রেসলিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী কুস্তিগীররা তাদের পদক গঙ্গায় ভাসানোর ঘোষণা করেছেন। কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া, ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিক সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, "আমরা এই পদকগুলি গঙ্গায় ফেলতে যাচ্ছি, কারণ তিনি গঙ্গা মা। গঙ্গাকে আমরা যতটা পবিত্র মনে করি, ঠিক ততটাই বেশি পরিশ্রম করে আমরা এই পদকগুলো অর্জন করেছি।"
কুস্তিগীরদের বয়ান, আপনারা সবাই দেখেছেন ২৮ মে কী হয়েছিল, পুলিশ আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে? কত নির্মমভাবে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমাদের আন্দোলনের জায়গাটাও পুলিশ ভাংচুর করে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় এবং পরদিন আমাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলায় এফআইআর দায়ের করা হয়। মহিলা কুস্তিগীররা কি তাদের প্রতি যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে অপরাধ করেছে? পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করছে। যেখানে অভিযুক্তরা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে আমাদের গালাগাল করছে। টিভিতে মহিলা কুস্তিগীরদের অস্বস্তিকর করে তোলে এমন ঘটনা স্বীকার করে সেগুলিকে হাসি-মজাতে পরিণত করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়া গেটে আমরণ অনশন
কুস্তিগীররা বলছেন, পদক আমাদের জীবন, আমাদের আত্মা। গঙ্গায় ভেসে গেলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো মানে হবে না। তাই আমরা ইন্ডিয়া গেটে আমরণ অনশনে বসব। ইন্ডিয়া গেট আমাদের শহিদদের স্থান যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা তাদের মতো পবিত্র নই, কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সময় আমাদের আত্মাও ছিল সেই সৈনিকদের মতো। কুস্তিগীরদের আরও বক্তব্য, অপবিত্র ব্যবস্থা কাজ করছে আর আমরা আমাদের কাজ করছি, এখন জনগণকে ভাবতে হবে তারা তাদের এই মেয়েদের পাশে দাঁড়াবেন নাকি সেই সাদা ধোলাই ব্যবস্থার সঙ্গে যারা এই মেয়েদের হয়রানি করছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় হরিদ্বারের গঙ্গায় আমাদের পদক ভাসিয়ে দেব। আমরা এই মহান দেশের কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব।
২৩ এপ্রিল থেকে ধরনা অব্যাহত রয়েছে
ভিনেশ ফোগাট, সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়া সহ সমস্ত কুস্তিগীররা ২৩ এপ্রিল থেকে যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ করছেন। এর আগে ১৮ জানুয়ারি, কুস্তিগীররা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন রেসলাররা। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে দিল্লি পুলিশ সিংয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দায়ের করেছে।
২৮ মে প্রচুর ঝামেলা হয়
কুস্তিগীররা রবিবার যন্তর মন্তর থেকে নতুন সংসদ ভবন পর্যন্ত পদযাত্রার ঘোষণা করেছিল। শুধু তাই নয়, মহিলা মহাপঞ্চায়েতও ডেকেছিলেন কুস্তিগীররা। তবে এদিন নতুন সংসদের উদ্বোধন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মহিলাদের মিছিল করতে দেয়নি দিল্লি পুলিশ। পাশাপাশি যন্তর মন্তরে ভারী নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে ব্যারিকেডিং করা হয়েছিল। রবিবার, নতুন সংসদ ভবন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে যন্তর মন্তর থেকে কুস্তিগীররা তাদের পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই সময়, কুস্তিগীররা নিরাপত্তা কর্ডন ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর বিক্ষোভকারী রেসলার ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে মামলা
এই হইহট্টগোলের পরে, দিল্লি পুলিশ যন্তর মন্তর খালি করে, এখানে এক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছিল। পুলিশ বলছে, এখন আর সেখানে কুস্তিগীরদের ফিরতে দেওয়া হবে না। পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লি থেকে ৭০০ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি, যন্তর মন্তর থেকে তিন কুস্তিগীর সহ ১০৯ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সন্ধ্যায় ভিনেশ ফোগাট, সাক্ষী মালিক সহ সমস্ত প্রতিবাদকারীদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি দিল্লি পুলিশ ভিনেশ, সাক্ষী এবং বজরং পুনিয়া সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।