Mohammad Siraj India Vs England: ম্যাচ হারলে আফসোসের সীমা থাকত না। ম্যাচের চতুর্থ দিন ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার মুখে ডিপ স্কোয়ার লেগে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার বলে হ্যারি ব্রুক সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। নিয়েও বাউন্ডারির দড়িতে পা লাগিয়ে ফেলেছিলেন মহম্মদ সিরাজ এরপর ভারতীয় বোলাররা মাথাকুটে মরেও আর উইকেট ফেলতে পারেননি। সেই সময় ভারতের জয়ের আশা প্রায় নির্মূল করে ফেলেছিলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুট। দুজনেই শতরান হাঁকিয়ে ততক্ষণে ভারতীয় সমর্থকদের বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিলেন ভারত এ ম্যাচেও হারছে। প্রথম দিকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সিরাজ-কৃষ্ণাদেরও নির্বিষ মনে হচ্ছে। সিরিজ ড্র তো দূর ৩-১ ফলে হেরেই ফিরতে হবে দেশে। কিন্তু লর্ডসে যেটা ভারত পারেনি। ওভালে একইভাবে ইংল্যান্ডও পারল না। শেষমেষ জয়ের চেয়ে ৬ রান দূরে থামল ইংরেজদের সিরিজের শেষ ইনিংস। প্রসিদ্ধের যোগ্য সহায়তায় মূল কারিগর সেই সিরাজই।
ক্যাচ ফেলার বদলা নিজেই চুকিয়ে নিলেন ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে। ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৯ উইকেট। ম্যাচের সেরা বাছতে কোনও ভুল করেননি কর্তৃপক্ষ। রবিবার শেষবেলায় ব্রুক আউট হতেই ছন্দ হারায় ইংল্যান্ড। আউট হয়ে যান আরেক শতরানকারী রুটও। রক্তের গন্ধ পেয়ে শ্বাপদের মতো হিংস্র হয়ে উঠছিল তখন ভারতীয়রা। একের পর এক উইকেট পতন শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই খেলার সমাপ্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তার মধ্য়েই ফের বৃষ্টি নাম। ফলে আর খেলা চালানো যায়নি।
সোমবার সকালে খেলা শুরু হতেই কৃষ্ণার একই ওভারে ২টি চার মারেন গাস অ্যাটকিনসন। আরও একবার খেলা শেষ করে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলছিল ইংরেজ ব্যাটারের বিক্রমে। মনে করা হচ্ছিল মাত্র কয়েক রান হাতে ৪ উইকেট নিয়েই শেষ হবে। তখনই ফের খেলা ঘুরিয়ে দেন সিরাজ। তুলে নেন জেমি স্মিথকে। এরপর ২ ওভার পরে জেমি ওভারটনও সিরাজের শিকার। এরপর জোস টাংকে আউট করেন কৃষ্ণা। এরপর এক হাত বেঁধে সোয়েটারের ভিতর ঢুকিয়ে ম্যাচ বাঁচাতে নামেন বাঁ কাঁধে চোট পাওয়া ক্রিস ওকস। যদিও তাঁকে কষ্ট করতে হয়নি। সিরাজ অ্যাটকিনসনকে তুলে নিয়ে উত্তেজনার ম্যাচে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন।
এ ভাবেও যে ভারত ফিরবে তা ভাবা কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটাই সহজ করলেন মহম্মদ সিরাজ। সোমবার ৫৭ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। একটা করে উইকেট পড়ছিল আর হৃদ্স্পন্দন বাড়ছিল। এই সিরিজ় সিরাজের। প্রায় ১২০০ বল করেছেন। সবচেয়ে বেশি ২৫টা উইকেট নিয়েছেন। দু’দল মিলিয়ে তিনিই একমাত্র পেসার যিনি পাঁচটা ম্যাচই খেলেছেন। শেষ দিন যখন একটা একটা রান করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ইংল্যান্ড তখনও হাল ছাড়েননি তিনি। তাঁর বলে গাস অ্যাটকিনসনের স্টাম্প উড়ে যাওয়ার পরে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ উল্লাস দেখা গেল। তার পর দু’হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালেন সিরাজ। তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন বাকিরা। তত ক্ষণে অসাধ্যসাধন করে ফেলেছে ভারত। নাটকীয় সিরিজ়ের মহানাটকীয় সমাপ্তি হয়েছে।
গোটা সিরিজ়ে বুক চিতিয়ে লড়েছেন সিরাজ। দু’দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওভার বল করেছেন। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। যখনই মাঠে নেমেছেন, নিজের ১০০ নয়, ২০০ শতাংশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ওভালে হারলে হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন না ভারতীয় বোলার। ব্রুকের ক্যাচটা ধরতে পারলে অনেক আগেই ম্যাচটা জিতে যেতে পারত ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পাবেন সিরাজ। শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। কী অদ্ভুত সমাপতন। লর্ডসে অনেক লড়েও জেতাতে পারেননি সিরাজ। বোল্ড হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন। সেই সিরাজই ওভালে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।
ভারত (প্রথম ইনিংস): ২২৪ (করুণ ৫৭, সুদর্শন ৩৮, অ্যাটকিনসন ৩৩/৫, টং ৫৭/৩)
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস): ২৪৭ (ক্রলি ৬৪, ব্রুক ৫৩, প্রসিদ্ধ ৬২/৪, সিরাজ ৮৬/৪)
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস): ৩৯৬ (যশস্বী ১১৮, আকাশ ৬৬, টং ১২৫/৫, অ্যাটকিনসন ১২৭/৩)
ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস): ৩৬৭ (ব্রুক ১১১, রুট ১০৫, প্রসিদ্ধ ১২৬/৪, সিরাজ ১০৪/৫)
ম্য়াচের ফল: ওভালে ৬ উইকেটে জয়ী ভারত।
সিরিজের ফলছ ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট ২-২ ব্যবধানে ড্র।