আকাশগঙ্গা অর্থাৎ মিল্কিওয়েতে তৈরি হচ্ছে 'ম্যাগি'। ম্যাগির মতোই লম্বা এবং পাতলা। আকাশগঙ্গার সবচেয়ে দীর্ঘতম আকৃতির আবিষ্কার। প্রকৃতপক্ষে, এটি ঘূর্ণায়মান রহস্যময় মেঘ যার মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন 'ম্যাগি-গ্যাস ক্লাউড'। (ছবি: ইএসএ)
গবেষকরা বিবৃতিতে বলেছেন, মিল্কিওয়েতে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে দীর্ঘতম বস্তু এটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩,৯০০ আলোকবর্ষ। প্রস্থ প্রায় ১৫০ আলোকবর্ষ। এটি আমাদের সৌরজগত থেকে প্রায় ৫৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। মেঘ এবং গ্যাসের দীর্ঘতম অংশ যা আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল তার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৮০০ আলোকবর্ষ। (ছবি: গেটি)
আসলে এখানকার মেঘ ও গ্যাস নুডুলস বা ম্যাগির মতো আকৃতি ধারণ করেছে। কলম্বিয়ায় অবস্থিত দীর্ঘতম ম্যাগডালেনা নদীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এর ডেটা নিউ মেক্সিকোতে জানস্কি ভেরি লার্জ অ্যারে রেডিও অবজারভেটরি সেন্টার থেকে মিলেছিল। (ছবি: গেটি)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, 'ম্যাগি ইন মিল্কি ওয়ে' এমন একটি প্রান্তে অবস্থিত, এটি নিয়ে গবেষণা করা কিছুটা সহজ ছিল। এটা সহজে দেখা যায়। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি (এমপিআইএ) এর গবেষক জোনাস সায়েদ বলেছেন, আমরা সত্যিই জানি না কীভাবে আমরা এটি আবিষ্কার করেছি। এই আবিষ্কার বিস্ময়ের চেয়ে কম কিছু নয়। এটি মিল্কিওয়ের সমতল ভূমির প্রায় ১৬০০ আলোকবর্ষের নীচে অবস্থিত। (ছবি: গেটি)
জোনাস জানান, এর ভিতর থেকে আসা বিকিরণের কারণেই এখানে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন রয়েছে বলে জানা যায়। টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এটি স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেও তা স্পষ্ট দেখা যায়। যেহেতু এটি গ্যালাক্সির একটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন জায়গায় রয়েছে, তাই বিজ্ঞানীরাও এর ভিতরে ঘটছে এই কার্যকলাপগুলি সহজেই গণনা করতে সক্ষম। (ছবি: গেটি)
অন্য MPIA বিজ্ঞানী এবং এই আবিষ্কারের সহযোগী জুয়ান সোলার বলেছেন, 'ম্যাগি ইন মিল্কি ওয়ে' নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক গবেষণায় এটি বেরিয়ে এসেছে যে এটি একটি দীর্ঘ আকৃতির, যাতে রহস্যময় মেঘ এবং গ্যাস জমে রয়েছে। (ছবি: এমপিআইএ)
জুয়ান সোলার জানিয়েছেন, 'ম্যাগি ইন মিল্কি ওয়ে' কেবল বড় নয়। বরং এতে থাকা হাইড্রোজেনের পরিমাণ, বাকি গ্যাস মেঘ থেকে আলাদা করে তোলে। হাইড্রোজেন দুইভাবে গঠিত হয়। প্রথম পারমাণবিক হাইড্রোজেন মানে খোলা হাইড্রোজেনের একক পরমাণু আছে। দ্বিতীয় আণবিক হাইড্রোজেন যেখানে হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু অর্থাৎ H2 রয়েছে। অর্থাৎ হাইড্রোজেনের দুটি কণা একসাথে মিশে গেছে। (ছবি: গেটি)
জুয়ান আরও বলেন, গ্যালাক্সিতে উপস্থিত বেশিরভাগ গ্যাস মেঘে আণবিক হাইড্রোজেন রয়েছে তবে গ্যালাক্সির 'ম্যাগি ইন মিল্কি ওয়ে' তে ৯২ শতাংশ পারমাণবিক হাইড্রোজেন রয়েছে। এর এই বৈশিষ্ট্য এটিকে বিজ্ঞানীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছে। কারণ অধিকাংশ নক্ষত্রই তৈরি হয় আণবিক হাইড্রোজেন থেকে, যা অভিকর্ষ বলের কারণে শেষ পর্যন্ত ঘন হয়ে যায়। (ছবি: গেটি)
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, আণবিক হাইড্রোজেন ধারণকারী মেঘের প্রাচীন ইতিহাস একক পরমাণু হাইড্রোজেন হতে পারে। কারণ একক হাইড্রোজেন কণা সময়ের সাথে সাথে আণবিক হাইড্রোজেনে পরিণত হবে। যাইহোক, একক পরমাণু এবং আণবিক হাইড্রোজেন কীভাবে তারা গঠন করে সে সম্পর্কে এখনও রহস্য রয়েছে। (ছবি: গেটি)
গ্যালাক্সির 'ম্যাগি ইন মিল্কি ওয়ে'র ৮০ শতাংশই এমন, যেখানে আণবিক হাইড্রোজেনের ঘনত্ব অনেক বেশি। এ কারণেই গবেষকরা মনে করছেন যে 'ম্যাগি' বর্তমানে এক বা একাধিক আণবিক হাইড্রোজেন গ্যাসের মেঘে পরিণত হওয়ার পথে। আরও গবেষণা করলে জানা যাবে এতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। এই গবেষণাটি সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। (ছবি: গেটি)