ভারতীয় দলের ক্রিকেটার যুজবেন্দ্র চাহালের চলতি বছরের মার্চে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এবার ওই ঘটনায় মুখ খুললেন চাহাল। ধনশ্রী ভার্মার সঙ্গে ডিভোর্স নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন তিনি। জানালেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, তিনি আত্মহত্যার কথাও একসময় ভেবেছিলেন। চাহাল জানিয়েছেন, যখন তাঁর উপর বিশ্বাসঘাতকের অভিযোগ ওঠে, তখন তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
একাধিক বার আত্মহত্যার চিন্তা এসেছিল
যুজবেন্দ্র চাহালের কথায়, 'আমার মনে একাধিক বার আত্মহত্যার চিন্তা এসেছিল। কারণ, অনেক দিন ধরেই অশান্তি চলছিল। আমি ঠিক করেছিলাম, পরিস্থিতি এমন জায়গায় যতক্ষণ না পৌঁছাচ্ছে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়, তত দিন আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ দম্পতির মতোই থাকবে।' সম্প্রতি রাজ শামানির ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চহাল জানান, 'এই পরিস্থিতি অনেকদিন ধরে চলছিল। আমরা দু’জনে ঠিক করেছিলাম, যতক্ষণ না একেবারে শেষ অবধি পৌঁছচ্ছি, ততক্ষণ কিছু বলব না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা স্বাভাবিক দম্পতির মতোই থাকতাম।'
সম্পর্ক আসলে একটা বোঝাপড়া
যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সেই সময়টা কি শুধু ‘দেখানোর জন্য’ ছিল, চাহাল মাথা নেড়ে সম্মতি দেন। বলেন, 'সম্পর্ক আসলে একটা বোঝাপড়া। একজন রেগে থাকলে, আরেকজনকে শুনতে হয়। কিন্তু সব সময় দুই জনের স্বভাব একরকম হয় না। আমি তখন ভারতের হয়ে খেলছিলাম, ও-ও নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল। এই টানাপোড়েন ১-২ বছর ধরেই চলছিল।'
চাহাল বলেন, 'আমি দু'দিকেই সময় দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সম্পর্কটা নিয়ে ভাবার মতো সময়ই বের করতে পারছিলাম না। একসময় মনে হচ্ছিল, থাক এসব, আর টানার মানে নেই। প্রত্যেকেরই নিজস্ব জীবন, লক্ষ্য থাকে। একজন পার্টনার হিসেবে পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে জরুরি।'
আত্মহত্যার চিন্তা, রাতের পর রাত কান্না
চহালের বক্তব্য, এই মানসিক টানাপোড়েনের সময় তিনি গভীর অবসাদের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। বলেন, 'আমার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসত। নিজের জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। দিনে ২ ঘণ্টা কাঁদতাম, মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমোতাম। এই অবস্থা চলেছিল টানা ৪০–৪৫ দিন। আমি ক্রিকেট থেকে একটা বিরতি নিতে চেয়েছিলাম, কারণ মনটা আর ঠিকমতো কাজ করছিল না।' এই সময়টা চহাল নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করেন। বলেন, সেই বন্ধুর পাশে থাকার জন্য তিনি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবেন।
'আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাকি প্রতারক'
ডিভোর্সের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের মন্তব্য, ট্রোল, এমনকি ‘প্রতারক’ বলেও অপবাদ এসেছিল তাঁর দিকে। চহাল বলেন, 'আমি কখনও কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি। আমার দুই বোন আছে। ছোটবেলা থেকেই আমি মা-বাবার থেকে শিখেছি, কীভাবে নারীদের সম্মান করতে হয়। কেউ যদি আমার নাম জড়িয়ে কোনও গুজব ছড়ায়, তার মানে এই নয় যে লোকজন শুধু ভিউসের জন্য যা খুশি লিখে দেবে। প্রত্যেকের জীবনেই ওঠানামা থাকে। কেউ যদি আজ সেলিব্রিটি হয়, তাও সে মানুষ। ওঁরও কষ্ট হয়, ওঁরও চোখে জল আসে। এটাই বাস্তবতা।'
মনোরোগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা:
*আপনার বা আপনার কোনও পরিচিতের মনে যদি আত্মহত্যার চিন্তা আসে, দয়া করে তা উপেক্ষা করবেন না। এটা একটি গম্ভীর মানসিক অবস্থা। অবিলম্বে ভারতের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন 'জীবনসাথী'-র ১৮০০২৩৩৩৩৩০ নম্বরে অথবা টেলিমানস-এর ১৮০০৯১৪৪১৬ নম্বরে যোগাযোগ করুন। আপনার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে এবং বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।