Chandrayaan-3: শুক্রবার ১৪ জুলাই চাঁদে রওনা দিচ্ছে চন্দ্রযান-৩(Chandrayaan-3)। ISRO-র শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ। LVM3 ওরফে বাহুবলী রকেটের মাধ্যমে চন্দ্রযান-৩-কে মহাকাশে প্রেরণ করা হবে। চন্দ্রযান-৩-এর মডিউলের মধ্যে তিনটি অংশ রয়েছে। প্রোপালশন মডিউল। আর তার সঙ্গে যুক্ত ল্যান্ডার মডিউল। এই ল্যান্ডার মডিউলের পেটে রয়েছে রোভার বা ছোট একটি গাড়ি। ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর এই রোভার একটি র্যাম্পের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নেমে আসবে। এরপর তাই দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
শ্রীহরিকোটার দুই নম্বর লঞ্চ প্যাড থেকে দুপুর ২.৩৫ নাগাদ চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রযান-৩ এখন পাড়ি দেবে বটে। তবে সরাসরি চাঁদে পৌঁছে যাবে না। প্রথমে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এক উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করবে। এরপর এক সময়ে বড় ম্যানুভারের মাধ্যমে চাঁদের দিকের কক্ষপথে ঢুকে পড়বে। এর ফলে জ্বালানি খরচ কম হবে। সরাসরি যাওয়ার মতো জ্বালানি বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
সমস্ত কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে আগামী ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটিতে অবতরণ। প্রথমে প্রপালশন মডিউল থেকে ল্যান্ডার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তারপর তা চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করবে। এরপর সব ঠিকঠাক থাকলে ল্যান্ডারের ভিতর থেকে রোভার গড়িয়ে নেমে আসবে। চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে সে। সংগ্রহ করবে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি। এতে নেভিগেশন ক্যামেরা এবং একটি সোলার প্যানেল। এর মাধ্যমে ৫০ ওয়াট শক্তি উৎপন্ন হবে। তাতেই এটি কাজ করবে। একটি Rx/Tx অ্যান্টেনার মাধ্যমে এটি ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছের উচ্চভূমিতে নামবে ল্যান্ডার এবং রোভার। প্রসঙ্গত, এই ল্যান্ডার-রোভার চন্দ্রযান ২-এর বিক্রম রোভারের মতোই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই প্রপালশন মডিউল পুরো সময়টা চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। এর মাধ্যমেই ল্যান্ডার রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে ISRO। এটি রিলে উপগ্রহ হিসাবে কাজ করবে।
শুধু তাই নয়। এই প্রপালশন মডিউল সমস্যা করলে চন্দ্রযান ২-এর যে উপগ্রহ রয়েছে, সেটিকে ব্যাকআপ রিলে হিসাবে ব্যবহার করা হবে। চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার এবং রোভারটি এক চন্দ্র দিবস (পৃথিবীতে প্রায় ১৪ পৃথিবী দিন) কাজ করবে।
ল্যান্ডারটি চাঁদের ভূপৃষ্ঠের তাপীয় বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করবে। সারফেস থার্মোফিজিকাল এক্সপেরিমেন্ট (ChaSTE)-এর মাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। অবতরণ স্থানের চারপাশের ভূমিকম্প প্রবণতা পরিমাপের জন্য চাঁদের সিসমিক অ্যাক্টিভিটি (ILSA) মাপা হবে। সেই সঙ্গে চাঁদের গ্যাস এবং প্লাজমাসহ বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণের জন্য হাইপারসেনসিটিভ আয়নোস্ফিয়ারের রেডিয়ো অ্যানাটমি (BHARAM) যন্ত্র থাকবে।
চাঁদের পরিসর পর্যবেক্ষণের জন্য একটি প্যাসিভ লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে থাকছে মডিউলে। এটি NASA-র থেকে পেয়েছে ISRO। প্রজ্ঞান রোভার চন্দ্রপৃষ্ঠের অধ্যয়নের জন্য দু'টি যন্ত্র বহন করবে। একটি আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (APXS) এবং একটি লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (LIBS)। প্রপালশন মডিউল/অরবিটারেরও কাজ রয়েছে। এমনিতে তার মাধ্যমে চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগ রাখা হবে। এর পাশাপাশি চাঁদের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর পর্যবেক্ষণের জন্যও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে।
চন্দ্রযান-২ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে কাজে লাগানো হয়েছে
এর আগে চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডারের ল্যান্ডিং ব্যর্থ হয়েছিল। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। সেইবারের ব্যর্থতা থেকে যদিও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়েছে ইসরো।
ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানের মূল লক্ষ্যগুলি হল:
খরচ
চন্দ্রযান-৩ অভিযানে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা খরচ হবে। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, এত খরচ করা কতটা যুক্তিযত। সেক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ইসরো একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশ, সংস্থার থেকে নিয়মিত উত্ক্ষেপন, উপগ্রহ স্থাপন, পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর বরাত পায় ইসরো। এই ধরনের বড় অভিযানের মাধ্যমে ইসরো আসলে নিজের ক্ষমতার প্রমাণ দেবে বিশ্বের কাছে। এতে আগামিদিনে মহাকাশ অভিযানের ব্যবসায় তার পায়ের তলার জমি আরও শক্ত হবে। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন চাঁদের সফলভাবে সফট ল্যান্ডিং করতে পেরেছে। তাদের তুলনায় অনেক কম বাজেটেই যদি ইসরো সফল হয়, তা বিশ্বের কাছে একটি নজির সৃষ্টি করবে।
উত্ক্ষেপণ লাইভ দেখতে পারবেন
ইসরোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলি থেকে চন্দ্রযানের উত্ক্ষেপণ লাইভ দেখতে পারবেন।