আইপিএল (Indian Premier League) মানেই চমক। প্রতিবারই এই টুর্নামেন্ট নতুন নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দিয়েছে, তাঁদের প্রতিভাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ১৮ তম আইপিএল-এর তৃতীয় ম্যাচে এমনই এক খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলল। ভিগনেশ পুথুর (Vignesh Puthur)। মাত্র ২৪ বছর বয়সী কেরলের এই স্পিনার কামাল করলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে স্কোরবোর্ডে বেশি রান করতে পারেনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু তারপরও ভিগনেশের বোলিংয়ের দৌলতে ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। ভিগনেশ একাই তুলে নেন তিন উইকেট। তরুণ প্রতিভার পিঠ চাপড়ে দেন খোদ ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনি।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ভিগনেশের সুযোগ পাওয়া রূপকথার থেকে কম নয়। কেরালার মালাপ্পুরমের বাসিন্দা ভিগনেশ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তাঁর বাবা পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। ভিগনেশ এখনও পর্যন্ত সিনিয়র স্তরে কেরলের হয়ে একটি ম্যাচও খেলেননি। খেলা শুরু করার সময় ভিগনেশ মিডিয়াম পেস বল করতেন। কিন্তু কেরলের ক্রিকেটার মহম্মদ শেরিফ তাঁকে স্পিনার হওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর থেকে স্পিন বোলিং শুরু করেন ভিগনেশ। জোর কদমে অনুশীলন শুরু করেন। স্থানীয় লিগ এবং কলেজ টুর্নামেন্টে নজর কাড়তে শুরু করে তাঁর বোলিং। এরপর সেন্ট থমাস কলেজ এবং জলি রোভার্স ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। তার জেরে কেরল টি-টোয়েন্টি লিগের প্রথম মরসুমে নির্বাচিত হন। সেই লিগের প্রথম মরসুমে ভিগনেশ মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন। তবে তাঁর দিকে বিশেষ নজর ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কাউটিং দলের। তাঁকে ডাকা হয়। পরীক্ষার সময় ভিগনেশ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নির্বাচিত হন। ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দলে সুযোগ পান।
ভিগনেশের বোলিংকে আরও উন্নত করার জন্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠায়। কেপটাউনে একজন নেটবলার হিসেবে যোগ দেন। রশিদ খানের মতো খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। এভাবে নিজেকে আরও উন্নত করেন। তার ফল মিলল হাতেনাতে।
রোহিত শর্মার জায়গায় ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামানো হয় ভিগনেশকে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৫৫ রান তোলে মুম্বই। ধোনিদের হারানোর জন্য এই রান যথেষ্ট ছিল না। ব্যাট হাতে নেমে ভালোই শুরু করেন চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা। তবে ছন্দপতন ঘটান ভিগনেশ। ঋতুরাজ গায়কওয়াড়, শিবম দুবে এবং দীপক হুদার মতো শক্তিশালী ব্যাটারদের পরপর তিন ওভারে প্যাভলিয়নে ফেরান তিনি। একসময় তো মনে হচ্ছিল মুম্বই এই ম্যাচে ফিরলেও ফিরতে পারে। অনেকে বলছেন, মুম্বইয়ের স্কোরবোর্ডে যদি আরও ১০ থেকে ১৫ রান বেশি থাকত, তাহলে ম্যাচের ফলাফল রোহিত শর্মাদের দলের দিকে যেতে পারত। ভিগনেশ ৪ ওভার বল করে মাত্র ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচ পারস মামব্রে ভিগনেশ সম্পর্কে বলেন, 'আমাদের স্কাউটিং টিম প্রতিভাকে চেনে। তাদের কদর করে। ভিগনেশের মধ্যে আমরা সম্ভাবনা দেখেছিলাম। ও আগে অনেক ক্রিকেট খেলেনি। তবে প্রতিভা আছে, তা স্বীকার করতেই হবে।'
তাঁকে নেওয়া যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না সেকথা প্রমাণ করে দিয়েছেন ভিগনেশ। প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'ভিগনেশ লম্বা রেসের ঘোড়া। তিনি বহুদূর যাবেন।'