"আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বলো হরিবোল "...। সনাতন ধর্মের একটি অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণ অনুষ্ঠান এই ন্যাড়া পোড়া।
মূলত দোল উৎসবের আগের দিন অর্থাৎ হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই রীতি।
দশের ডাকে গ্রামবাংলার লুপ্তপ্রায় ন্যাড়া পোড়া ও বসন্ত বরণ উৎসবের আয়োজন করলো রানাঘাট ১০ নম্বর ওয়ার্ড।
শনিবার সন্ধ্যায় রানাঘাট অবকাশ পার্কে আয়োজন করা হয় ন্যাড়া পোড়া। আয়োজিত হল বসন্ত বরণ উৎসবও।
একে অপরকে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে দিয়ে এদিন বসন্ত উৎসবকে আপন করে নেয় আপামর রানাঘাটবাসী।
এদিনের এই উৎসবে রানাঘাট পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, এই নেরা পোড়ার সূচনা করেন।
সেই সঙ্গে আতশবাজি জ্বালিয়েও চলে উৎসব।
এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নেপথ্যে রয়েছে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের এক কাহিনী।
প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী সূত্রে জানা যায়, পুরাকালে মহর্ষি কাশ্যপের পুত্র হিরণ্যকষিপুর ভগবান ব্রহ্মার উপাসনা করেন। সাধারণ মানুষকে দেবতার উপাসনা বন্ধ করে বলপূর্বক তার উপাসনা করতে বাধ্য করেছিল।
বৈষ্ণবীয় তথ্যে অনুযায়ী বসন্ত পূর্ণিমার প্রাক মুহূর্তে ভগবান বিষ্ণু কষী নামক এক অত্যাচারী দৈত্যকে বধ করেছিলেন। অর্থাৎ এখানেও অশুভ শক্তির দমনের ইঙ্গিত পাওয়া যায় । সুতরাং ন্যাড়া পোড়া অনুষ্ঠানটির অর্থ অশুভ শক্তির দমন ।
অপর দিকে বাস্তবের দৃষ্টিকোণ থেকে এই অনুষ্ঠানটির একটি সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে । দোল একটি ঋতু চক্রের উৎসব । অর্থাৎ বসন্ত হল গাছের শুষ্ক পাতা ঝরার একটি বিশেষ সময়। অন্যদিকে বৈশাখের শুরুতে গাছে নতুন পাতা গজায়।
অর্থাৎ এই সময় গাছের শুকনো ডাল , ঝরা পাতা , বাকল প্রভৃতি জ্বালিয়ে দিয়ে পুরাতনের বিদায় দিয়ে জরাজীর্ণ তার অবসান ঘটানো হয় । যাকে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায় " জীর্ণ পুরাতন যাক ভেঙ্গে যাক , যাক ভেঙে যাক , যাক ভেঙে যাক । " এটাই হল ন্যাড়া পোড়ার তাৎপর্য।