Advertisement

Team India Jersey Controversy: অদ্ভুত কাকতালীয়, টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে দেখা গেছে যেসব কোম্পানি, সব গায়েব!

২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সংসদের রাজ্যসভায় প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫ পাস হয়েছে। লোকসভায় এই বিল আগেই পাস হয়েছিল, তাই রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে এটা আইনে পরিণত হবে। এই বিলে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যেকোনো গেমিং অ্যাপ যেখানে টাকার লেনদেন হয়, তার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হবে।

টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে দেখা গেছে যেসব কোম্পানি, সব গায়েব!টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে দেখা গেছে যেসব কোম্পানি, সব গায়েব!
Aajtak Bangla
  • মুম্বই,
  • 22 Aug 2025,
  • अपडेटेड 10:30 PM IST

সাহারার সাথে বিসিসিআই-এর সম্পর্ক ছিল পুরো ১২ বছর, এবং সে সময় তারা টিম ইন্ডিয়ার জার্সির প্রধান স্পনসর ছিল। এর পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের কিট স্পনসর করেছে স্টার ইন্ডিয়া, অপ্পো, বায়জু এবং ড্রিম১১।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে নিজের নাম দেখা যে কোনো কোম্পানির জন্য গর্ব এবং সম্মানের বিষয়। কিন্তু অদ্ভুত কাকতালীয় হলো, একবিংশ শতাব্দীতে যে সব কোম্পানি টিম ইন্ডিয়ার জার্সির প্রধান স্পনসরশিপ পেয়েছে, তারা কেউ না কেউ আইনি বা আর্থিক ঝামেলায় জড়িয়েছে। এমনকি অনেক কোম্পানি শীর্ষ থেকে তলানিতে নেমে গেছে। এবার সেই তালিকায় নতুন নাম যোগ হয়েছে ড্রিম১১ (Dream11)-এর। অনলাইন গেমিং বিল সংসদে পাস হওয়ার পর ড্রিম১১ও ভারতে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানিয়ে রাখি, ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সংসদের রাজ্যসভায় প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫ পাস হয়েছে। লোকসভায় এই বিল আগেই পাস হয়েছিল, তাই রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে এটা আইনে পরিণত হবে। এই বিলে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যেকোনো গেমিং অ্যাপ যেখানে টাকার লেনদেন হয়, তার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হবে।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল গেম এবং স্কিল-ভিত্তিক গেম উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ড্রিম১১ স্কিল-ভিত্তিক গেমের মধ্যে পড়ে, তাই বিল আইন হলে ড্রিম১১-এর বিদ্যমান কার্যক্রম ভারতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। ড্রিম১১-এর আগে বায়জু, অপ্পো, স্টার ইন্ডিয়া এবং সাহারা বিসিসিআই-এর সাথে চুক্তি করেছিল, কিন্তু তাদের সবার পথ চলা কঠিন হয়ে পড়েছিল...

সাহারা (২০০১–২০১৩): সাহারার কথা আগে বলি। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে দীর্ঘতম সময় ধরে যার নাম যুক্ত ছিল, সেটা হলো সাহারা গ্রুপ। ১২ বছর সাহারা ছিল টিম ইন্ডিয়ার জার্সির প্রধান স্পনসর। এই সময় ভারত ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল, আবার টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০১১ জিতেছিল। এত লম্বা সময় টিম ইন্ডিয়ার সাথে থাকা সত্ত্বেও সাহারার ব্যবসা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

Advertisement

সাহারা গ্রুপ তাদের দুই হাউজিং বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা তুলেছিল। কিন্তু SEBI (ভারতীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড)-এর দাবি ছিল এই টাকা অবৈধভাবে এবং নিয়ম ভেঙে তোলা হয়েছে। ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট সাহারাকে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সেই টাকা SEBI-এর কাছে জমা দিতে বলে। সাহারা ঠিকমতো আদালতের আদেশ মানেনি। ২০১৪ সালে গ্রুপের চেয়ারম্যান সুব্রত রায়কে গ্রেফতার করা হয়। ২০২৩ সালে সুব্রত রায় মারা যান, কিন্তু এখনো বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

স্টার ইন্ডিয়া (২০১৪–২০১৭): সাহারার পর বিসিসিআই স্টার ইন্ডিয়া (Star India)-র সাথে চুক্তি করে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সময়টা ছিল বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার জন্য বিশেষ। তবে এই সময় স্টার ইন্ডিয়ার ঝামেলা বাড়তে থাকে। ওয়াল্ট ডিজনির মালিকানাধীন স্টারের বিরুদ্ধে বাজারে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। পরে কোম্পানির শক্তি কমে যায় এবং জিওর সাথে মিশে যেতে হয়।

অপ্পো (২০১৭–২০২০): চীনা কোম্পানি অপ্পো বিসিসিআই-এর সাথে ১,০৭৯ কোটি টাকার বড়সড় চুক্তি করে, যা পাঁচ বছরের জন্য ছিল। কিন্তু অপ্পোর আশা মতো লাভ হয়নি, বরং স্পনসরশিপের খরচ কোম্পানির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে নকিয়া এবং ইন্টারডিজিটালের সাথে পেটেন্ট বিরোধ কোম্পানির সমস্যা বাড়ায়। শেষমেষ অপ্পো মাঝপথে চুক্তি ছেড়ে দেয়।

বায়জু (২০২০–২০২২): ২০২০ সালে অপ্পোর জায়গায় ভারতীয় দলের জার্সির প্রধান স্পনসর হয় বায়জু (BYJU’S)। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই কোম্পানি তলানিতে নেমে যায়। ২০২২ সালে যার মূল্য ছিল ২২ বিলিয়ন ডলার, সেটা প্রায় শূন্যে চলে আসে। কোম্পানির কাছে বিসিসিআইকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থও ছিল না। বিসিসিআই ১৫৮ কোটি টাকা উদ্ধার করতে NCLT (ন্যাশনাল কোম্পানি ল আইন ট্রাইব্যুনাল)-এর দ্বারস্থ হয়।

ড্রিম১১ (২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত): এরপর ২০২৩ সালে ড্রিম১১ ভারতীয় দলের কিট স্পনসরশিপের অধিকার পায়, যা তিন বছরের জন্য ৩৫৮ কোটি টাকার চুক্তি ছিল। শুরুর দিকে এই চুক্তিকে দুর্দান্ত মনে করা হয়েছিল কারণ ড্রিম১১ ফ্যান্টাসি গেম খেলোয়াড়দের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং ক্রিকেটের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল।

কিন্তু ২০২১-২২ সালে ড্রিম১১-এর বিরুদ্ধে ১,২০০ কোটি টাকার জিএসটি ফাঁকির অভিযোগ ওঠে। এই বিতর্ক ড্রিম১১-এর ভাবমূর্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় আঘাত হানে। এখন নতুন অনলাইন গেমিং বিল তাদের ব্যবসার মডেলে সরাসরি আঘাত। এতে শুধু কোম্পানির আয় কমবে না, বরং টিম ইন্ডিয়ার জার্সি থেকেও এর নাম সরে যেতে পারে।

দেখা যাচ্ছে, ড্রিম১১-এর বর্তমান মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার এবং এটি ভারতের ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের গেমিং ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। কিন্তু যদি এই মডেল বন্ধ হয়, তবে কোম্পানি তাদের আয়ের বড় অংশ হারাবে। তখন বিসিসিআই-এর সাথে করা ৩৫৮ কোটি টাকার চুক্তি পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিসিসিআই-এর এই সব স্পনসরদের গল্প অনেকটা বলিউডের সুপারস্টারদের মতো। আগে শাহরুখ, সালমান, আমিরের ছবি প্রায় হিট হতো। কিন্তু এখন তাদের অনেক ছবি ফ্লপ হচ্ছে, যেমন – ঠগস অফ হিন্দোস্তান, লাল সিং চাড্ডা, টিউবলাইট, কিসি কা ভাই কিসি কি জান। সুপারস্টার হওয়ায় জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, কিন্তু সাফল্যের গ্যারান্টি সব সময় থাকে না। ঠিক তেমনই জার্সি স্পনসরদের সাথেও হয়েছে। নাম পাওয়া যায়, পরিচিতি বাড়ে, কিন্তু ফল সব সময় ভালো হয় না। বিসিসিআই-এর জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এমন একটি ব্র্যান্ড খুঁজে বের করা, যা চাপ এবং প্রচারের বোঝা সামলাতে পারবে।

 

Read more!
Advertisement
Advertisement