চিরঘুমে সম্রাট। প্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে (Pele)। অ্যারিন্টোস নেসিমেন্টো এডসন পেলের মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৮২। দুই বছর আগে নভেম্বরের সন্ধ্যায় ফুটবললোকে পাড়ি দিয়েছিলেন রাজপুত্র দিয়াগো মারাদোনা। এবার সম্রাটও ফুটবললোকে। সত্যিই মুকুটটা পড়ে আছে রাজাই শুধু নেই।
আবারও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল ফুটবল সম্রাট পেলেকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল, ঠিকমতো খেতে পারছিলেন না ফুটবল সম্রাট। ছিল হৃদরোগের সমস্যাও। শরীর ফুলে গিয়েছিল। হঠাৎ কররেই শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল পেলেকে। মানসিক দিক থেকেও কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি। সাময়িকভাবে সেই ধাক্কা কাটালেও তা বিপদসীমার বাইরে পাঠাতে পারেননি ফুটবল সম্রাট। শেষ অবধি কেমোথেরাপিতে সাড়া না দেওয়ার ইঙ্গিতেই কোলন ক্যান্সার আক্রান্ত পেলের প্রয়াণ হল।
গত কয়েক বাছরে বারবারই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে পেলেকে। গত এক মাসে অবস্থা অবনতি হওয়ায় সাও পাওলোর অ্যালবার্ট হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে পেলেকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পেলের স্ত্রী মার্সিয়া। বেশ কিছুদিন ধরেই শরীর ভাল না থাকায় কেমোথেরাপি দেওয়া যায়নি তাঁকে। এপ্রিলেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। অবশেষে যাবতীয় লড়াই শেষ। মৃত্যু নামক ডিফেন্ডারের ট্যাকেল এড়াতে পারলেন না ফুটবল সম্রাট।
আরও পড়ুন: 'দিয়েগো হয়তো হাসছে,' হাসপাতাল থেকে আবেগঘন মেসেজ পেলের, স্পেশাল বার্তা এমবাপেকেও
মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে আবির্ভাব। যেন এলেন দেখলেন এবং জয় করলেন। গ্যারিঞ্চা এবং তাঁর জুটি বিশ্বফুটবলকে নাড়িয়ে দেয়। ১৯৫৮ সালেই প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখান। আয়োজক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। ফাইনালে দুটো গোল করেছিলেন পেলে। চারবছর পরে ফের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এবার জয়ের ভরকেন্দ্রে পেলে। ফাইনালে চেকস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে পেলের ব্রাজিল। ফাইনালে খোল না করলেও পেলের ক্রীড়াশৈলি মুগ্ধ করে। তবে এই বিশ্বকাপটি গ্যারিঞ্চার বিশ্বকাপ নামেই পরিচিত। ১৯৬৬ সালে ইংল্যাণ্ডের মাটিতে পেলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকেলে খেলতেই পারেননি পেলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাকে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়।
চারটে বিশ্বকাপ খেলেছেন পেলে। তারমধ্যে ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে তিনবার জুলেরিমে কাপ বা বিশ্বকাপ জিতে ট্রফিটি নিয়ে দেশে চলে যায় তারা। ছয়টি ম্যাচে ২৩টি গোল করেছিল ব্রাজিল।
১৯৫৭ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছিলেন। দেশের জার্সিতে ৭৭ টি ম্যাচে ৯২টি গোল রয়েছে। ক্লাব এবং দেশের জার্সিতে মোট ১০০০ গোল রয়েছে তাঁর।
সাওপাওলো ছেড়ে ১৯৭৭ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কসমস ক্লাবে খেলতে আসেন। সেই বছরই তিনি সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় খেলতে আসেন। মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ ছাড়াও কোপা লিবারদাস,নর্থ আমেরিকান সকার লিগ,ইন্তারন্যাশানাল কাপ জয় ছাড়াও একাধিক ট্রফি জয়েরষনায়ক পেলে। ২০০০ সালে ফিফার বিচারে শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছেন। তবে সম্মান পুরস্কারের পেলের ফুটবলের প্রতি অবদানের মাপ করা যাবে না। তার মৃত্যু ফুটবলের সবচেয়ে বড় শুভেচ্ছা দূতের দৌড় থেমে যাওয়ার গল্প।