বড় সিদ্ধান্ত নিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (All India Football Federation)। সমস্ত রাজ্য এবং জেলা ফুটবল লিগে, পুরুষ এবং মহিলা দলে কোনও বিদেশি ফুটবলার (Foreign Footballers) খেলানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটি।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal) বার পুজোতে উপস্থিত হন ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey)। সেখানে এসেই তিনি এই বিষয়টি অনেকটা খোলসা করেন। আর এবার একেবারে সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিল এআইএফএফ (AIFF)। আগামী ১ জুন থেকে ফেডারেশন অনুমোদিত দেশের যেকোনও রাজ্য এবং জেলা ফুটবল লিগে কোনও বিদেশি ফুটবলার খেলানো যাবে না। এই নিয়ম কার্যকর হবে, পুরুষ এবং মহিলা উভয় দলের ক্ষেত্রেই।
অনেকসময় দেখা গেছে যে, বিভিন্ন ক্লাব সাফল্যের জন্য বিভিন্ন পজিশনে বিদেশি ফুটবলার সই করিয়ে থাকে। স্ট্রাইকার, মাঝমাঠ এবং ডিফেন্স সবক্ষেত্রেই বহু ক্লাবে বিদেশিদের রমরমা। কিন্তু এর ফলে, দলে সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন অনেক ভারতীয় ফুটবলার। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, যেকোনও ক্লাবের ম্যানেজমেন্টই বরাবর সাফল্য চায়। আর সেই জন্য, অনেকক্ষেত্রেই ভারতীয় ফুটবলারদের উপেক্ষা করে বিদেশিদের সই করায় ক্লাবগুলি। জেলা এবং রাজ্য লিগের বহু ক্লাবই এই পথে হাঁটে। এমনকি এও দেখা যায় যে, মার্কি বিদেশিদের খেলা দেখার জন্য সমর্থকদের উৎসাহ উদ্দীপনাও পৌঁছে যায় একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। যার ফলে, বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয় অনেক প্রতিভাবান ভারতীয় ফুটবলারকে।
বিষয়টি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ক্লাবের সাফল্য বা দলের সাফল্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেইসঙ্গে জাতীয় দলের স্বার্থে এবং দেশের ফুটবলের উন্নতির জন্য নতুন ফুটবলার তুলে আনাও সমানভাবে জরুরি। অনেক ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যেই তো ট্যালেন্ট রয়েছে। তাঁরাও তো নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ চান। বেশি করে ম্যাচ টাইম না পেলে নতুন ফুটবলার উঠে আসবে কিভাবে? আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই এবার, রাজ্য এবং জেলা লিগে বিদেশি ফুটবলার খেলানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ফেডারেশন। বলা যেতে পারে, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত।
এই প্রসঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-র (Indian Football Association) সঙ্গে। আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত bangla.aajtak.in-কে জানিয়েছেন, ‘আমরা চিঠিটা পেয়েছি। এই বিষয় নিয়ে আমরা একটি বৈঠক ডাকছি। আমরা আলোচনা করে দেখব যে, এটি আমাদের পক্ষে করা সম্ভব কী সম্ভব নয়। কারণ, কলকাতা ফুটবল লিগ একটি বিরাট লিগ। এতগুলো টিম, এতগুলো প্লেয়ার খেলে। প্রতি বছর একটা বিরাট অঙ্কের টাকা আমাদের দরকার হয় এই খেলাগুলো করার জন্য। যাঁদের সঙ্গে আমাদের টেলিকাস্ট এবং স্পনসরশিপ নিয়ে কথা হচ্ছে, তাঁদেরও মতামত আমরা নিচ্ছি।‘
সেইসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘এত বড় একটা লিগ চালাতে গেলে যে টাকার দরকার হয় সেটা স্পনসরশিপ ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা আলোচনা করার পর, সেই বিষয়টি গভর্নিং বডির সামনেও তুলে ধরব। যদি আমাদের সবার মনে হয় যে, বিদেশি ছাড়া লিগটা চালানো যেতে পারে তাহলে আমরা সেটা ভাবতে পারি। আর যদি মনে হয় যে, স্পনসর বা টেলিকাস্ট পার্টনারের তরফে কোনও অসুবিধা হতে পারে এবং আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তখন আমাদের ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
আইএফএ সচিব bangla.aajtak.in-কে আরও জানান, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে খতিয়ে না দেখে এইমুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। এত বড় একটা লিগ, এই ক্লাবগুলোও তো অনেক টাকা খরচা করে দল তৈরি করে। ফলে, সবার মতামত জানতে হবে এবং আমাদের আর্থিক দিকটাও দেখার ব্যাপার আছে। কারণ, আমরা তো লিগ করার জন্য বিরাট কোনও টাকা আলাদা করে ফেডারেশনের থেকে পাইনা। স্বতন্ত্র ভাবেই আমাদের লিগটা চালাতে হয়। ফলে সমস্ত দিকগুলো না দেখে, আমাদের পক্ষে এখনই কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।‘
এর আগে আইএফএ শিল্ড (IFA Shield) এবং কলকাতা লিগে (CFL) স্থানীয় ফুটবলার খেলানোর পক্ষে সওয়াল করে ফেডারেশনকে চিঠি দেয় মোহনবাগান। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে যে, ইস্টবেঙ্গলও এই সিদ্ধান্তের পক্ষেই। সবমিলিয়ে ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে ফুটবলমহলে। আর এই সিদ্ধান্তের জেরেই তড়িঘড়ি আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিল আইএফএ।
প্রতিবেদক: শুভঙ্কর দাস