১৯৮৩-র বিশ্বকাপ ফাইনাল এদেশের বেশিরভাগ মানুষই লাইভ দেখেননি। রেডিওর ধারাভাষ্য শুনেই ভারতের হয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন তাঁরা। আসলে, ধারাভাষ্য একটি শিল্প -যে শিল্পের মাধ্যমে হাজার-হাজার মাইল দূরেও কোনও স্টেডিয়ামের খেলার উত্তেজনা শিরায়-শিরায় অনুভব করতে পারতেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। টেলিভিশনের যুগেও ধারাভাষ্যের গুরুত্ব একটুও কমেনি।রান্নার শেষে গরম মশলার মতোই ম্যাচের সঙ্গে ধারাভাষ্য অপরিহার্য। ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠস্বরই যেন স্টেডিয়ামের আবেগ পৌঁছে দেয় ঘরে ঘরে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আইপিএলের মতো জমকালো লিগে ধারাভাষ্যের গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। তবে সম্প্রতি ধারাভাষ্য ঘিরেই বড় বিতর্কে জড়ালেন হরভজন সিং এবং ইরফান পাঠান।
ধারাভাষ্যে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ, বিতর্কে হরভজন
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় রাজস্থানের পেসার জফ্রা আর্চারকে নিয়ে হরভজন সিংয়ের মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক দানা বাঁধছে। আর্চার প্রচুর রান খাওয়ার পর হরভজন বলেন, 'লন্ডনের কালো ট্যাক্সির মিটার যেমন চড়চড় করে বাড়ে, তেমনই আর্চারেরও রান বাড়ছে।' কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার আর্চারকে নিয়ে এই মস্করা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। 'বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যে'র অভিযোগ ওঠে।
হরভজনের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই হরভজনকে ক্ষমা চাইতে বলছেন। বিসিসিআই হরভজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও জল্পনা করা হচ্ছে। এমনকি তাঁকে আইপিএলের ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলেও মত ওয়াকিবহাল মহলের। তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
ইরফান পাঠানও বাদ পড়েছিলেন
ধারাভাষ্য কেন্দ্র করে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে আইপিএলের ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বাদ পড়েছিলেন ইরফান পাঠান। অভিযোগ, ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় তিনি নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কমেন্ট করতেন। পাল্টা একাধিক ক্রিকেটার তাঁর নামে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। এমনকি বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তাঁর নম্বরও ব্লক করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিসিসিআই এই বিষয়ে একটানা নজর রাখছিল।এরপরেই পাঠানকে তালিকা থেকে বাদ দেয়।
এর আগেও ধারাভাষ্য ঘিরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকর এবং হর্ষ ভোগলে। ২০২০ সালে জাদেজাকে ‘বিটস অ্যান্ড পিসেস ক্রিকেটার’ বলে মাঞ্জরেকর বিতর্কে জড়ান এবং বোর্ড তাঁকে বাদ দেয়। ২০১৬ সালে হর্ষ ভোগলেকেও কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
যে কোনও খেলায় ধারাভাষ্য মানুষকে সেটা আরও ভালভাবে বুঝতে, এনজয় করতে সাহায্য করে। খেলার বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে হালকা হাসি-ঠাট্টা— ক্রিকেটকে প্রাণবন্ত করে তোলে ধারাভাষ্যই। তাই, বিতর্কিত মন্তব্য বা ব্যক্তিগত আক্রমণের মতো বিষয় নিঃসন্দেহে ধারাভাষ্যের মর্যাদা নষ্ট করে। হরভজন এবং পাঠানের সাম্প্রতিক বিতর্কে ক্রিকেটের ধারাভাষ্য সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবছেন সকলে। বিসিসিআই এরপর কী সিদ্ধান্ত নেয়, এখন সেটাই দেখার।