে ফেললেন গিল।
ওয়াশিংন সুন্দরকে খেলানোর সিদ্ধান্ত
কেন কুলদীপ যাদবকে না খেলিয়ে দলে নিয়ে আসা হল ওয়াশিংটন সুন্দরকে? এ নিয়ে ম্যাচের টসের পর থেকেই শুরু হয় আলোচনা। আসলে ভারতীয় দল চেয়েছিল তাদের ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে। লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতা একটা বড় কারণ ছিল ভারতের প্রথম টেস্ট হারের পেছনে। সেই সমস্যাই কাটাতে চেয়েছিলেন গিল। সেই কারণেই ওয়াশিংটনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
লোয়ার অর্ডারকে ভরসা দেওয়া
ভারতীয় দলের টপ অর্ডার প্রথম ম্যাচেও দারুণ ব্যাট করেছিল। তবে মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার একেবারেই পারফর্ম করতে পারেনি। দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হয় তারা। তবুও ক্যাপ্টেন গিলের ভরসাতেই দারুণ ইনিংস খেলে যান রবীন্দ্র জাদেজা। বল হাতে খুব সফল না হলেও, ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৮৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন। জা টিম ইন্ডিয়াকে দারুণ জায়গায় নিয়ে যায়।
ফিল্ডিং-এর ভুল শুধরে নিতে জয়সওয়ালকে ডিপে পাঠানো
যশস্বী জয়সওয়াল এমনিতে ভাল ফিল্ডার হলেও, প্রথম টেস্টে একের পর এক ক্যাচ ফেলে দেন। সেই সময় থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, জয়সওয়ালকে স্লিপে নয় ডিপে পাঠানো হবে। স্লিপে ফিল্ডিং করতে এসে ক্যাপ্টেন গিল একটা ক্যাচ ফেললেও, মোটামুটি ভরসা দিয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয় টেস্টে ভারতীয় দলও মোটামুটি ভাল ফিল্ডিং করেছে। আক্রমণাত্মক ফিল্ড সাজিয়েছেন গিল। যার জেরে স্বাভাবিক ছন্দে দেখাই যায়নি ব্যাজবল ক্রিকেটকে।
শেষদিনে লাঞ্চের আগে স্টোকসের উইকেট তুলে নেওয়া
দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে লাঞ্চের আগে যেভাবে বেন স্টোকসের উইকেট তুলে নেন গিল তা দেখে কে বলবে এটাই ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর প্রথম টেস্ট সিরিজ? ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিন প্রথমে চেয়েছিলেন নীতিশ কুমার বেতিচাক বল করাতে, কিন্তু তা শেষ মুহূর্তে তিনি ।জের কৌশল পরিবর্তন করে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ডাকেন। এটি করা হয়েছিল কারণ ভারতীয় দল মধ্যাহ্নাআজর আগে যতটা সম্ভব ওভার বল করাত চেয়েছিল।
ওয়াশিংটন সুন্দরের প্রথম ওভারের শেষ বাল, ঋষত পন্ত চেয়েছিলেন বেন স্টোকাস যেন একটি রান নেন যাতে রবীন্দ্র জাদেজা, স্টোকদের বিরুদ্ধে পরের ওভার বল করার সুযোগ পান, কিন্তু তা হয়নি। জাদেজা ৬০০ সেকেন্ডের কম সময়ে ওই ওভারটি শেষ করেন। এর ফলে, লাঞ্চের আগে সুন্দর আরেকটি ওভার করার সুযোগ পান। যেই ওভারে, তিনি তৃতীয় বলে বেন স্টোকসকে এলবিডব্লিউ আউট করেন।